নিজস্ব প্রতিবেদক :: ঝালকাঠির জেলার কাঠালিয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয় দেখিয়ে ইটভাটা থেকে দুই লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমিত সাহা ও তার অফিস সহকারী নাজির মো. মাইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় কারণ দর্শানোর পর গতকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাদের বর্তমান কর্মস্থল ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার রিফাত আরা মৌরী বুধবার অভিযুক্ত দুজনকেই বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেন। বৃহস্পতিবার আদেশটি কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদার।
অমিত সাহাকে বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলায় ও মাঈনুল ইসলামকে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সাধারণ শাখায় বদলি করা হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার বড় কাঠালিয়া গ্রামে মেসার্স তোহা ব্রিকসের ইটভাটায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমিত সাহা, তার অফিস সহকারী নাজির মাঈনুলসহ অন্যান্য কর্মচারী, পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্যরা গত সোমবার বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে অভিযান চালায়। এ সময় একাধিক অভিযোগে ইটভাটার অংশীদার মো. শাহিন আকনের কাছে দশ লাখ টাকা দাবি করেন তারা।
অভিযোগে বলা হয়, টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ভাটার মূল মালিক মো. এনামুল হকের শ্বশুর হাবিবুর রহমান ও কর্মচারী মফিজুলকে আটক করে কাঠালিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এ সময় আকন প্রথমে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা পরে আরও দেড় লাখ টাকা নিয়ে এসে মোট চার লাখ টাকা সুমিত সাহাকে পৌঁছে দেন। টাকা পাওয়ার পরে আটক দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। টাকার রসিদ চাওয়া হলে সুমিত সাহার স্বাক্ষরিত মামলার (নম্বর ০৫/২০২১ইং) আদেশে (ক্রমিক নং ৪৮০৮২৩) এর দুই লাখ টাকার একটি রসিদ শাহিনকে ধরিয়ে দেওয়া হয়।
রসিদের অসংগতির বিষয়টি ঝালকাঠির জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন মহলে জানাজানি হয়। পরে সুমিত সাহা তার অফিস সহকারীর মাধ্যমে ইটভাটার মালিককে ওই দুই লাখ টাকা ফেরত দিতে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এর মধ্যে আত্মসাতের টাকা ফেরত দেওয়া চেষ্টার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
ইটভাটার অন্যতম মালিক শাহিন আকন বলেন, “ভূমি অফিসের সহকারী মাঈনুল এসিল্যান্ডের সামনেই কাঠ পোড়ানোসহ নানা অভিযোগ তুলে আমার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। এত টাকা দিতে অস্বীকার করলে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন দিয়ে ভাটার চুলায় পানি দিয়ে নিভিয়ে ফেলা হয়। এবং ফিল্ডের মূল মালিকের শ্বশুর হাবিবুর রহমান ও ফিল্ড স্টাফ মফিজুলকে আটক করে এসিল্যান্ডের গাড়িতে তুলে কাঁঠালিয়া সদরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আমি চার লাখ টাকা নিয়ে মাঈনুলকে বুঝিয়ে দিলে এসিল্যান্ড অফিসে আদালত বসিয়ে ০৫/২০২১ নম্বর মামলা দিয়ে তার স্বাক্ষরিত একটি রসিদ দেন আমাকে। আর আটক হাবিব ও মফিজুলকে ছেড়ে দেওয়া হয়।”
শাহিন আরও বলেন, ফিল্ডে ফিরে দেখি যে রসিদ আমাকে দেওয়া হয়েছে তাতে (ক্রমিক নং ৪৮০৮২৩) দুই লাখ টাকা লেখা রয়েছে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে এসিল্যান্ড মাইনুলের মাধ্যমে আমাকে টাকা ফেরত দিতে চেয়েছে, আমি নিইনি।
এ দিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমিত সাহা বলেন, “ইটভাটার মালিকেরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেই তারা মিথ্যা অভিযোগ দেয়। আমি দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছি। সেই টাকাই জমা দেওয়া হয়েছে, অন্য কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।”
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক জোহর আলী বলেন, এসিল্যান্ডকে কারণ দর্শানো হয়েছিল। তিনি তার জবাবও দিয়েছেন। তাকে বদলি করা হয়েছে। কারণ দর্শানো নোটিশ পর্যালোচনা করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২২ বছর ধরে কাঠালিয়ায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদটি শূন্য থাকার পর গত গত বছরের ৮ অক্টোবর সুমিত সাহা কাঠালিয়া উপজেলায় যোগদান করেন।