২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চরফ্যাশনে জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ১১জেলেকে কানধরে উঠবস!

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চরফ্যাশনের চরমানিকা ইউনিয়নে জেলেদের চাউল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান হাজি শফিউল্যাহ হাওলাদারের বিরুদ্ধে। অনিয়মের প্রতিবাদ করায় উপকারভোগীর তালিকাভূক্ত ১১ জন জেলেকে কানধরে উঠবস করানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মহিলা মেম্বার রহিমা বেগম । অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই ইউনিয়নের জেলেদের চাউল বিরতণ আপাদতঃ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমিন।
অভিযুক্ত চর মানিকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজি শফিউল্যাহ হাওলাদার জানান, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে নিয়োজিত জেলেদের পুনর্বাসনে চর মানিকা ইউনিয়নের ৬শ ২৩ জন জেলের অনুকূলে ৫৬ কেজি করে চাউল বরাদ্দ করা হয়েছে। উপকারভোগী প্রত্যেক জেলে ৫০ কেজির একবস্তাসহ আরো ৬ কেজি করে মোট ৫৬ কেজি চাউল পাবেন।
চর মানিকা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাররা জানান,পরিষদের প্রত্যেক সাধারন সদস্যের ওয়ার্ডে ৫০ জন করে ৯ ওয়ার্ডে মোট ৪৫০জন,সংরক্ষিত ৩ জন সদস্যের প্রত্যেক ওয়ার্ডে ২৮টি করে ৮৪ জন এবং চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রাখা হয়েছে ৮৯জন উপকারভোগীর বরাদ্দকৃত চাউল। গত মঙ্গলবার চাউল বিতরণ শুরু করা হয়।
সংরক্ষিত-২(৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের) মহিলা মেম্বার রহিমা বেগম অভিযোগ করেন প্রত্যেক উপকারভোগী ৫৬ কেজি করে চাউল পাওয়ার কথা থাকলেও বিতরণের প্রথম দিন মঙ্গলবার চেয়ারম্যান মাত্র ১৫ কেজি করে চাউল দিয়ে উপকারভোগীদের ঠকাচ্ছিলেন। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে যান ওই ইউনিয়নের জেলেদের চাউল বিতরণকাজের তদারকির দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা তুষারকান্তি দে। তদারকী কর্মকর্তা নিয়ম মেনে প্রত্যেক জেলেকে ৫৬ কেজি করে চাউল দেয়ার চেষ্টা করলেও চেয়ারম্যানের বাঁধার কারণে তা আর হয়নি। ফলেতদারকী কর্মকর্তা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেন। এ প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে মঙ্গলবার চাউল বিতরণ প্রথমবারের মতো বন্ধ রাখা হয়। যথা নিয়মে চাউল বিরতণের আশ্বাস দিয়ে বুধবার আবারও বিতরণ কাজ শুরু করা হয়। কিন্ত বুধবারও জেলেদের ১৫ কেজি করে চাউল দেয়া শুরু করেন চেয়ারম্যান হাজি শফিউল্যাহ। এসময় মহিলা মেম্বার রহিমা বেগমের তালিকাভূক্ত ১১জন জেলে ১৫ কেজি করে চাউল গ্রহনে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে চেয়ারম্যান হাজি শফিউল্যাহ ওই উপকারভোগী জেলে এবং মহিলা মেম্বার রহিমা বেগমের সাথে অশালীন আচরণ করেন এবং জেলেদের পরিষদের মধ্যে কানধরে উঠবস করতে বাধ্য করেন। মহিলা মেম্বার রহিমা বেগম বলেন, এ অপমান জেলেদের নয় বরং আমাকে করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবারও চাউল বিতরণ স্থগিত করেছেন। এখন চাউল বিরতণ বন্ধ রয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান হাজি শফিউল্যাহ বলেছেন, মহিলা মেম্বার রহিমা বেগম একজন বিধবা মহিলার ভিজিডি চাউল নিয়মিত নিজে ভোগ করছেন। এ বছর ওই চাউল বন্ধ করে দেয়ায় তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে এমন উদ্ভট অভিযোগ তুলেছেন। চেয়ারম্যানের অভিযোগ প্রসঙ্গে মহিলা মেম্বার রহিমা বেগম বলেছেন, আমি দুইবারের নির্বাচিত মহিলা মেম্বার। থাকি সরকারি খাস জমিতে। নিজের কোন সম্পদ নেই। সম্পদ সাধারন মানুষের ভালোবাসা। আমি ভিজিডির চাউল খেতে যাবো কেন।উপজেলা নির্বাহী অফিসার সব অবগত আছেন। আমি ভিজিডির চাউল খেলে তারও বিচার হতে পারে। চেয়ারম্যান জেলেদের চাউল বিক্রি করে থাকলে তারও বিচার হতে হবে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমিন জানান, উপকারভোগী প্রত্যেক জেলে ৫৬ কেজি করে চাউল পাবেন। কোন কারণে এই চাউল কম দেয়ার সুযোগ নেই। চাউল কম দেয়া নিয়ে সমস্যা হয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আপাদতঃ বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে চাউল বিতরণ করা হবে এবং উপকারভোগী প্রত্যেক জেলের ৫৬ কেজি করে চাউল পাওয়া নিশ্চিত করা হবে।

সর্বশেষ