২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পটুয়াখালী ৪ আসনে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দুই ভাই

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

পটুয়াখালী প্রতিনিধি ::: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও তার ভাই।

দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে তিনবারের এমপি ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার ও তারই আপন ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কলাপাড়ার ইউএনও ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো.জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তারা। এর আগে তারা দুজনেই চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় বর্তমান সংসদ সদস্য মহিববুর রহমানকে। এরপরই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন মাহবুব ও তার ভাই হাবিব।

এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুর রহমান বলেন, ‌আমার বড় ভাই মাহবুবুর রহমান তালুকদার কিছু লোকের প্ররোচনায় প্রার্থী হয়েছেন। আমি মনে করি, এটা তার ভুল সিদ্ধান্ত। তিনি তিনবার এমপি ছিলেন, আমি তাকে বিভিন্নভাবে সমর্থন করেছি। আমার সমর্থন না পেলে এতদূর এগোতে পারতেন না তিনি। এবার আমি আশা করছিলাম, যেহেতু তার শারীরিক অবস্থা ভালো না, তাই তিনি আমাকে সমর্থন করবেন। কিন্তু তিনি কিছু সুবিধাবাদী লোকের প্ররোচনায় প্রার্থী হয়েছেন। এক শ্রেণির লোক আছে, যারা মাহবুবুর রহমান তালুকদার এমপি থাকা অবস্থায় লুটপাট করে খেতে পেরেছে। এসব লোকেরাই এবারও তাকে প্রার্থী করেছেন। যাতে আবারও লুটপাট করে টাকা-পয়সা কামাতে পারেন। তবে আমি শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব, এক পা পিছু হটবো না।

তবে দুই ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে এলাকা জুড়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দুই ভাইয়ের কাড়াকাড়িতে ক্ষুণ্ন হচ্ছে দলের ইমেজ।

তিনবারের এমপি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে করেছেন সম্পদের পাহাড় ফলে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) রয়েছে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা। এছাড়া কলাপাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদ ও মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের অর্থ আত্মসাতের মামলার তদন্ত দুদকে চলমান রয়েছে। ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তৈরি করেছিলেন নিজস্ব পেটুয়া বাহিনী। যাদের বিরুদ্ধে ভূমি দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া দলীয় কর্মীদের সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ করেও একাধিকবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন সাবেক এই এমপি।

অনেকে আবার বলছেন, দীর্ঘ ৫২ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিলিয়ে দিয়ে ক্ষমতার লোভে নৌকা প্রতীক নিয়ে টানা তিনবার এমপি ও প্রতিমন্ত্রী হওয়া মাহবুবুর রহমান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। যা দলের জন্য কলঙ্কজনক।

তবে এই আসনের সাধারন ভোটাররা বলছেন, ১৯৭০ সাল থেকে (পাকিস্তান আমল) এই আসন আওয়ামী লীগের দখলে ও দলটির শক্ত ঘাঁটি। এই এলাকার জনগণ বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নৌকাকে ভালোবাসে। সেই সঙ্গে এই এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজিরবিহীন উন্নয়নে মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। তাই ৭ জানুয়ারি নৌকায় ভোট দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তারা। কে স্বতন্ত্র প্রার্থী, কে বিদ্রোহী প্রার্থী- সাধারণ ভোটারের কাছে সেটা বিবেচ্য নয়। তারা নৌকায় ভোট দেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন।

কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব তালুকদার বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। যেখানে জাতীয় পার্টি ও জাসদ নির্বাচন করছে সেখানে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী দলের জন্য বিপদজনক। যেটি আমরা কোনোভাবেই মানতে পারি না।

রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান মামুনের ভাষ্য, বিদ্রোহীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নেই। দল শক্ত অবস্থানে আছে। নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকের পক্ষে কাজ করবে না কেউ।

দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন ১১৪ পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলা এবং মহিপুর থানা) আসন।

এ আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাতজন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীই তিনজন। মাহবুব-হাবিব দুই ভাই ছাড়াও অন্য বিদ্রোহী প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম লিটন।

অন্যদিকে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মহিববুর রহমান। পাশাপাশি রয়েছেন জাতীয় পার্টি, জাসদ ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থীও।

সর্বশেষ