১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
বাউফলে বজ্রপাতে শ্রেণি কক্ষে সংজ্ঞা হারিয়ে হাসপাতালে দুই শিক্ষার্থী চরফ্যাশনে বিদ্যুৎস্পৃ*ষ্টে প্রাণ গেল শিশুর দশমিনায় মোবাইল না দিয়ে মায়ের বকাঝকা, এসএসসি পাস শিক্ষার্থীর আ*ত্মহ*ত্যা দুমকিতে কাওসার আমিনের উঠােন বৈঠকে হাজার হাজার জনতার ঢল গলাচিপা উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকবেন হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ স্বর্ণের দাম আরও বাড়ল ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস, হুঁশিয়ারি সংকেত সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় এমপি পঙ্কজ, হিজলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর অভিযোগ শেবাচিমের সব সংকট কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ শুরু করেছে : স্বাস্থ্য সচিব

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সাদা ফুলে ছেয়ে গেছে সজিনার গাছ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

আল হেলাল চৌধুরী, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) থেকে;

সজনে একটি আমিষ জাতীয় সবজি এর বৈজ্ঞানিক নাম (Moringa oleifera), সজিনা প্রাচীনকাল থেকে গ্রাম বাংলার পাশাপাশি শহরে মানুষের কাছে অতি পরিচিত সুস্বাদু সবজি। দিন দিন এর চাহিদাও বাড়ায় কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন। মৌসুমের শুরুতে যখন সজিনা বাজারে আছে তখন দাম থাকে খুব বেশি। সজনে গাছ সব স্থানে লাগানো যায় যেমন, রাস্তার পাশ, জমির আইল, পুকুর ডোবার ও বাড়ির আশেপাশে পতিত জায়গা এবং কি সব ধরনের মাটিতে এর চাষ করানো যায়। সজনে পুষ্টিকর খাদ্য হওয়ায় এটি অর্থকরী ফসল ও বলা হয়। এটি শুধু সুস্বাদু নয় এর পাতা , ফল, ছাল থেকে বিভিন্ন ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বসন্তের শুরুতে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সজনে গাছগুলো সাদা ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। ফুলের পরিমাণ এতো বেশি যে কিছু গাছের পাতা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। সাধারণত মাঘ মাসের শেষ দিকে এবং ফাল্গুনের শুরুতে ফোটে সজিনার ফুল। চৈত্রের শুরুতে কচি সজিনার ডাটা খাওয়ার উপযোগী হলেও আষাঢ় মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। তবে কিছু সজিনা বার মাস পাওয়া যায়। সজিনার ডাটা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ও রোগ প্রতিরোধক হওয়ায় বাজারে সজিনার ব্যপক চাহিদা দেশে জুড়ে। এবার গাছে গাছে যে পরিমান ফুল এসেছে তাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব।

ফুলবাড়ী উপজেলার রাজরামপুর গ্রামের দিপালী রানী মহন্ত বলেন, সাজনা গাছের থেকে আমরা ডাল সংগ্রহ করে সেই ডাল রোপণ করলে সেখান থেকে নতুন সাজনা গাছ হয়ে ওঠে। গাছের থেকে যে ফসল আসে তা আমরা বাড়িতে খাই, আত্মীয় স্বজনকে দেই এবং বিক্রি করেও লাভবান হই। স্কুল ছাত্র শিহান বলেন, আমার মা যখন সজনা রান্না করে তখন আমার খুব ভালো লাগে। এটা খেতে খুবই মজাদার। ফুলবাড়ী আল হুদা বালিকা কওমি মাদ্রাসা এর ইংরেজি শিক্ষক মোছাঃ মাহফুজা মাহি বলেন, প্রথমত একটা ডাল দিয়েই আমরা একটি সজনে গাছ লাগাই, ডাল থেকেই এ গাছের জন্ম। এর পর আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এখান থেকে যে ডাটা হয় তা আমরা নিজেরা বাসায় খাই এবং বাজারে বিক্রি করেও লাভবান হই। শুধু সজনে ডাঁটা নয়, এর পাতার অনেক উপকার আছে। আমাদের রংপুর বিভাগের ঐতিহ্যবাহী খাবার প্যালকা এবং শোলকা এই সজনা গাছের পাতা থেকেই তৈরি হয়।

