২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
বরিশালে ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার চরকাউয়ায় যুবলীগ নেতা খান মামুনের গণসংযোগ বাংলাদেশে বর্তমানে ভারতের তাবেদার সরকার শাসন করছে : বরিশালে ভিপি নুর বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ, ইমামের কক্ষে আগুন উজিরপুরে ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার কাউখালীতে পাটি খাতে রূপালী ব্যাংকের ক্লাস্টার ভিত্তিক ঋণ বিতরণ বিআরডিবি'র কার্যক্রম পরিদর্শনে সচিববৃন্দ মনপুরায়, কিশোরীদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ ও উঠান বৈঠক বরিশালে ‘সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শহর রক্ষা বাধ দখলের মহোৎসব উজিরপুরে মাদকসহ জেলা ডিবি'র খাচায় ১ মাদক কারবারী আটক রাজাপুরে নিখোজ ভ্যান চালকের লাশ ভাসছিলো নদীতে

চিকিৎসক ও কর্মী সংকটে ধুকছে বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

নিজস্ব প্রতিবেদক ::: শতাধিক বছরের পুরনো দক্ষিণাঞ্চলের সর্ব প্রথম বেসরকারী ও সরকারী ‘সদর হাসপাতাল’ খ্যাত বরিশাল জেনারেল হাসপাতালটি ঝুকিপূর্ণ ভবন আর চিকিৎসক সংকটের মধ্যে নিজেই ধুকে ধুকে চলছে না চলার মত করে। গত সপ্তাহেও হাসপাতাল ভবনের ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে ৩ রোগী আহত হয়েছেন। ‘এ ধরনের দূর্ঘটনা নিত্য দিনেরস অভিযোগ করে ‘নিজেরাই নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন’ বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল কর্মী ও একাধিক চিকিৎসক।

পুরনো ৩টি দ্বিতল ভবন ভেঙে সেখানে প্রায় ১৬ কোটি ব্যায়ে ১২ তলা ভিতের ওপর ১টি দোতালা ভবন নির্মান কাজ শুরু হয়েছে সম্প্রতি। ঐ ভবন নির্মনের পরে দক্ষিণাঞ্চলের প্রাচিন এ হাসপাতালটি আড়াইশ শয্যায় উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভবাগ সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে ১শ শয্যার এ হাসপাতালে ৩৩ জন চিকিৎসকের মঞ্জুরীকৃত পদের বিপরিতে আছেন ২২ জনের মত। নার্স সহ অন্য সব পদেও জনবলের অভাবে এ হাসপাতালটি নিজেই চরম সংকটে।

শতাধিক বছরের পুরনো এ হাসপাতালে ২ টি ভবন এখনো কালের সাক্ষি হয়ে দাড়িয়ে থাকলেও তা যথেষ্ঠ ঝুকিপূর্ণ। এ দুটি ভবনের একটিতে বহির্বিভাগ, অপরটিতে জরুরী বিভাগের কার্যক্রম চলছে। এছাড়া বর্তমানে ১শ বেডের ইনডোরের ভবনটি নির্মিত হয় ২০০৪ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে। অপারেশন থিয়েটার সহ ইনডোরের সব চিকিৎসা কার্যক্রম ঐ একটি ভবন থেকে করতে গিয়ে অনেকটাই নভিশ^াস অবস্থা। হাসপাতাল কতৃপক্ষ সহ জেলা সিভিল সার্জন আশা করছেন, বছর দুয়েকের মধ্যে নতুন ভবন নির্মিত হলে পরিস্থিতির কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন হবে। এখনো বরিশাল মহানগরী ও সন্নিহিত বিশাল এলাকার জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবার জন্য এ হাসপাতালটির ওপর নির্ভরশীল।

তবে ১২ তলা ভিতের ওপর নির্মানাধীন মাত্র দোতালায় কিভাবে আড়াইশ বেডের হাসপাতাল কার্যক্রম চলবে, তার কোন উত্তর হাসপাতাল কতৃপক্ষেরও অজানা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্থানীয় দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে প্রাথমিক পর্যায়েই নির্মানধীন ভবনটির অন্তত ৪ তলা নির্মানের দাবী জানান হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় অর্থ বরাদ্ব না করলে গনপূর্ত অধিদপ্তরেরও তেমন কিছু করার নেই বলে জানা গেছে। ফলে খুব সহসা শতাধিক বছরের প্রাচিন বরিশাল জেনারেল হাসপাতালটির অবস্থার খুব ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করছেন না ওয়াকিবাহল মহলও।

