২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

একটি পা নেই, তারপরেও পটুয়াখালীতে রিকশা চালিয়ে সংসার চালান রোজিনা!

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে রিকশা চালিয়ে সংসার চালায় প্রতিবন্ধী রোজিনা। এক সময় ঢাকায় রিকশা চালাতেন। এখন তিনি রিকশা চালান মির্জাগঞ্জে। রিকশা চালিয়ে দারিদ্র্যতার সঙ্গে সংগ্রাম করে চলছেন প্রতিবন্ধী রোজিনা বেগম (৩২)। সারাদিন উপজেলার এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাত্রী পরিবহন করেন। তিনি প্রতিবন্ধী দেখে অনেকে তার রিকশায় উঠতে চায় না। তবু থেমে থেকে নেই তার চলার পথ। জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক সংগ্রামী নারী তিনি।

আগৈলঝরা উপজেলার বাগদা গ্রামে তার জন্ম। শিশু বয়সে টাইফয়েড জ্বরে তার বাম পা বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। পরে কিশোরী বয়সে বরিশালের মুলদী উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের সুমনের সাথে বিয়ে হয় তার। পরে জীবিকার তাগিদে স্বামীর সাথে ছুটে যান ঢাকায়। একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে সন্তানের মা রোজিনা। গত ছয়বছর পূর্বে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামী মারা যায়। স্বামী মারা যাওয়ায় দুই সন্তানকে নিয়ে চলা তার জন্য খুবই কঠিন হয়ে পরে।

এদিকে নিজে একজন অসহায় প্রতিবন্ধী একজন নারী। অন্যদিকে ছোট ছোট দুইটি বাচ্চা রিদয় (১০), মেয়ে রুতু (১৩)। কীভাবে চলবে তাদের জীবন? কী করে জীবিকা নির্বাহ করবেন! জীবন যুদ্ধে তিনি ভুল সিদ্ধান্ত নেননি। ভিক্ষিা ভিত্তি পেশাকে ঘৃণা করে হার মানেননি দারিদ্রতার কাছে। তখন থেকে ঢাকায় ভাড়ায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা উপার্জন শুরু করেন। এক বছর আগে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে এক আত্মীয়র বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নেন। এক পর্যায়ে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে একটি পুরাতন অটোরিকশা ক্রয় করেন। তিনি এক বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সন্তানদের নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

ছেলে মেয়েদের নিয়ে সুবিধখালী কলেজ রোডে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। টানাটানির সংসারে মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারছেন না। ছেলেটিকে একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করান তিনি।

এ বিষয় রোজিনা বেগম বলেন, একটি পা পঙ্গু হয়েছে তাতে কী, দুটি হাত এবং একটি পা আল্লাহতায়ালা সবল রেখেছেন। সারাদিন পরিশ্রম করে রিকশা চালিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে সব কাজ করতে হয়। তারপরেও তিনি তার সন্তানদের নিয়ে ভালো আছেন বলে জানান তিনি।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান মো. আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, সমাজে অনেক সুস্থ মহিলাকে দেখছি কাজ না করে ভিক্ষা করে বেড়ায়। সে সমস্ত নারীদের জন্য রোজিনা একটি দৃষ্টান্ত। নতুন সমাজসেবা অফিসার যোগদান করলে তাকে সহযোগিতার জন্য জোর সুপারিশ করা হবে। আমার উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে যত রকমের সহযোগিতা লাগে আমি করব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. তানিয়া ফেরদৌস বলেন, তার সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