৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
পবিপ্রবিতে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে কর্মশালা ও আলোচনা সভা। দুমকি উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১২ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল। এনডিবিএ'র শোক প্রকাশ গলাচিপায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুর মৃত্যু ঝালকাঠিতে বড় ভাইকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ছোট গ্রেফতার ২৪ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি বরিশালের সুইমিংপুল কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ,ডক্টর ,আ ন ... অবশেষে ভোলায় স্বস্তির বৃষ্টি পিরোজপুরে নামল স্বস্তির বৃষ্টি প্রবাসে স্বামীদের জিম্মি করে দেশে স্ত্রীদের ধর্ষণ করেন পাথরঘাটার মামুন!

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব না থাকলেও পটুয়াখালীতে কমছে না জোয়ারের পানি, দুর্ভোগ চরমে

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস’র প্রভাব ও চলমান পূর্ণিমার জোয়ারে বঙ্গোপসাগরে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে পুবাল বাতাস চলমান থাকায় সমুদ্রে পানি ফুসে উঠেছে। প্রতি জোয়ারে পটুয়াখালীর উপকূলের বেড়িবাঁধের বাইরের পাশে বসবাসকারীদের বসতবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। মরে গেছে গাছপালা। রান্নাবান্না করতে পারছে না হাজারো পরিবার। বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলোর জীবনযাত্রা। ঝড়ো বাতাসে বঙ্গোপসাগরে বিশাল ঢেউ উপচে পড়ছে উপকূলে। আঘাত হানছে উপকূলের রক্ষাকবচ বেড়িবাঁধে। পুরনো ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এমন চিত্র পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার বেড়িবাঁধের বাইরের পাশের সর্বত্র।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মহিপুর থানার নিজামপুর বেড়িবাঁধের জোড়াতালি দেয়া অংশ থেকে জোয়ারের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। স্থানীয়রা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা নিয়ে কয়েক দফা জিও ব্যাগে বালু ও মাটি ভরে পানি ঠেকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। গত কয়েক বছরের ধকল কাটিয়ে ওঠা নিজামপুর, সূধিরপুর ও কোমরপুর এলাকার বাসিন্দারা আবারও বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। স্থানীয়রা কয়েক দফা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ক্ষোভে ফেটে উঠেছেন। তারা দোষারোপ করছেন পাউবো কর্তৃপক্ষকে।

লালুয়া ইউনিয়নের চান্দুপাড়া বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ রক্ষার জন্য চেষ্টা করারও উপায় নেই। দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ গত কয়েক বছর যাবত ভাঙা অবস্থায় আছে। সেখানে বসবাসকারীরা প্রতিনিয়ত জোয়ার-ভাটার স্রোতে ভাসে। জোয়ারে পানি আসবে, আর ভাটায় নেমে যাবে- এতে তারা অভ্যস্ত হয়ে পরেছেন। এবারের জোয়ারের পানিতে গ্রামের পর গ্রামে প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধ হারানো মানুষগুলো এবার হারাচ্ছে গ্রামীণ যোগাযোগের রাস্তাঘাট। প্রতিদিন রাস্তাঘাট তলিয়ে নষ্ট হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ওখানে বাসিন্দারা ত্রাণ চায় না; চায় টেকসই বেড়িবাঁধ। এটা তাদের প্রাণের দাবি। চান্দুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রফেজ প্যাদা বলেন, শেখ হাসিনার কাছে ত্রাণ চাই না, একটি মজবুত ওয়াবদা চাই। এভাবে থাকলে মরলেও শান্তি পাব না, জোয়ারের নোনা পানি কবরেও যাইবে।

লতাচাপলী, ধুলাসার ও ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাহিরে বসবাসকারী পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে গত কয়েকদিন ধরে। রান্না-বান্না করতে পারছেন না তারা। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) খিচুড়ি রান্না করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যানরা। পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে খাপড়াভাঙ্গা নদীতে। বাড়ির গাছপালা লবণ পানিতে মরে গেছে।

মাইটভাঙ্গা গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, আমার পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির ৪০ মণের মতো মাছ ছিল। আমার চোখের সামনে মাছগুলো খাপড়াভাঙ্গা নদীতে নেমে গেছে। এতে আমার দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সিডরেও আমার পুকুরে পানি প্রবেশ করেনি।

গোড়া আমখোলা পাড়া গ্রামের বাসিন্দা সবুজ হাওলাদার বলেন, আমার বাড়িতে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ ছিল। লবণ পানিতে সব গাছ মরে গেছে। বাড়িতে লবণ পানি ওঠার জন্য আগামী দুই বছর আর গাছ লাগাতে পারব না। কারণ বাড়ির মাটি লবণাক্ত হয়ে গেছে।

লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, অস্বাভাবিক জোয়ারের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে রামনাবাদ নদীর পানি প্রবেশ করে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে রয়েছে পুকুর, মাছের ঘেরসহ ফসলি জমি। অধিকাংশ বাড়ির উনুনে হাড়ি ওঠেনি। এছাড়া নতুন করে আরও বেড়িবাঁধ ভাঙার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, বেড়িবাঁধে বসবাসকারীদের দুর্ভোগ লাঘবে চেষ্টা করছি। সার্বক্ষণিক তাদের খোঁজ রাখছি। যারা রান্না-বান্না করতে পারছে না তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছি। যতদিন এভাবে থাকবে পাশে থাকার চেষ্টা করব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহম্মদ শহিদুল হক বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে শুকনো খাবারের জন্য ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। উপজেলায় শিশু খাদ্যের জন্য ১ লাখ টাকা ও গো-খাদ্যের জন্য আরও ১ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে ক্ষয়-ক্ষতি নির্ণয় পরবর্তী আরও আড়াই লাখ টাকা দেয়া হবে।

সর্বশেষ