১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

করোনায় ডিউটিঃ আতঙ্কিত অন্তঃসত্ত্বা ও অসুস্থ নার্সরা !

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ঝুমুর আক্তার (ছদ্মনাম)। তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স। চলমান করোনা মহামারিতেও করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। শুধু ঝুমু আক্তারই নয় এ হাসপাতালের বেশ কয়েকজন অন্তঃসত্ত্বা নার্সও করোনা রোগীদের সেবায় ডিউটি করছেন।

এছাড়া রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল ও কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালের অনেক গর্ভবতী নার্স করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে মানসিক আতঙ্কে ভুগছেন তারা।
অপরদিকে অনেক নার্সের হাইপো থাইরয়েড, এ্যাজমা সহ নানা শারিরীক সমস্যা রয়েছে। প্রথমদিকে তাদেরকে ডিউটির আওতার বাইরে রাখলেও সম্প্রতি ডিউটি করার জন্য পিড়াপিড়ি করা হচ্ছে। অনেকের আবার ছোট বাচ্চা থাকায় তারা আছেন মহা বিপাকে।

সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি এ্যান্ড রাইটস’র দেওয়া তথ্য মতে, সেবা দিতে গিয়ে ২ জন অন্তঃসত্ত্বা নার্সসহ সারা দেশে ১১০ জন নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। গত ৪ দিনেই আক্রান্ত হয়েছে ৬৫ জন নার্স। গত ৪ দিনে আক্রান্তের হার প্রতি দেড় ঘন্টায় একজন।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র এক নার্স নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আমি অন্তঃসত্ত্বা। এ অবস্থা নিয়েও গত রোস্টারে ( ১৫ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল) ডিউটি করেছি। আমরা মতো অন্তঃসত্ত্বা বেশ কয়েকজন নার্স এমন ঝুঁকি নিয়ে ডিউটি করছেন। যদি আমার সন্তানের কিছু হয়ে যায়, খুবই আতঙ্কে আছি!

একই হাসপাতালের অন্তঃসত্ত্বা আরেকজন সিনিয়র স্টাফ নার্স মেডিভয়েসকে বলেন, গত রোস্টারে করোনা টিমে অন্তঃসত্ত্বা বেশ কয়েকজন নার্স ডিউডি করেছেন। আজ ২২ এপ্রিলের রোস্টারেও অন্তঃসত্ত্বা নার্সদের নাম থাকলেও কয়েকজন ছুটি নিয়ে বাসায় চলে গেছে। কিন্তু পরবর্তী আবার ডিউটি করতে হয়ে কিনা তা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি।

বিশেষজ্ঞ মার্কিন চিকিৎসক পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ ক্যারোলিন কোয়েন জানিয়েছেন, প্রসূতির শরীরে যদি করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে গর্ভস্থ শিশুরও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। ফলে নবজাতক করোনা আক্রান্ত হতে পারে। কোয়েনের মতে, ভাইরাস গর্ভবতী মায়ের জরায়ুর প্লাসেন্টা পেরিয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে গর্ভস্থ শিশুর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এদিকে নার্সদের অন্যান্য প্রতিনিধিত্বশীল বেশ কয়েকটি সংগঠন করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত নার্সদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তাদের অভিযোগ, দেশের এই সংকটপূর্ণ মুহূর্তে হাসপাতালগুলোতে রয়েছে অব্যবস্থাপনা। এর সাথে নার্সদের সুরক্ষিত পরিবেশে থাকা-খাওয়ার সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশনের সভাপতি ইসমত আরা পারভীন বলেন, আমরা করোনার শুরু থেকেই কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি, অসুস্থ, বয়স্ক ও অন্তঃসত্ত্বা নার্সদের করোনা ইউনিটে দায়িত্ব না দিতে। কিন্তু তারপরেও অনেক অসুস্থ ও অন্তঃসত্ত্বা নার্সরা করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করছে। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয়, বেসরকারি হাসপাতালের নার্সরাও আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত ১১০ জন নার্সের করোনা আক্রান্তের খবর পেয়েছি। এদের বেশির ভাগই আক্রান্ত হয়েছে সাধারণ ওয়ার্ড থেকে। তাই নার্সদের সুরক্ষা নিশ্চিতে সব হাসপাতালে সুরক্ষা সরঞ্জাম পৌঁছে দিতে হবে। আর যদি কোন হাসপাতালে নার্স সংকট থাকে, তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সাথে কথা বললে আশা করি এ সমস্যার সমাধান হবে।

সর্বশেষ