উল্লেখ্য, তৎকালীন বৃটিস-ভারত যুগে ১৮৪৭ সালে একজন সাব এ্যাসিস্টান্ট সার্জনের পরিচালনায় বরিশাল শহরে একটি ‘চ্যারিটেবল ডিসপেনসারী’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে অতি সিমিত সরকারী চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। এর ৬৩ বছর পরে জনস্বার্থে স্থানীয় গন্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে বরিশালে একটি আবাসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে গ্রহন করা হয়। শের এ বাংলা একে ফজলুল হক-এর নানা পরিবার রাজাপুরের সাতুরিয়ার জমিদার পরিবারের মেহেরুন্নেছা বেগমের প্রদত্ত জমিতে ১৯১০ সালের ৫ ডিসেম্বর বর্তমান বরিশাল সদর হাসপাতাল ভবনের ভিত্তি স্থাপন করেন পূর্ববঙ্গের লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার ল্যান্সলট হেয়ার। নির্মান শেষে তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ১৯১২ সালের ১৩ জুলাই ২০ শয্যা নিয়ে হাসপাতালের মূল ভবন উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি কয়েকজন দানবীর এ হাসপাতাল এলাকায় আরো ৩টি দ্বিতল ভবন নির্মান করে দেন। যাতে লেবার ওয়ার্ড ও পেয়িং ওয়ার্ড সহ একসাথে ৫ টি ভবনে সব ধরনের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছিল।

১৯৪৩ সাল পর্যন্ত একটি কমিটি হাসপাতাল পরিচালনা করত। ১৯৪৪ সালে কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে বঙ্গীয় জনস্বাস্থ্য সচিব মি: হ্যালন এ সাব-ডিভিশনাল হাসপাতালকে তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত করে সরকার বরিশাল সদর হসপিটাল’র দায়িত্ব গ্রহণ করে। হাসপাতাল পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি ছিল। সিদ্ধান্ত হয় সরকার হাসপাতালের সম্পদ হস্তান্তর করতে পারবে না। ১৯৪৪ সালের ১৯ মার্চ ম্যানেজিং কমিটি প্রাদেশিক সরকারকে হাসপাতালের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে। জেলা বোর্ড ও পৌরসভা হাসপাতালে অনুদান প্রদান করবে। এমপি বর্মণ এ সময় হাসপাতাল কমিটির সেক্রেটারি নিযুক্ত হয়েছিলেন। দেশ বিভাগের পরেও হাসপাতঅলটি সিভিল সার্জনের তত্ববধানে পরিচালিত হচ্ছিল। তবে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি হাসপাতাল পরিচালনা কমিটিও ছিল।

১৯৬৮ সাল থেকে ’৭৮ সাল পর্যন্ত বরিশাল মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমে এ হাসপাতাকে যুক্ত করা হয়। ১৯৭৯ সালের শুরুর দিকে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নিজস্ব ভবনে স্থানন্তরের পরে ঐ হাসপাতালেরই অংশ হিসেবে একই পরিচালকের নিয়ন্ত্রনে এটি পরিচালিত হতে থাকে। ২০১৬ সালের দিকে বরিশালের সিভিল সার্জনের তত্ববধানে হাসপাতালটি ছেড়ে দেয়া হয়। তবে ২০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ড সহ এখনো ১’শ শয্যায় সিমিত রয়েছে বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল।

তবে বিগত শত বছরে নানা চড়াই উৎড়াই পেড়িয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ব প্রথম স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানটি চললেও তার কাঙ্খিত কোন উন্নয়ন হয়নি। অথচ বরিশাল মহানগরী সহ সন্নিহিত বিশাল জনগোষ্ঠী সরকারী এ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটির ওপর নির্ভরশীল।

এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহিন খানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের নির্মানাধীন ভবনটি দোতালার পরিবর্তে আরো ঊর্ধ্বমুখি সম্প্রসারনে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অনুরোধ জানান হয়েছে। পাশাপশি পুরনো দুটি ভবনের প্রয়োজনীয় মেরামত ও সংস্কারের ব্যাপারেও গনপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্য সেবা কর্মীর সংকট সর্বত্রই রয়েছে বলে জানিয়ে ‘এ লক্ষেও সব সময়ই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয়কে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ রয়েছে’ বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