১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

দৌলতখানে নিজের ওজনের দ্বিগুণ টিউমার নিয়ে কাটছে কাওছারের দুর্বিষহ জীবন

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

অনলাইন ডেস্ক :: ভোলার দৌলতখান উপজেলার ৯ নম্বর ভবানীপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাওছার। শিশু কাওছার পেটে ছয়টি টিউমারের ওজন নিয়ে হাঁটাচলা করতে পারছে না। শেষ কবে রাতে ভাল ঘুমিয়েছে তাও মনে নেই। পেটের যন্ত্রণায় রাতে ঘুম হয় না। নিজের ওজনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ টিউমার নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে ১২ বছরের শিশু কাওছার। ইতোমধ্যে সাহায্যের টাকায় চারটি টিউমারের অস্ত্রোপচার করে অপসারণ করতে পারলেও রয়ে গেছে আরও দুটি। দিন যত যাচ্ছে, টিউমার তত বড় হচ্ছে। খুব বেশিদিন অপেক্ষা করলে টিউমার ফেটে কাওছার মারা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকগণ। এজন্য বড় ভাইকে সঙ্গে নিয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছে কাওছার।

কাওছার তার বড় ভাইকে নিয়ে দুদিন আগে বরিশালে এসেছে। এর আগে গেল বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত বরিশালে ছিল তারা। এক বছর পর চলতি বছরের ১ মার্চ আবারও বরিশালে এসেছে। সরকারি অফিস, আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জনসমাবেশ দেখলেই ছুটে যাচ্ছে সেখানে। অনুনয়-বিনয় করে পাঁচ-দশ টাকা সাহায্য নিচ্ছে। সেই টাকা জমা দেয় নগরীর ফলপট্টি’র ভোলা বোর্ডিং-এর ম্যানেজার সোহেলের কাছে। বরিশালে এলেই তারা এই বোর্ডিংয়ের ১১ নম্বর কক্ষে থাকে। দুটি বিছানার ঘিঞ্জি পরিবেশে বিশ্রামের সুযোগ পায়। এ নিয়ে অবশ্য কোনো অভিযোগ নেই তাদের। দিনে খাওয়ার জন্য দেড়শ টাকা দিতে হয়। বাকি টাকা নিয়ে আবার ৪-৫ দিন পর ফিরে যাবে নিজ বাড়িতে। সেখান থেকে আবার অন্য কোনো জায়গায় যাবে সাহায্য তুলতে।

এভাবেই টিউমারের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে কাওছার। মাঝে মাঝে মন চায় মরে যেতে। আবার বাঁচতেও মন চায়। জীবনে কখনো খেলাধুলার মাঠে ইচ্ছেমতো একটি দৌঁড়ও দিতে পারেনি সে। আবার বসতে পারেনি পড়ার টেবিলে। বিড়বিড় করে কাওছার বলে, মানুষের সাহায্যের টাকায় দুইডা কাটছি। ‘মন চায় মইর‌্যা যাই। কিন্তু বাঁচতেতো মোরও মন চায়।’ এই ১২ বছরের জীবনের শুরুটা স্বাভাবিকই ছিল। ২-৩ বছর বয়সে বাবা বশিরের কোলে চড়ে নদীতে মাছ ধরতে যেত। কিন্তু হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে যায়। কাওছার জানায়, ‘৪-৫ বছর আগে আব্বায় গেছিল গাঙে। তুফান উঠছে। ডুইব্বা (ডুবে) মরছে। আর ফেরে নাই। হুনছি লাশ পাইছিল। মায় মোরে দেহায় নাই। হুনছি আব্বায় মইরা পইচ্চা (পঁচে) গ্যাছে।’ কাওছার আরও বলে, ‘আব্বায় বাঁইচ্যা থাকলে মোর এত কষ্ট লাগত না। এতদিনে টাহা (টাকা) জোগাড় করত। মোর কষ্টডা শ্যাষ হইত। এহন মায় একলা কেমনে কী করবে?’

কাওছারের বড় ভাই নাজেম জানান, এর আগে কাওছারকে পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছে। বাকি টাকা জোগাড় হলে আবারও ঢাকায় নিয়ে যাবে অস্ত্রোপচার করাতে। ‘এবার দ্রুত যেতে বলেছে ডাক্তার। নাহলে পেট ফাইট্টা মরবে কাওছার।’ নাজেম আরও বলেন, ছোটবেলা থেকেই কাওছার মাঝে মাঝে পেট ব্যথা বলে কান্নাকাটি করত। ৫-৬ বছর আগে হঠাৎ পেট বড় হয়ে যায়। ডাক্তার জানায়, পেটের মধ্যে অনেকগুলো টিউমার আছে। এরপর দিনে দিনে আরও বড় হতে থাকে পেট। পেট থেকে পর্যায়ক্রমে চারটি টিউমার অপারেশন করা হলেও সঙ্কট বাড়ছে প্রতিদিন। যেহেতু টিউমার খুব বড় হয়ে গেছে, সেহেতু যেকোনো সময় ফেটে মারা যেতে পারে কাওছার।

কিন্তু টাকা এখনো সংগ্রহ হয়নি। কাওছার বলে, ‘ডাক্তারে কইছে শ্যাষ অপারেশন করতে ৪ লাখ টাহা লাগবে। এত টাহা মোরা কোথায় পামু? মুই কী বিপদে আছি । মাইনষের ধারে (কাছে) গ্যালে দুই টাহা, পাঁচ টাহা দেয়। কেউ বড় সাহায্য দেয় না।’ সুস্থ হয়ে মাকে নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে চায় কাওছার। তার অসুস্থতার জন্য মা লাইজু বেগম দিনের অধিকাংশ সময়ই কান্না করেন বলে জানায় কাওছার।

ভবানীপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, কাওছারের পরিবারটি অত্যন্ত গরিব। কাওছারের বাবা বশির মারা যাওয়ার পর দুর্দশা আরও বেড়েছে। এই অবস্থায় কাওছারের চিকিৎসা খরচ বহন করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব না। আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিয়েছিলাম। কার্ডের ভাতা এখনো পাওয়া শুরু করেনি। ওদের নিজেদের মুঠোফোন নেই। কাওছারকে বাঁচাতে এগিয়ে আসার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান সবার কাছে অনুরোধ করেছেন।

সর্বশেষ