ফুলবাড়ী নর্থ পয়েন্ট আইডিয়াল স্কুল এর গণিত শিক্ষক মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, সজনা খুব পুষ্টিকর একটি সবজি। এর অনেক ঔষধি গুণ আছে। এর পাতাটা আমরা সবজি হিসেবে খাই, ভর্তা খাই আর নিজে খাওয়ার পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনকে তো দেই তারপরও বিক্রি করে আমরা বাড়তি আয় করি। আপনারাও সজনা চাষে এগিয়ে আসুন, পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয়ের পথ সৃষ্টি করুন। ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, সজনা একটি অবহেলিত গাছ কিন্তু এখান থেকে অর্থকরী ফসলও আসে। এই তরকারিটা আমাদের ঐতিহ্যবাহী। অবহেলা অযত্নে যেখানে-সেখানে এর ডাল লাগালেই এখানে প্রচুর পরিমাণে সাজনা আসে এবং সেখান থেকে মানুষ এটি তরকারি হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করেও উপকৃত হয়।

ফুলবাড়ী ছিদ্দীকিয়া হোমিও হল এর স্বত্বাধিকারী ডাক্তার সোলায়মান মন্ডল বলেন, সাজনা খুব সুন্দর, সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি খাবার। এর পাতাও অত্যন্ত উপকারী। এটি পিত্তথলি, বাত ব্যথা, চিকন জর, শরীরের ব্যথা সহ অনেক রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে। যদি কেউ চিকন জ্বর, পাতলা পায়খানা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বুকে ব্যথা অনুভব করে বিশেষ করে ডানদিকের ব্যথা সে ক্ষেত্রে সজিনা পাতার রস করে বা সেদ্ধ করে বা তরকারিতে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এটি এজমা এবং হাঁপানিতেও কাজ করে তাই সব মিলে এদিকে ঔষধি গাছও বলা যেতে পারে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বাড়ির আশেপাশে বা সংকীর্ণ জায়গায় আমরা যদি সাজনা গাছ উৎপাদন করতে পারি তাহলে আমাদের বাড়ির তরকারির চাহিদা পূর্ণ হবে পাশাপাশি আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার জানান, বর্তমান সরকারের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নিরাপদ খাবার এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় নির্দেশনা দিয়েছেন এবং তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন, তারই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য উপজেলা এবং সারা দেশের মতো আমাদের ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় এই সজিনার আবাদ হচ্ছে। বছরব্যাপী এবং মৌসুমী এই দুই ধরনের সজিনা আবাদ হয়ে থাকে। মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এ সময় বাজারে সজিনা বেশি পাওয়া যায়। এটি একটি উচ্চমূল্যের ফসল, এটি চাষাবাদের উপর আমরা গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলে থাকি কারণ এটির খুব কম যত্নের প্রয়োজন হয়। এই ফসলটি চাষাবাদের জন্য খুব কম যত্নের প্রয়োজন হয় এবং অল্প যত্নে অনেক লাভবান হওয়া যায়। এটির বাজার মূল্য অনেক বেশি, এটি যদি কোন কৃষক চাষাবাদ করেন তিনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। এটির গুনাগুনের কথা যেটি না বললেই নয়। সজিনা কে বলা হয় পুষ্টির ডিনামাইট, পাতা থেকে শুরু করে ফল এর প্রত্যেকটি অংশ ব্যবহার করা যায়। মানব স্বাস্থ্যের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সজিনার পাতাতে লেবুর থেকে প্রায় ৭ গুণ ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়াও আমিষ, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। সব পুষ্টিগুণ এখানে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে, এজন্য আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফুলবাড়ি থেকে পরামর্শ দিচ্ছি বা কৃষক ভাইদেরকে বলছি যদি বাণিজ্যিকভাবে কেউ সজিনা চাষ করতে আগ্রহী হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদের পরামর্শ নিয়ে আপনারা চাষবাস করতে পারবেন এবং এই চাষাবাদের জন্য যে ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন কৃষি অফিস থেকে করা হবে।

সর্বশেষ