২৪শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কুরবানীর পশুতে যে পাঁচটি গুণ থাকতে হবে

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

মুফতী মাহমুদ হাসান:

মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কুরবানী দেয়ার ক্ষেত্রে শরিয়তের দাবি হলো নিখুঁত ও নির্দিষ্ট গুণ সম্পন্ন পশু হওয়া চাই। তাই আমাদের অবশ্যই জানা থাকতে হবে পশু কোন ধরনের গুণ সম্পন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয় । আর এই গুণসম্পন্ন পশুর মধ্যে কোন ধরনের পশু উত্তম।

তাই আসুন জেনে নেই কুরবানীর পশুর মধ্যে কোন ধরনের গুণাবলী পাওয়া যেতে হবে।

কুরবানীর পশুটি পাঁচটি গুণসম্পন্ন হতে হবে

প্রথম গুন: কুরবানীর পশুটি গৃহপালিত পোষা প্রাণী হাওয়া

১. মাসআলাঃ
ছয় প্রকার পশু দ্বারা কুরবানী করা যায়ঃ
☑️১৷উট৷☑️২৷ গরু৷☑️৩৷ মহিষ৷☑️৪৷ ছাগল৷☑️৫৷ ভেড়া৷☑️৬৷ দুম্বা৷
এছাড়া অন্য কোন পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবেনা৷ (ফতোয়ায়ে কাযীখান ৩/৩৪৮ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫ পৃষ্ঠা৷ আল হিদায়া ৪/১৫০ পৃষ্ঠা৷)

২.মাসআলা

নর ও মাদা পশুর কুরবানীসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়।( -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫)

৩.মাসআলা:

বন্য পশুদিয়ে কুরবানী করার হুমুক: বন্য পশুদিয়ে কুরবানী হয় না। এ কারণে নীলগাই, বনগরু এবং গয়াল নামে আমাদের দেশে যে পশু পাওয়া যায় তার গোশত হালাল হলেও তা দিয়ে কুরবানী করা বৈধ নয়। (বাদায়েউস সানায়ে’ ৫/৬৯)

৪.মাসআলা

হরিণ দ্বারা কুরবানি করা:

হরিণের গোশত হালাল। তবে হরিণ বন্য হওয়ার কারণে তা দিয়ে কুরবানী জায়েয হবে না। এমনকি তা গৃহপালিত হয়ে গেলেও কুরবানী বৈধ নয়। (ফতোয়া আলমগিরী:৫/২৯৭)

দ্বিতীয় গুণ: কুরবানীর পশু অবশ্যই শরীয়ত অনুসারে একটি নির্দিষ্ট বয়সের হতে হবে, ।

৫.মাসআলাঃ

কুরবানীর পশুর বয়স
ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স চন্দ্রমাস হিসেবে কমপক্ষে পূর্ন এক বছর হতে হবে। তবে ছয় মাসের ভেড়া ও দুম্বা যদি মোটা-তাজায় দেখতে এক বছরের মতই দেখা যায়, তাহলে কুরবানী সহীহ হবে। তবে ছাগলের বয়স এক বছরের কম হলে কুরবানী সহীহ হবেনা৷
(সুনানে আবু দাউদ ২৭৯৯ হাদীস৷ সুনানে ইবনে মাজাহ ৩১৩৯ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে কাযীখান ৩/৩৪৮ পৃষ্ঠা৷)

৬.মাসআলাঃ
গরু ও মহিষের বয়স চন্দ্রমাস হিসাবে কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। এর কম হলে কুরবানী সহীহ হবেনা।(সুনানে নাসায়ী ৪৩৭৮ হাদীস৷ বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫ পৃষ্ঠা৷)

৭.মাসআলাঃ
উটের বয়স চন্দ্রমাস হিসাবে কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। এর কম হলে কুরবানী সহীহ হবেনা৷ (ইলাউস সুনান ৭/২৪৫ পৃষ্ঠা৷
ফতোয়ায়ে কাযীখান ৩/৩৪৮ পৃষ্ঠা৷)

৮.মাসআলাঃ
বিক্রেতা যদি পশুর বয়স পূর্ন হয়েছে বলে সাক্ষ্য দেয় এবং পশুর শারীরীক গঠন দেখেও যদি তেমনই মনে হয়, তবে বিক্রেতার কথার উপর আস্থা রেখে সে পশু ক্রয় করা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা সহীহ হবে। (ফতোয়ায়ে শামী ৫/২২৫ পৃষ্ঠা৷)

তৃতীয় গুন: কোরবানির পশুটি সকল প্রকার ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়া।

৯.মাসআলা: বিশেষ করে, অন্ধ, কানা ও ল্যাংড়া জন্তু বা এমন রুগ্ন ও দুর্বল জন্তু কুরবানীর স্থান পর্যন্ত যার হেঁটে যাওয়ার শক্তি নেই, অনুরূপভাবে এক তৃতীয়াংশের চেয়ে বেশী লেজ ও কান কাটা কিংবা লেজ ও কান বিহীন পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। এবং অধিকাংশ দাঁত পড়ে যাওয়া পশু দ্বারাও কুরবানী সহীহ হবে না। (শামী:৬/৩২৩, আল বাহরুর রায়িক:৮/৩২৪ .কাজী খান কাজীখান ৩/৩৫২.বাদায়েউস সানায়ে ৫/৭৫)

চতুর্থ গুণ: কুরবানীর পশুর মালিক হওয়া,নিয়ম অনুযায়ী মালিকের থেকে অনুমোদন পাওয়া।অন্যের পশু দ্বারা কুরবানী আদায় হবে না।

পঞ্চম গুণ: কুরবানির পশুটি অন্য কারও সাথে মালিকানায় সম্পৃক্ত না হওয়া যেমন বন্ধকি পশু।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ত্রুটিমুক্ত নিখুঁত পশু আল্লাহর জন্য কোরবানি করার তাওফিক দিক। আমীন।


মুফতী মাহমুদ হাসান।

শিক্ষক,লেখক,গবেষক

সর্বশেষ