১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

পটুয়াখালী ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান সিকদারের ত্রাস!

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

শামীম আহমেদ :: জুলুম-অত্যাচার, মারধর-নির্যাতন, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী, ছিনতাই-ডাকাতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান শিকদারের বিরুদ্ধে এবং মিথ্যা তথ্য প্রচারের প্রতিবাদে নিজ এলাকা ছেড়ে বিভাগীয় শহর বরিশালে সংবাদ সম্মেলন করেছে একধিকবার নির্যাতিত এক ভূক্তভোগী পরিবার।

আজ শুক্রবার (১৭ জুলাই ) দুপুর ১২ টার দিকে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভূক্তভোগী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মোঃ ফজলুল হক খান।

মোঃ ফজলুল হক খান তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার একমাত্র ছেলে মো: শামীম খানের কাছ থেকে তার তৈল-মসলা গুড়া করার মিল ও বালু সিমেন্টের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বিল্ডিং করার নামে বাকিতে ১০ লাখ টাকার মালামাল ও বিভিন্ন সময়ে ধার বাবদ নগদ টাকা হাতিয়ে নেন পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান শিকদার। বার বার বাকি ও ধারের টাকা চাইতে গেলে হাসান শিকদার ও তার সহযোগী সন্ত্রাসী বাহিনী আমার ছেলেকে হত্যার হুমকী দেয়। সর্বশেষ টাকা চাইতে গেলে চলতি বছরের গত ২৯ জানুয়ারী রাত ১০ টা ৪০ মিনিটের দিকে আমার ছেলের মিলের মধ্যে বসতঘরে হাসান শিকদারের নেতৃত্বে জাহিদ, আবুল বাশার আরজু, শাকিল, বশির ও খোকাসহ বেশ কয়েকজন পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ডাকাতি করার উদ্দ্যেশে আসে। এরপর জোড় করে সিসিটিভির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে একটি হার্ডডিক্স, একটি টিভিএস (আরটিআর-১৬০ সিসি) মডেলের মটরসাইকেল, দুইটি ব্লাঙ্ক চেক, আমার পূত্রবধূ ( শামীমের স্ত্রী ) নয় ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার, আলমিরার ড্রয়ার ভেঙ্গে নগদ একলাখ ৬৮ হাজার নিয়ে যায়। যার ফুটেজ আরেকটি গোপন সিটিটিভির হার্ডডিক্সে ধারণ করা রয়েছে।

আরো বলেন, এরপর ডাকাতির ঘটনায় স্থানীয় পটুয়াখালী সদর থানায় ভূক্তভোগী শামিম খান মামলা করতে গেলে পুলিশ নানা তালবাহানা করে কয়েকমাস অতিবাহিত করার পর ডাকাতির ঘটনা আড়াল করে শুধু চেক উদ্ধারের জন্য শামীমকে একটি মামলা দায়ের করতে বলেন পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার মোর্শেদ।

এছাড়াও চলতি বছরের ৫ ফেব্রয়ারী হাসান শিকদার আমার ছেলে কে ফের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ওই চেকের ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি ও জোড় করে পটুয়াখালী সদর রেজ্রিস্ট্রি অফিসে নিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে একটি দলিল করে নেয়। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারী আমার ছেলেকে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একা পেয়ে বেদরক মারধর করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয় এবং জোড় করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে হাসান শিকদার। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আমার (ফজলুল হক খান) গোটা পরিবারকে মারধর এবং হুমকি-দামকী দিয়ে আসছে।

বর্তমানে হাসান শিকদারের আপন বড়ভাই আব্দুর রব শিকদারের নামে একটি ভূয়া ভাড়াটিয়া চূক্তিপত্র তৈরি করে আমার ছেলের ভাড়াটিয়া দাবী করে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জোড় করে দখল আছে। এসব ঘটনা উল্লে­খ করে হাসান শিকদারসহ তার সহযোগদের বিরুদ্ধের বাদী হয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করে আমার ছেলে শামীম খান ।

এরপর বিজ্ঞ আদালত হাসান শিকদার ও তাঁর সন্ত্রাসী ডাকাত বাহিনীর বিরুদ্ধে ৩৯৫ ধারায় ডাকাতি মামলার এজাহার গ্রহণপূর্বক পাচঁদিনের মধ্যে বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করতে পটুয়াখালী সদর থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে চলতি মাসের ১৬ জুলাই পর্যন্ত পটুয়াখালী বিজ্ঞ আদালতে আমার ছেলে শামীম খান এবং এতিম নাবালক দুটি ছেলে এবং ঐ নাবালক লালন-পালনকারী তাদের বোন জামাই যুবলীগ কর্মী মো: বাকিবিল্লাহ শিকদারকে আসামী করে চারদিনে চারটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে অভিযুক্ত পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান শিকদারের আপন বড়ভাই ও তার বাহিনীরা।

এছাড়া ভূক্তভোগী ফজলুল হক খান তাঁর লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান শিকদারের বিরুদ্ধে বিগত ১০ বছরে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০ টি মামলা রয়েছে। হত্যা মামলা জি আর ৩২৭/১১ এছাড়াও ,দ্রুত বিচার ২০২ /১৩,১০৬/১৬ মামলার আসামী বলে ঊলে­খ্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনের পর পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান শিকদারের (০১৭২৩ ২৮৪০১০ ) নাম্বারের যোগাযোগ করা হলে মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে অপর একটি সূত্র জনায় ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান সিকদার বাউফলের বাসিন্দা বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিয়তে গ্রেনেড হামলায় আহত ও জোবাইদুল হক রাসেলের ছত্রছায়ায় থেকে হাসান সিকদার একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার পরও রহস্য জনকভাবে পুলিশ সুপার, ওসি কোন আইনগত ব্যবস্থ গ্রহন করতে সাহস পাচ্ছে না। এমনকি এই এলাকার সংসদ সদস্য এ্যাড. শাজাহান মিয়া একাধিকবার হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করার নির্দেশ প্রদানের পরও পুলিশ সঠিক দায়ীত্ব পালন করা থেকে সব সময়ে এড়িয়ে চলার কারনেই একটি ভূক্তভোগী পুলিশ পরিবারসহ যুবলীগ সদস্য বাকিবিল্ল­াহ জীবন নাশের হুমকির মুখে চলাচল করছে।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী সদর সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী এ্যাড. শাজাহান মিয়ার সাথে মুঠো ফোনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি যা বলার প্রশাসনকে বলেছি। তাছাড়া আমার এখন অনেক বয়স হয়েছে। আগের মত জোর করে কিছু বলতে পারি না। এ ব্যাপারে আপনি এসপি’র সাথে কথা বলে দেখেন।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার মোর্শেদ জানান, পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান শিকদারের বিরুদ্ধে শামীম খান বাদী হয়ে যে ডাকাতি মামলা দায়ের করেছেন তা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ভিকটিম শামীম খান ও তার স্ত্রী নার্গিস, ফজলুল হক খানের চাচাতো ভাই, আনোয়ার হোসেন ও বাকি বিল্লাহ।

সর্বশেষ