শাকিব বিপ্লবঃ
বরিশাল কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী জনপদ চরকাউয়ায় একটি পুকুরের ইজারা নিয়ে শুরু হয়েছে প্রতিহিংসার রাজনীতি। যা এখন রূপ নিয়েছে নাটকীয়তায়। পুকুর ইজারাদার তারেক অংশীদার হিসেবে সদর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান সুজনকে সাথে নেয়ায় বিএনপি নেতা রেজাউল কবির তা মানতে নারাজ হওয়ায় গত দুদিন ধরে সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতির শেষান্তে দুই পক্ষের সংঘাতে রূপ নেয়। এরপর রেজাউল কবির তার উপর হামলার অভিযোগ এনে শেবাচিমে আশ্রয় নিয়েছে। বলছে তাকে কোপানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে তারেক ও সুজন যৌথভাবে এই হামলার সাথে জড়িত। অথচ রেজাউল নিজেই হামলা চালিয়ে প্রথমে পুকুর সংস্কার কাজে নিয়োজিত নেছার নামক এক যুবককে পিটিয়ে আহত করে। এঘটনায় তারেক প্রতিবাদ জানাতে গেলে উভয়ের মধ্যে সংঘাতে রেজাউল কবির আহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার পড়ন্ত বিকেলের এই ঘটনা পরে রেজাইল কবির কৌশলগত কারনে শেবাচিমে ভর্তি হয়। নিজেই অতি উৎসাহিত হয়ে মিডিয়ার কাছে এই হামলার তথ্য পৌছে দিয়ে ঘটনার জন্য তারেক অপেক্ষা সদর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান সুজনকে দায়ী করে তাকে কোপানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বিকেলের সংঘর্ষে উভয় গ্রুপ লাঠি ব্যাবহার করায় তার আঘাতে রেজাউল কবির আহত হন। এসময় সুজন দুই পক্ষকে নিবৃত করতে ভুমিকা রাখতে গিয়ে ঘটনার সাথে জড়িয়ে যান। সেই সুযোগটি লুফে নিয়েছে স্থানীয় বিএনপি।
একাধিক সূত্রের অভিন্ন অভিমত, চরকাউয়া বড় সিকদার বাড়ির একটি পুকুর নিয়ে এই দ্বন্দে পরস্পবিরোধী সিকদার-খান ও আকন গোষ্ঠী সম্পৃক্ত। ঐ বাড়িতে বিশালকায় একটি পুকুর মাছ চাষের জন্য গত ২০ বছর ধরে ইজারা দিতে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্তের আলোকে প্রতিবছরই ডাক ওঠে। মে মাসের প্রথমদিকে আনুষ্ঠানিক ডাকে এবার সর্বোচ্চ ৮৫হাজার টাকায় তারেক পুকুরটির ইজারা লাভ করেন। কিন্তু এই যুবক শহরকেন্দ্রিক বসবাস করায় একই বাড়ির বাসিন্দা সুজনকে অংশীদার হিসেবে সাথে নেয়। খান গোষ্ঠীর সন্তান রেজাউল কবির এতে ক্ষুদ্ধ হন। জানা গেছে, তিনিও পুকুরটি ইজারা নেওয়ার দৌড়ে অংশ নিয়ে ব্যার্থ হয়, উপরন্তু তাকে উপেক্ষা করে সুজনকে প্রাধান্য দেয়ায় এই দ্বন্দের সূত্রপাত ঘটে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, গত ৫ দিন ধরে মাছ চাষের প্রস্তুতিতে ঐ পুকরটি সংস্কার কাজ চলছিলো। নেছার নামক গ্রাম্য এক যুবক এই কাজ করার সময় পুকুরের ভিতরে প্রসারিত একটি কাঁঠাল গাছের ডাল কাটার প্রয়োজনীয়তায় তারেকের পরামর্শ অনুযায়ী তা কার্যকর করে। এতে আরও ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে গাছের মালিক রেজাঊল কবির। দুপুরে এনিয়ে নেছারকে একদফা পেটানো হয়। খবর পেয়ে বরিশাল শহর থেকে তারেক বাড়িতে উপস্থিত হয়ে নেছারকে পেটানোর ঘটনায় তাকে স্থানীয় থানায় পাঠিয়ে বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনকে অবহিত করে। পরে তারেক ঘটনার জন্য রেজাউলের কাছে এর কৈফিয়ত চাইলে উভয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং শক্তি প্রদর্শনে একে অপরকে শাসাতে থাকে। এসময় দুই পক্ষই লাঠি ব্যাবহার করে নিজ বাড়ির আঙিনা রণক্ষেত্রে রূপ দেয়।
বাড়িতে উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতা সুজন গোষ্ঠীগত এই দ্বন্দ-সংঘাত থামাতে এগিয়ে এসে উভয় পক্ষকে নিবৃত করার ভুমিকা রাখে।এর আগে সুজন পুকুর নিয়ে চলমান উত্ত্প্তকর পরিস্থিতি নিরসনে গত বৃহস্পতিবার তার আপন ভাগ্নে কিশোর মুরাদের মাধ্যমে রেজাউল কবিরকে ডেকে এনে একটি সমাধানের পথ খুজতে চেয়েছিলো। এমনটি দাবী করে সুজন জানায়, কোনো প্রস্তাবেই রেজাউলের ইতিবাচক মনোভাব না থাকায় তাকে ডাকতে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে কিশোর মুরাদকে শারিরীক নাজেহাল করে। কিন্তু রাজনীতিতে তিনি কিছুটা ঝুট-ঝামেলার মধ্যে থাকায় এনিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেননি।
এদিকে সন্ধ্যার পরই পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে রূপ নেয়। সামান্য সংঘাতের ঘটনা গোটা চরকাউয়ায় অলোচনায় প্রাধান্য পায়।
সুজন হামলার ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে এই প্রতিবেদককে বলেন , তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই ঘটনা ভিন্ন দিকে রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
শেবাচিমের চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে এই প্রতিবেদককে জানান, সন্ধ্যার কিছ’ পূর্বে ভর্তি রেজাউল কবিরের মাথায় জখম হয়েছে।
এলাকা সংশ্লিষ্ট বন্দর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, দুই পক্ষ থেকে মামলার জন্য দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তিনি ঘটনার সত্যতা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য একজন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘটনাস্তলে পাঠিয়েছেন।