১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
পটুয়াখালীতে মহাসড়কে অটোরিকশা চালাতে প্রতি মাসে দিতে হয় হাজার টাকা দশমিনায় মোটরসাইকেল মার্কার কর্মীকে পেটালো প্রতিপক্ষ জাল ভোট পড়লেই ভোটকেন্দ্র বন্ধ : ঝালকাঠিতে ইসি আহসান বরিশালে ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে পুলিশ বরগুনায় জুয়া খেলার ছবি তোলায় সাংবাদিককে মা*রধর, ক্যামেরা ছিন*তাই দুর্যোগ মোকাবিলায় ১ কোটি স্বেচ্ছাসেবী গড়ে তোলার পরিকল্পনা মঠবাড়িয়ায় মাদ্রাসার নিয়োগে ৫০ লক্ষ টাকার উৎকোচ বানিজ্য ! পাথরঘাটায় নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীকে শোকজ বরিশালে বাড়ছে তালপাখার চাহিদা অচিরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসর বসবে বরিশাল স্টেডিয়ামে : পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত লন্ডভন্ড, কর্তৃপক্ষ উদাসীন- নেই কোন পদক্ষেপ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

হোসাইন আমির কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি ॥
টানা ৭ দিন বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে বড় বড় ঢেউ সৈকতের ওপর আছড়ে পরে লন্ডভন্ড করেছে কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত। ক্রমশ ছোট হচ্ছে কুয়াকাটার মানচিত্র। পর্যটক ও স্থানীয়রা সবাই মিলে চোখ দিয়ে দেখছে আর খারাপ নিশ্বাস নিচ্ছে। সম্ভাবনাময় বিশ্বের একমাত্র জায়গা যেখানে দাড়িয়ে সূর্য্যদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় সাগর কন্যাখ্যাত কুয়াকাটা। তাও সাগরে বিলিন হচ্ছে। র্দীঘদিন ধরে সৈকত রক্ষায় আনন্দোলন করে আসলেও কোন আপডেট নেই সরকারের একমাত্র প্রতিষ্ঠান পানি উন্নায়ন বোর্ড পাউবোর। এই বিষয় নিয়ে ক্ষোভে ফাটছেন স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের নেতারা। শুধুই শোনা যাচ্ছে প্রপোজল হচ্ছে এবং পাল্টে যায় ৫ বছর ধরে এই সবই শোনা যায়। এই প্রকল্প দেশীয় প্রযুক্তিতে হবে না বিদেশী প্রযুক্তি তা নিয়ে চলে দপ্তরে চলে টানা হেচরা। প্রকল্প বারবার সিডিউল পরির্বতন করে মেগা প্রকল্প কজের বিঘœ ঘটছে। এ ভাবে বালুক্ষয় অব্যাহত থাকলে আগামী দুই বছরেই কুয়াকাটা চৌ-মাথায় সাগরে ঢেউয়ের ঝাপটার আঘাত পড়বে। বিলিন হবে সীবিচ। বর্তমানে হুমকিতে রয়েছে সাগর পারে দুইটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ও মন্দির। এছাড়াও সরকারের ট্যুরিজম পার্ক পাবলিক টয়েলেট অনেক গুলি আবাসিক হোটেল ও রয়েছে চলমান অব্যাহত ভাংঙ্গনে কবলে। খুব দ্রুতই আবার সৈকত রক্ষায় আনন্দোলনে যাবার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের নেতারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়-গত তিন/চারদিন ধরে চলমান মনি অমাবশ্যার জো কুয়াকাটা সৈকতের দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। যার ফলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ফুট পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সৈকতে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। একই সাথে ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়েছে বনবিভাগের রিজার্ভ ফরেষ্ট ও কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান। চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে কুয়াকাটায় অবস্থিত সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে খ্যাত মসজিদ ও মন্দিরটি। এছাড়া বাধের বাইরে থাকা পাকা আধাপাকা অনেকগুলো আবাসিক হোটেল, ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স ও জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে সদ্য চালু হওয়া ট্যুরিজম পার্কটি। সমুদ্রের এমন রুদ্র মূর্তি গত ১০ বছরে আর দেখা যায়নি বলে স্থানীয়দের অভিমত। গত ২-৩ দিনে ২০ থেকে ২৫ফুট ভূ-ভাগ ভেঙ্গে সমুদ্রের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কুয়াকাটা পৌর কর্তৃপক্ষ জিও বস্তা ফেলে পাবলিক টয়লেটটি রক্ষার চেষ্টা করলেও আগামী দু’এক দিনের মধ্যেই পাবলিক টয়লেট ও কিংস হোটেলটি সমুদ্রে গর্ভে চলে যাবার প্রবল আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

