২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ত্রাণে ব্যবহারের অজুহাতে দাম বেড়েছে মোটা চালের

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সম্প্রতি মোটা চালের দাম বেড়েই চলেছে। কয়েক দফায় দাম বেড়ে বর্তমানে ৩২ টাকার গুটি (মোটা) চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা পর্যন্ত। বেড়েছে স্বর্ণা, পাইজামসহ অন্যান্য মোটা চালের দামও। তবে বাজারে মোটা চালের খুচরা দাম বাড়লেও চিকন চালের দাম রয়েছে আগের মতোই।

চালের দাম নিয়ে খোদ ব্যবসায়ীদের মধ্যেই রয়েছে ভিন্নমত। বড় ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারিভাবে মোটা চাল কেনায় কিছুটা সংকট রয়েছে মোটা চালের। তবে এরপরও বাজারে পর্যাপ্ত চালের মজুত আছে, তাই দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তবে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে শুরু হওয়া বন্যা কতদিন থাকে বা এরপর কী হবে সেটা বলা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে ছোট পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে মোটা চালের সংকট চরমে, পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম। তাছাড়া দামে কম হওয়ায় ত্রাণ বিতরণের সময় সবার চাহিদা থাকে মোটা চালের প্রতি। এজন্য চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বেড়েছে মোটা চালের।

রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও ও কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি গুটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকায়। তিন-চার দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৩৯ থেকে ৪০ টাকায়। আর দুই-তিন সপ্তাহ আগে এসব চাল বিক্রি হয়েছিল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে দাম বেড়ে প্রতি কেজি পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকায়, স্বর্ণা ৪২ থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে। দুই-তিন সপ্তাহ আগে এসব চাল বিক্রি হয়েছিল ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা কেজি দরে। দাম বেড়ে আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে, আতপ চাল ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা, সরকারি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা কেজি দরে।

তবে আগের দামে বিক্রি হচ্ছে চিকন চাল। এসব বাজারে খুচরা দামে প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, নাজির ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা, মিনিকেট ৫৬ থেকে ৬০ টাকা।

বাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে প্রতি বস্তা আটাশ চাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকায়, পাইজাম ২২৫০, মোটা গুটি চাল ২০০০ টাকা বস্তা, নাজির ২৫ কেজি বস্তা ১৪২০ থেকে ১৫০০ টাকা, বাঁশফুল ২৭০০ টাকা বস্তা।

কারওয়ান বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী ও জব্বার স্টোরের মালিক জব্বার বলেন, মোটা চাল দিয়ে সাহায্য (ত্রাণ) দেওয়ায় এখন বাজারের মোটা চালের সংকট তৈরি হয়েছে, পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বেশি দাম রাখছেন পাইকাররা।

এ বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ও শাপলা রাইসের ম্যানেজার নোমান জানান, কিছু দিন ধরে মোটা চালের সংকট রয়েছে। দামে কম হওয়ায় ত্রাণ বিতরণের জন্য মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে। বাজারে চাহিদার তুলনায় মোটা চালের সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বেড়েছে, সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে। তবে চিকন সব চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে রাজধানীর বাবুবাজার, কদমতলি, কৃষি মার্কেটে মোটা কিংবা চিকন কোন চালের দাম বাড়েনি। এর পরিবর্তে দুই দিন ধরে কিছুটা দাম কমেছে সব ধরনের চালের। তবে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে শুরু হওয়া বন্যা কতদিন থাকে সেটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, চলমান বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলে পরবর্তীতে দাম বাড়তে পারে চালের। এটা ক্ষতির ওপর নির্ভর করছে, কিন্তু এখনই বাড়বে না চালের বাজার।

এ বিষয়ে বাবুবাজার ও কদমতলি বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, এখন কেন চালের দাম বাড়বে? এখন দাম বাড়ার পরিবেশ হয়নি বরং দাম কমেছে। কয়েকদিন ধরে সব ধরনের চালে এক টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। মোটা চালের চাহিদা কম, তাছাড়া অন্য চালের ক্রেতাও খুব বেশি নেই। তাই দাম বাড়ার প্রশ্নই ওঠে না।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে এখন চাল সংগ্রহ হচ্ছে, তাই মোটা চালের সংকট কিছুটা তৈরি হয়েছে। তবে বাজারে যে চাল মজুত আছে সে তুলনায় ক্রেতা নেই। বাজারে ক্রেতা নেই তাহলে কেন দাম বাড়বে? যারা দাম বাড়াচ্ছেন তারা কেন চালের দাম বাড়াচ্ছেন জানি না।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের মজুত দেখে বোঝা যায় আগামী এক মাসে দাম বাড়বে না চালের বাজারে। বাজারে যে চাল আছে ক্রেতা না থাকায় আরও দাম কমবে। আমাদের চিন্তার বিষয় এখন চলমান বন্যা নিয়ে। দেখতে হবে এটা কতদিন থাকে, কী পরিস্থিতি হয় ফসলের। যদি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয় তবে বাজারের পরিবেশ আগামীতে কী হবে তা বলতে পারব না।

সর্বশেষ