১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চরবাড়িয়ায় সাইনবোর্ড টানিয়ে জেলা প্রশাসনের জমি দখলের পায়তারা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

নিজস্ব প্রতিবেদক ::: বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের তালতলী বাজার সংলগ্ন জেলা প্রশাসনের সরকারি জমিতে গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন বরিশাল জেলা কমিটির সাইনবোর্ড টানিয়ে জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি একই জমি থেকে মূল্যবান গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে একটি চক্র ওই জমি বালু দ্বারা ভরাট করার পাঁয়তারা করছে। এ বিষয়ে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন।

অভিযুক্তরা হলেন- গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন বরিশাল জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক শাহাদাত, স্থানীয় সাবেক মেম্বার ফিরোজ ও মাছ ব্যবসায়ী কালু শিকদার।

রোববার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- জেলা প্রশাসনের জমিতে বাংলাদেশ গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে পাশের পুকুরটি সেচ দিয়ে বালু ভরাটের পায়তারা করা হচ্ছে। ওই জমি থেকে মূল্যবান কিছু গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থলে থাকা মাছ ব্যবসায়ী কালু বিষয়টি এড়িয়ে যান। আর সাবেক মেম্বার ফিরোজ আগেই সেখান থেকে সটকে পড়েন।

চরবাড়িয়া ভূমি অফিসের তহসিলদার সুমন জানান, বিষয়টি তার নজরে আসার সাথে সাথেই তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে সাইনবোর্ড সরিয়ে নিতে বলেছেন। সেখানে গিয়ে জানতে পারি ফিরোজ ও কালু নামের দুই ব্যক্তি জেলা প্রশাসনের জমির একটি পুকুর সেচ দিয়ে বালু ভরাটের পায়তারা করছে এবং কিছু গাছ কেটে ফেলেছেন। তখন ফিরোজ নামের সাবেক ওই মেম্বর তাকে চাকরিচ্যুত করাসহ নানা হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। পরে গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন বরিশাল জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক পরিচয়ে শাহাদাত নামের একজন ফোন করেও তাকে হুমকি দিয়েছেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জানিয়েছেন তিনি।

চরবাড়িয়া ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে- ২৮/৬৩-৬৪ নং এল এ কেসের মাধ্যমে গণপূর্ত বিভাগের অনুকূলে ইটভাটা নির্মাণের নিমিত্ত হুকুমদখলকৃত জে.এল ৪১ নম্বর চরবাড়ীয়া মৌজার ৯.১৪ একর জমি অব্যবহৃত থাকার কারনে যাহা পুনঃ গ্রহণ ০২/২০১৭-২০১৮ নম্বর কেসের মাধ্যমে সম্পত্তি অধিগ্রহণ ম্যানুয়েল, ১৯৯৭ এর অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নির্দেশাবলীর ৭৭ ও ৭৮ নম্বর অনুচ্ছেদের এবং স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭ (২০১৭ সনের ২১ নম্বর আইন) এর ১৯(৩) ধারার বিধানমতে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৫.১০.২০১৯ খ্রি. তারিখের ৩১,০০,০০০,০৪৮.৬৮.০১৬.১৯-২৯৩ নং স্মারকে উক্ত ভূমি পুনঃগ্রহণের (রিজিউম) করার অনুমতি প্রদান করায় খাস করা হয়েছে মর্মে ঘোষণা করা হয়েছে। যাহার বি.এস ১৭৭, ১৭৮, ১৮১, ২৪৪ ২৪৫, ২৪৬ নম্বর দাগের যথাক্রমে (০.৩৭+১,২০+৬,১৮+০.১২+০.০৮+০.১৯) = ৮.১৪ একর।

এ বিষয়ে বরিশাল গণপূর্তের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফ-উল আলম বলেন- ওইখানে গণপূর্তের ৯.১৪ একর জমি ছিল। সেখান থেকে মডেল মসজিদের নামে ৪৬ শতাংশ জমি দেয়া হয়েছে। কিছু জমি চরবাড়িয়া ভূমি অফিসের নামে দেয়া হয়েছে। বাকি জমি জেলা প্রশাসনের নামে খাস জমি হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তারাই এখন ওই জমি দেখভাল করেন।

এ বিষয়ে সাবেক মেম্বার ফিরোজ বলেন- আমি ওই জমি দখলের সাথে সম্পৃক্ত নই। গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন, বরিশাল জেলা কমিটি সাইনবোর্ড টানিয়েছে তারা জানে। চরবাড়িয়া ভূমি অফিসের তহসিলদার সুমনকে হুমকি-ধামকি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

মাছ ব্যবসায়ী কালু শিকদারের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন বরিশাল জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক শাহাদাত মুঠোফোনে বলেন- আমি কিছু জানিনা। কে বা কারা আমাদের সংগঠনের নামে সাইনবোর্ড টানিয়েছে তাও জানিনা। মুঠোফোনে চরবাড়িয়া ভূমি অফিসের তহসিলদার সুমনকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ভাই আমি অসুস্থ ঢাকায় আছি, কাল অফিসে আইসেন কথা বলবো।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন- বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের এসডিকে জানানো হয়েছে। যেহেতু তারা গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মচারী সেহেতু গণপূর্তের উর্ধতন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নিবে। এরপরেও দখলমুক্ত না হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সর্বশেষ