সৈকতের পাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঝিনুকের দোকানদার শাহিন (৩০) এ প্রতিনিধিকে জানান, মঙ্গলবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যান তিনি, সকালে এসে দেখেন তার দোকানের মালামাল ও দোকানের একাংশ সমুদ্রে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। শুধু তার দোকান নয়, এমন প্রায় অর্ধশত দোকান ও দোকানের মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলেও দাবি ওই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সৈয়দের। ট্যুরিজম বেলাল ব্যবসায়ী জালাল জানান, ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকম সংসার চালিয়ে আসছিলেন। তিল তিল করে গড়ে তোলা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি সমুদ্রের গ্রাসে চলে গেছে।

রবিবার সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢেউয়ের ঝাপটায় অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অবশিষ্ট অংশ দোকানীরা সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে মহসড়কের শেষ সীমানায়। কোথাও দাঁড়ানোর স্থান নেই। পর্যটকরা সৈকতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। ঢেউ এসে তাদের উপর আছড়ে পড়ছে।

ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা ডকুমেন্টারী ফ্লিম মেকার সন্দীপ বিশ্বাস বলেন, তিনি ১২ বছর ধরে কুয়াকাটায় আসেন। ১২ বছর আগে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে সৈকত দেখেছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা কুয়াকাটার এখনকার চিত্র দেখে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। মঙ্গলবার তিনি কুয়াকাটা সৈকতে ভ্রমণে এসে এমন বিধস্ত চিত্র দেখে বিস্মিত হয়েছেন। তার সামনেই ঢেউয়ের ঝাপটায় নারিকেল, আম, তালগাছসহ কয়েকটি গাছ ভেঙ্গে পড়তে দেখা গেছে। তার মতে কুয়াকাটা সৈকতকে রক্ষায় জরুরী পদক্ষেপ নেয়া দরকার। অন্যথায় সূর্যোদয় সূর্যাস্তের এই বিরল সৌন্দর্য মন্ডিত কুয়াকাটা পযর্যটনের মানচিত্র থেকে অচিরেই হারিয়ে যাবে।

কুয়াকাটা প্রেসক্লাব ও কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন (কুটুম) এর সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের বালুক্ষয় রোধে দীর্ঘমেয়াদি দৃশ্যমান কোন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নেই। বিভিন্ন সময় স্বল্পমেয়াদি যেসব পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে তা নিয়েও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। এ বিষয় নিয়ে আমাদের সংগঠনের মিটিং হয়েছে খুব শিগ্রই আমারা আনন্দোলনে যাব।।

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আঃ বারেক মোল্লা বলেন, সমুদ্র ভাঙ্গন রোধে পদক্ষেপ নেবার সক্ষমতা কুয়াকাটা পৌরসভার নেই। দরকার দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ, যা পাউবো কর্তৃপক্ষ এ নিতে পারে। পৌরসভার পক্ষ থেকে জিরো পয়েন্টে কিছু জিও বস্তা ফেলে সাময়িকভাবে রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে, যা দিয়ে সৈকত রক্ষা করা সম্ভব নয়।

সর্বশেষ