১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কুয়াকাটায় গরীবের ছেলে বিসিএস উত্তীর্ন

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

হোসাইন আমির,কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি॥ মা আম্বিয়া বেগম কুয়াকাটার আলীপুর গ্রামে বাসা। একমাত্র পুত্র সন্তান নুরআলমের জন্মের ২ বছর পর পরই তার সংসার ভাঙ্গে। চাকরির টাকায় ছেলেকে লেখাপাড়া শিখাবেন এমন অদম্য সাহস শক্তি নিয়ে জীবন যুদ্ধে নামেন আম্বিয়া খাতুন। ২০০০ সালে বিনা বেতনে কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজের আয়া (এমএলএস) চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদে যোগদান করেন। ছেলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশুনা করার সময় ১ হাজার ৪০০ টাকা বেতন ভাতা পেতে শুরু করে। পুরো টাকাই ব্যয় করতেন ছেলের পড়াশুনাও ভরণ পোষনে। নুরআলমের প্রবল ইচ্ছা আর মনোবল মা আম্বিয়াকে আরও উদ্যামী করে তোলে। সন্তান বড় হবার সাথে সাথে ব্যয় বাড়তে থাকলে কলেজে চাকুরি শেষে বিকেলে ও রাত জেগে জাল বুননের কাজ করতো। এমনই হত দরিদ্র রত্মাগর্ভা মায়ের সন্তান নুরআলম ২০০৬ সালে মহিপুর কোঅপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৩৮ পায়। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয় মায়ের কর্মস্থল কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজে। ব্যবসা শিক্ষা শাখা থেকে ২০০৮ জিপিএ ৫ পায়। মায়ের সামন্য আয়ে এক পোষাকে ঢাকা ওঠে নুরআলম। বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং করা নুরআলমের সামর্থ্যরে বাইরে ছিল। তাই ভর্তি পরীক্ষার বই কিনে পড়াশুনা করে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম কেনার সামর্থ্য না থাকায় মেধা তালিকায় জায়গা করে নেয় ঢাকা কলেজে । পরে মায়ের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে ৮৫০০ টাকা হলে সবটুকু টাকাই সন্তানের পড়াশুনাও থাকা খাওয়ায় মা পাঠিয়ে দিতেন। বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয়া আম্বিয়া দীর্ঘ ২০ বছর ধরে প্রতিদিন ২ কিঃমিঃ দুরত্বে কর্মস্থলে পায়ে হেটে আসা যাওয়া করতেন। মায়ের অপ্রতুল আয়ের পুরো টাকাই পড়াশুনায় ব্যয় করে বিবিএও এমবিএ ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে ফাষ্টক্লাস পায়। এতে নুরআলমের ভীত আরোও মজবুদ হয়। ২০১৪ সালে এমবিএ পাশ করলে নানা প্রতিকুলতা পিছনে ফেলে পুরোপুরো মনোনিবেশ করেন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ গ্রহনে। ২০১৭ সালে প্রথম ৩৮তম বিসিএসসের প্রথম আবেদন করে। ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারী, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ২০২০ সালে নভেম্বর নুরআলম মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে। সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জুন ) ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করলে নুরআলমের নাম আসে। এমন খবরে আনন্দে আবেগআপ্লুত হয় মা আম্বিয়া বেগম,নানীও তার নিকট আত্মীয়সহ মায়ের কর্মস্থলের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
৩৮তম বিসিএস কর্মকর্তা নুরআলমের বাড়ি পর্যটন নগরী কুয়াকাটার আলীপুর গ্রামে। নুরআলমের দুরত্ব শৈশব ও কৌশোর কেটেছে আলীপুর বাজারে নানা বাড়িতেই। স্কুল কলেজে বরাবরই প্রথম ছিলেন ওই বিসিএস উত্র্তীর্ন নুরআলম।
জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া নুরআলমের গল্প শুনতে তার নানার বাড়ীতে গেলে নুরআলম বলছিল, মা আমার কাছে স্বর্গ। মায়ের আর্শীবাদ ও ত্যাগ আমার জীবনে এ সফলতা বয়ে এনেছে। কান্নায় চোখ ভিজে যাওয়া ত্যাগী মায়ের সন্তান নুরআলম বলেন, মা খেয়ে না খেয়ে সব সময় ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখতেন। ছেলের এমন সফলতার খবরে মা আম্বিয়া বেগম নফল নামাজ আদায় করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। আর্থিক কষ্টের কারণে ছেলেকে ভাল খাবার ও পোশাক দিতে না পারার অপরগতার কথা স্বীকার করেছেন । তবে মা আম্বিয়া ছেলের এমন সফলতায় খুশি হয়েছেন।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি সহকারী অধ্যক্ষ আঃ রাজ্জাক খান বলেন, নুরআলম আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবসা শিক্ষা শাখা থেকে প্রথম জিপিএ ৫ পেয়েছিল। ওর ধারবাহিক এ সফলতায় এ প্রতিষ্ঠান গর্বিত। মায়ের স্বপ্ন পুরণে নুরআলম ছিল অদম্য। আমারা বিশ্বাস করি ওর বনাঢ্য কর্মজীবনে আদর্শ শিক্ষকদের নীতি ও আদর্শ ধারণ করে সমাজ সেবায় ব্রত হবে।

সর্বশেষ