২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কলাপাড়ায় জেলেদের চাল নিয়ে ইউপি মেম্বারদের চালবাজি

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

পটুয়াখালী প্রতিনিধি ::: প্রত্যেক জেলেদের জন্য ৮০ কেজি করে চাল বরাদ্দ থাকলেও সেখানে দেয়া হচ্ছে তার অর্ধেক আবার কাউকে দেয়া হচ্ছে অর্ধেকেরও কম। জেনো ‘জোর যার মুল্লুক তার’। সম্প্রতি এমন দৃশ্য মিলেছে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নে।

মঙ্গলবার ইউনিয়ন পরিষদে দুপুর ১২টায় ১৪৫০ জন কার্ডধারী জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করা হয়।

ইলিশের জাটকা আহরণ বন্ধ ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল দুই মাস সমুদ্র ও নদীর বিভিন্ন স্থানে জাল ফেলে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সরকারি এই নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক জেলেদের প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে দুই মাসে মোট ৮০ কেজি চাল প্রদান করে মৎস অধিদপ্তর। এ ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা মোট ১৭৪৮ জন। এর মধ্যে ১৪৫০ জনের খাদ্যসহায়তার ১১৬ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে জেলেদের জন্য বরাদ্দ চাল দেয়া নিয়ে নানান অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে। জেলেদের সেই চাল নিয়েও নয় ছয় করছে ইউপি সদস্যরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, গত মঙ্গলবার ধুলাসার ইউনিয়নে জেলেদের জন্য ৮০ কেজি করে চাল বরাদ্দ থাকলেও সেখানে দেয়া হচ্ছে তার অর্ধেক আবার কাউকে দেয়া হচ্ছে অর্ধেকেরও কম।

জেলে হেলাল বিশ্বাস জানান, সে এক বস্তা চাল পেয়েছে ওজন ৫০ কেজির মতো। পাওয়ার কথা ৮০ কেজি থাকলেও কিসের জন্য সেটি পায়নি বা পরে পাবে কিনা সেটা তিনি জানেন না।

জেলে জামাল ভূঁইয়া জানান, তাদের ছয়জনকে ৫০ কেজির ৫ বস্তা চাল দিয়ে ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর উদ্দিন দালাল ভাগ করে নিতে বলেছে।

এ বিষয়ে ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর উদ্দিন দালাল বলেন, আমার ওয়ার্ডে কোন চাল কম দেয়া হয়নি। তিনি এ বিষয়ে আর কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।

এদিকে ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম ও ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাদুর ভূইয়ার কাছে জেলেদের চাল বিতরণ নিয়ে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা ক্যামেরার সামনে কোন কথা বলতে রাজি হননি। এসময় তারা সংবাদকর্মীদের বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালায়।

চাল বিতরণের বিষয় ধুলাসার ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, আমি অসুস্থ থাকা সত্বেও সকালে পরিষদে গিয়ে ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে চাল বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। এরপর তারা কি করেছে আমি সে বিষয়ে কিছু জানি না। যদি চাল নিয়ে কোন অনিয়ম হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

চাল বিতরণের সময় মৎস অফিসের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে কলাপাড়া উপজেলা মৎস কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, চাল বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসার ও আমাদের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকে সাধারণত। তবে আমার সংসদ সদস্য মহোদয়ের সাথে একটা প্রোগ্রাম থাকায় প্রথম অর্ধেকে আমাদের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারেনি। কিন্তু পরের অর্ধেকে আমাদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল।

তিনি আরো বলেন, চাল বণ্টন নিয়ে ট্যাগ অফিসারের সাথে আমার কথা হয়েছে তিনি আমাকে বলেছেন- সব জেলেকে ৮০ কেজি করেই চাল দেয়া হয়েছে। কাউকে চাল কম দেয়া হয়নি। তবে একজনকেও যদি চাল কম দেয়া হয় এরকম কেউ আমাদের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেব।

সরকারি প্রতিনিধির উপস্থিতেও জেলেদের নামে ভিজিএফের চাল নিয়ে কীভাবে এতবড় অনিয়ম হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ধুলাসার ইউপিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার কলাপাড়া উপজেলা এলজিইডির ইউডিবিও আব্দুল আউয়াল আকন জানান, চাল বিতরণ কোন অনিয়ম হয়নি। তবে আমি সব গুছিয়ে আপনাকে পরে বক্তব্য দেব।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কলাপাড়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন নিয়েই সমস্যা। চাল বিতরণ নিয়ে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি।

সর্বশেষ