২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
গৌরনদীতে সিএইচসিপি’র বদলী আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন ভোলায় ডাকঘরে পোস্ট মাস্টারের আইসক্রিম ডিলারের ব্যবসা উজিরপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ৫ তীব্র তাপদাহ থেকে মুক্তি পেতে আমতলীতে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় পিরোজপুরে বাসের ধাক্কায় ফেরিতে থাকা ৪ মোটরসাইকেল নদীতে বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ : ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ৮৩ জন পটুয়াখালীতে তীব্র দাবদাহ ও খরা থেকে মুক্তি পেতে ইসতিসকার নামাজ আদায় বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে বাস সহায়তা দেবে ববি কর্তৃপক্ষ বরিশালে ভোট কেন্দ্রে থাকছে না সিসি ক্যামেরা দাপদাহে স্বাস্থ্য সুরক্ষার্থে শেবাচিমে জনসচেতনতা মূলক প্রচারণা শুরু

কবে একটু সুখ পাবেন রাজাপুরের সেতারা-মালেক দম্পতি

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

অনলাইন ডেস্ক :: স্বামীর সংসারে এসে কখনোই সুখের মুখ দেখেননি বৃদ্ধা সেতারা বেগম (৬২)। যুগ যুগ ধরে বাঁচার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। রোদ-বৃষ্টি-তীব্র শীত দমাতে পারেনি তার পথচলা। দু’মুঠো খাবারের জন্য ১৯৯০ সালের দিকে হাতে নিয়েছিলেন ভিক্ষার ঝুলি। সেই ঝুলি হাতে কখনো শাকসবজির দোকান আবার কখনো চায়ের দোকান। কিন্তু কিছুতেই যেন দুঃখ তার পিছু ছাড়ছে না। যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন তার সংসারের হাহাকার তীব্র হচ্ছে। ঘরে খাবার নেই। মাথা গোঁজার ঠাঁইও নেই।

স্বামী আব্দুল মালেকের (৮০) চোখে ছানি পড়েছে। চিকিৎসা করাতে পারছেন না। অপরদিকে ঋণের বোঝা মাথায়। প্রতি সপ্তাহে গুনতে হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি।

ঝালকাঠির রাজাপুরের শুক্তগড় ইউনিয়নের কেওতা গ্রামের বাসিন্দা সেতারা বেগম। স্বামী আব্দুল মালেক আনুমানিক ৪০ বছর আগে গাছ থেকে পড়ে অসুস্থ হন। শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ায় দিনমজুরি বা অন্য কোনো কাজ করতে পারেন না। অর্থাভাবে চিকিৎসা না করাতে পারায় এখনো সুস্থ হতে পারেননি। ৪-৫ মাস আগে স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন।

মালেকের বসতভিটায় ৩৩ শতাংশ জমি থাকলেও অর্থাভাবে সেখানে ঘর তৈরি করতে পারেননি। বর্তমানে এই দম্পতি থাকেন উপজেলার বাগরী এলাকার ব্র্যাক অফিসের দক্ষিণ পাশের রুহুল আমিনের পরিত্যক্ত জমিতে। সেখানে পলিথিনের চালার ঝুপড়ি ঘরে কোনোমতে থাকছেন। বিনা ভাড়ায় ছয় বছর ধরে ওই ঘরেই বসবাস করে আসছেন তারা।

সেতারা বেগম জানান, সংসারে অর্থাভাব দেখা দিলে প্রথমে তিনি ২-৩ বছর ভিক্ষা করেন। তবে অষ্টম শ্রেণি পাস সেতারা ভিক্ষাবৃত্তি ভালো না বুঝতে পেরে এই পেশা ছেড়ে দিয়ে দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে খুলনায় চলে যান। সেখানে অসুস্থ স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় আট বছর শাকসবজির ব্যবসা করেন। তবে ব্যবসার আয়ে সংসার ভালো চলছিল না। তাই সেখান থেকে বরিশালের এসে রূপাতলি এলাকায় চলে এসে একটি চায়ের দোকান দেন। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসতেন।

