১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

ঝড়ো হাওয়ায় বরিশালে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বরিশাল বাণী: কালবৈশাখীর গরম বাতাসে বরিশালে চলতি বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রোববার রাতে কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ায় হাজারো কৃষকের স্বপ্নের ফসল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। যেসব জমির ধান গাছে কেবল মাত্র শীষ বের হয়েছে সেগুলো গরম হাওয়ায় পুড়ে সাদা ধূসর হয়ে গেছে। পরদিন সকালে কৃষক জমিতে গিয়ে ধানের এই অবস্থা দেখতে পেয়ে হতবাক হয়ে পড়েছেন। কৃষি বিভাগ খবর পেয়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে মাঠে কাজ করছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় এ বছর ৯ হাজার ৪ শত ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এসব জমিতে ধানের ফ্লাওয়ারিং স্টেজ চলছে। কিন্তু হঠাৎ করে রোববার সন্ধ্যার পরে উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রাংতা, রাজিহার, বাসাইল, বসুন্ডা, বাহাদুরপুর, কান্দিরপার, বাকাল ইউনিয়নের ফুল্লশ্রী, বাকপাড়া, তেতলা, নওপাড়া, যবসেন, ডুমুরিয়া, কোদালধোয়া, ফেনাবাড়ি, পাকুরিতা, পয়সারহাট, বড়মগড়া, বাগধা ইউনিয়নের জয়রামপট্টি, খাজুরিয়া, চাঁদত্রিশিরা, আমবৌলা, নাগিরপাড়, সোমাইরপাড়, চক্রিবাড়ি, আস্কর, গৈলা ইউনিয়নের বুধার, কুয়াতিয়ারপাড়, নগরবাড়ি, কালুরপাড়, কাঠিরা, সুজনকাঠি, তালতারমাঠ, ভদ্রপাড়া, অশোকসেন, গৈলা, শিহিপাশা, সেরাল, রতœপুর ইউনিয়নের বারপাইকা, দীঘিবালী, নাগার, তালতা, চাপাচুপা, মোল্লাপাড়া, নাগার, ছয়গ্রাম, মোহনকাঠি, বেলুহার, চাউকাঠী গ্রামের উপর দিয়ে কালবৈশাখীর গরম হাওয়া প্রবাহিত হয়। বর্তমানে ধানের ফ্লাওয়ারিং (কেবলমাত্র ফুল বের হওয়া) হওয়ার সময়। যেসব জমিতে ধানের ফ্লাওয়ারিং হচ্ছে সেসব জমির ধান গরম বাতাসে পুড়ে গিয়ে সাদা ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে। এতে উৎপাদনের প্রায় শতকরা ২৫ ভাগ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার রাংতা গ্রামের কৃষক আনোয়ার সরদার জানান, কয়েকদিনে প্রচন্ড গরম ও রোববারের বাতাসে কিছু ক্ষেতের আঁধা পাকা ধান পরে বাদশা সরদারের ১শত শতাংশ, সুমন হাওলাদারের ১শত ২০ শতাংশ ও আজগর আলীর ২০শতাংশ ইরি-বোরো ক্ষেতসহ শতাধিক কৃষকের ধান নষ্ট হয়েছে। উপজেলার রাংতা গ্রামের কৃষক ও ব্লক ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন বলেন, রোববার সন্ধ্যার পর থেকে কালবৈশাখীর ঝড় বইতে শুরু করে। এর মধ্যে রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করে গরম বাতাস শুরু হয়। এই গরম বাতাস প্রায় আধা ঘণ্টার মতো স্থায়ী হয়। সকালে জমিতে গিয়ে দেখি, ফুল বের হওয়া ধানের শীষগুলো পুড়ে গিয়ে সব ধান সাদা ধূসর বর্ন হয়ে গেছে। আমার সাড়ে চার বিঘা ক্ষেতের ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কি করব, কিভাবে চলব? বুঝতে পারছি না। গৈলা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, আমি ধার-দেনা করে ৩ বিঘা ক্ষেতে ধান চাষ করেছিলাম। তাও শেষ হয়ে গেল। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা না করে তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মরতে হবে। গৈলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম টিটু বলেন, রোববার রাতে আমার এই ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গরম বাতাসে প্রায় ৩০ভাগ কৃষকের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি সহযোগিতা দেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দোলন চন্দ্র রায় বলেন, রোববার রাতে কালবৈশাখীর সাথে গরম বাতাস প্রবাহিত হয়। সন্ধ্যার পরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জমির ওপর দিয়ে গরম বাতাস বয়ে যায়। রাতে কিছুই বোঝা যায়নি। খবর পেয়ে সকালে কৃষকের জমিতে গিয়ে দেখি ফুল বের হওয়া ধানে গরম বাতাস লেগে পরাগায়ন শুকিয়ে গেছে। ধান গাছ ঠিক থাকলেও শীষগুলো শুকিয়ে সাদা ধূসর বর্ন হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, প্রায় ১শত ৫০হেক্টর জমির ধান আশিংক নষ্ট হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