১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জুম্মার দিনের করণীয় ও আমল

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

মুমিন মুসলমানের জন্য জুমার দিন নামাজ আদায় করা জরুরি। প্রত্যেক সাবালক জ্ঞান-সম্পন্ন পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে পড়া ফরজ। এ নামাজ জামাআতে আদায় করতে হয়। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা জুমার দিন দ্রুত মসজিদে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন-হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিন নামাজের জন্য আহ্বান করা হবে, তখন তোমরা দ্রুত আল্লাহর স্মরণের জন্য উপস্থিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ কর। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা বুঝতে পার।’ (সুরা জুমা : আয়াত ৯)+

করণীয় ও আমল

১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- جَعَلَهُ اللهُ عِيْدًا ‘হে মুসলমানগণ! জুমার দিনকে আল্লাহ তোমাদের জন্য (সাপ্তাহিক) ঈদের দিন হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। তোমরা এদিন মেসওয়াক কর, গোসল কর ও সুগন্ধি লাগাও’। (মুয়াত্তা, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

২. জুমার দিন নামাজের প্রস্তুতিতে সুন্দরভাবে গোসল করে সাধ্যমত উত্তম পোষাক ও সুগন্ধি লাগিয়ে আগে-ভাগে মসজিদে যাওয়া (গুরুত্বপূর্ণ সওয়াব ও মর্যাদার কাজ)। (বুখারি, মিশকাত)

৩. (জুমার দিন আগেভাগে) মসজিদে (গিয়ে) প্রবেশ করে সামনের কাতারের দিকে এগিয়ে যাওয়া। (নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত)

৪. মসজিদে গিয়ে বসার আগে প্রথমে দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ আদায় করা (ফজিলতপূর্ণ আমল)। (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)

৫. খতিব মিম্বরে বসার আগ পর্যন্ত (সম্ভব হলে) যত রাকাত খুশি নফল নামাজে নিয়োজিত থাকা। (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, মিশকাত)

৬. (ইমাম মিম্বারে আরোহন করলে) চুপচাপ মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শোনা। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

৭. খুতবাহ চলা অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করলে (অন্যের ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে) শুধু দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ নামাজ আদায় করে বসে পড়া। (মুসলিম, মিশকাত, আবু দাউদ)

৮. জুমার দিন কোনোভাবেই অলসতা না করা। যারা জুমার দিন প্রস্তুতি থেকে শুরু করে নামাজ আদায় করার সময় পর্যন্ত অলসতা করেন তাদের উচিত, মহান আল্লাহর এ নির্দেশের দিকে মনোযোগ দেয়া। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ ঈমানদারদের উদ্দেশ্য করে এ মর্মে নির্দেশ দেন যে-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ

‘হে বিশ্বাসীগণ! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের (নামাজের) জন্য ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ৯)

জুমা আদায়ে সতর্ক হওয়ার কারণ

১. জুমার নামাজের গুরুত্ব এতবেশি যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমা থেকে বিরত থাকা বা অলসতাকারীদের ঘর জালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। (মুসলিম, মিশকাত)

২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘জুমা পরিত্যাগকারীদের হৃদয়ে আল্লাহ মোহর মেরে দেন। এরপর তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।’ (মুসলিম, মিশকাত)

৩. তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি অবহেলা করে পরপর তিন জুমা পরিত্যাগ করলো, সে ব্যক্তি ইসলামকে পেছনে নিক্ষেপ করলো।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

৪. অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি বিনা করণে তিন জুমা পরিত্যাগ করলো, সে ব্যক্তি ‘মুনাফিক’।’ (ইবনু খাজায়মা)

হজরত কাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর উপলব্দি

এ কারণেই হজরত কাব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জুমার আজানের আওয়ায শুনে বিগলিত হৃদয়ে বলতেন-

‘আল্লাহ রহম করুন! আসআদ বিন যুরারাহর উপর; কারণ তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা থেকে মদিনায় আসার আগে সেই-ই প্রথম আমাদের নিয়ে জুমার নামাজ কায়েম করেন।‘

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার নামাজের গুরুত্ব অনুধাবন করে এ দিনের করণীয় ও সুন্নাত আমলগুলো যথাযথ পালন করা। জুমার নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে আগে-ভাগে মসজিদে গিয়ে উপস্থিত হওয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার নামাজ গুরুত্বসহকারে সুন্নাত নিয়মে করণীয় ও আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। জুমার ফজিলত ও নেয়ামতগুলো অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