সংসার চালাতে কষ্ট হলে বরিশাল থেকে ফিরে এসে বাড়িতে ওঠেন। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নেন সেতারা। তবে সঠিক সময়ে কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় ঋণের পাল্লা ভারী হতে থাকে। বৃদ্ধি পায় কিস্তি পরিশোধের পরিমাণও। ২০০৭ সালের সিডরে তছনছ হয়ে যায় তাদের থাকার ঘরটি। এরপরে ভাড়া থাকেন রাজাপুরের বিভিন্ন স্থানে।

ইতোমধ্যে পর পর বিয়ে করেন তাদের দুই ছেলে হুমায়ুন কবির ও সুমন। তারা বর্তমানে আলাদা সংসার নিয়ে থাকছেন। দুই ভাই রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাবা-মাকে তারা দেখাশোনা করেন না। ছোট ছেলে সুমন অসুস্থ বাবা মালেককে তার কাছে নিতে চাইলে মালেক তার স্ত্রী সেতারাকে ছেড়ে শেষ বয়সে কোথাও যেতে চাচ্ছেন না। তিনি চোখে না দেখলেও বাজারে শাকসবজি বিক্রির সময় সেতারার পাশে দোকানে চুপ করে বসে থাকেন।

প্রতিদিন বিকেলে গ্রামে গ্রামে হেঁটে হেঁটে অল্পদামে হরেক রকম শাকসবজি কিনে এনে সপ্তাহের সাত দিনই রাজাপুরের হাট ও বাজারে বিক্রি করেন সেতারা বেগম। সেই আয়ের টাকা দিয়ে নিজেদের খাবার, স্বামীর প্রতি মাসে ২-৩ হাজার টাকার ওষুধ ও গ্রামীণ ব্যাংকের সপ্তাহে ১২শ টাকা কিস্তি পরিশোধ করেন। গ্রামীণ ব্যাংকে আরও দুই বছর কিস্তি পরিশোধ করতে হবে।

নিজের অসহায়ত্ব প্রসঙ্গে অসুস্থ আব্দুল মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনেক দৌড়ঝাঁপ করে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করিয়েছি। তীব্র শীতে খুব কষ্টে ঝুপড়িঘরে থেকেছি, কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি। শীতবস্ত্রও পাইনি। শুনছি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গৃহহীনদের ঘর দেয়া হচ্ছে। আমার সেতারাও স্থানীয় মেম্বার মনিরের কাছে ঘর পাওয়ার জন্য গিয়েছিল। তিনি আমাদের কোনো কাগজপত্র নেননি। পরে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পাওয়ার জন্য শুক্তাগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুল হক মৃধার কাছে কাগজপত্র দিয়েছি। আমাদের একটি ঘরের খুবই প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার চোখে ছানি পড়েছে। আমি দু’চোখেই ঝাপসা দেখছি। ক্লিনিকের ডাক্তার বলেছেন, অপারেশন করাতে পারলে চোখে দেখতে পাব। অপারেশন করাতে প্রায় ৬-৭ হাজার টাকা লাগবে। অর্থাভাবে অপারেশন করাতে পারছি না।’

স্থানীয় মনির মেম্বার বলেন, ‘আমার কাছে মালেক বা সেতারা কখনোই আসেননি। কে কোথায় থাকে কীভাবে জানব? আমার কাছে আসলে আমি তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করব।’

চেয়ারম্যান মুজিবুল হক বলেন, ‘সেতারা-মালেক দম্পতি খুবই অসহায় অবস্থায় আছে। তাদের একটি ঘরের খুব প্রয়োজন। ঘর পাওয়ার জন্য পিআইও অফিসে তাদেরকে একটি দরখাস্ত করতে বলা হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে যাদের জমিও নেই ঘরও নেই।,তাদেরকে জমিসহ ঘর দেয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায় যাদের জমি আছে ঘর নেই তাদের ঘর দেয়া হবে। মালেকের তো জমি আছে, তাই দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু হলে যাচাই-বাছাই করে ঘর পাওয়ার উপযুক্ত হলে তাকে ঘর দেয়া হবে।’

ধনাঢ্য কোনো ব্যক্তি আর্থিক সাহায্য করলে আব্দুল মালেক ফিরে পেতে পারেন তার দৃষ্টিশক্তি। মালেক-সেতারা দম্পতিকে কেউ সাহায্য করতে চাইলে ০১৭৮০২৩৩৯৭১ (বিকাশ) নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।

সর্বশেষ