২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ভোলায় বজ্রপাতে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত-২ বরিশালে ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার চরকাউয়ায় যুবলীগ নেতা খান মামুনের গণসংযোগ বাংলাদেশে বর্তমানে ভারতের তাবেদার সরকার শাসন করছে : বরিশালে ভিপি নুর বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ, ইমামের কক্ষে আগুন উজিরপুরে ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার কাউখালীতে পাটি খাতে রূপালী ব্যাংকের ক্লাস্টার ভিত্তিক ঋণ বিতরণ বিআরডিবি'র কার্যক্রম পরিদর্শনে সচিববৃন্দ মনপুরায়, কিশোরীদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ ও উঠান বৈঠক বরিশালে ‘সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শহর রক্ষা বাধ দখলের মহোৎসব উজিরপুরে মাদকসহ জেলা ডিবি'র খাচায় ১ মাদক কারবারী আটক

পর্নো আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

পৃথিবীতে বর্তমানে অনেকগুলো ভয়ঙ্কর নেশার মাঝে অন্যতম হলো নিয়মিত/অনিয়মিত পর্নোগ্রাফি দেখা। নীলছবির দুনিয়া একবারের জন্যও টেনে নেয়নি মানুষকে, এমন ঘটনাই বলতে গেলে খুব কম আছে। বুঝতে সবারই অনেক দেরি হয়ে যায় যে, এটা আমাদের সমাজের প্রতিটা মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা প্রত্যেকেই জীবনের কখনো না কখনো এই পথে পা বাড়িয়েছি কিংবা অন্য কারো মুখে এটা নিয়ে শুনেছি। আশা করি এর ভয়াল থাবা থেকে বেঁচে আসার জন্য আমি কিছু সায়েন্টিফিক ব্যাখা দিতে পারবো।

পর্নোগ্রাফি আমাদের সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজে বেড়ানো টপিকগুলোর মাঝে ২৫ পার্সেন্ট জায়গা দখল করে নিয়েছে। আমাদের চাওয়া পাওয়ার উপর ভিত্তি করে যারা পর্নো ব্যাবসায়ের সাথে জড়িত, তারাও একে পরিবর্তিত করে যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে। আমাদের ব্রেইনের সুপার স্টিমুলাস হিসেবে কাজ করে এই এডিকশনটি। কিছু নিউরোট্রান্সমিটার আছে যারা এই খারাপ নেশাটার জন্য দায়ী।

ডোপামিন হলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার, যা পর্ণ দেখার সময় প্রচুর পরিমানে আপনার ব্রেইনে নির্গত হতে থাকে। এটা ব্যাক্তির মাঝে একধরনের ভালোলাগার অনুভূতি নিয়ে আসে। তাছাড়া সেরটনিন কাজ করে, যেটা আমাদের মুডকে ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে, এটা একধনের প্রতিষেধক এবং মেজাজ স্থিরকারী। তাছাড়া অক্সিটোসিন ক্ষরিত হয়, একে বলা হয় কুডল / সংযুক্তি হরমোন, এটা ব্যাক্তিকে পর্নো দেখার সময় মনে করায় সে কোন সঙ্গীর সাথে আছে।

ব্রেইনে যখন ডোপামিনের বন্যা শুরু হয়, মানুষ তার দুঃখবোধগুলো/খারাপ স্মৃতিগুলো একেবারেই ভুলে যায়, ভালো ভালো স্মৃতিগুলো তার মনে পড়তে থাকে একে একে। একটা কৃত্রিম আবহাওয়া তৈরি করে এই ডোপামিন মানুষের শরীরে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের শরীরের ভেতরেই নেশা এনে দিতে পারে এমন দ্রব্য দেয়া আছে, মানুষ চাইলেই ডোপামিনের ক্ষরণে চলে যায় তার চিন্তাভাবনার জগৎ থেকে অনেকটা দূরে।

ডোপামিনকে তাই মাঝে মাঝে কোকেইনের সাথে তুলনা করা হয়। কারণ ব্রেইনের স্ক্যান করে দেখা গেছে যে, কোকেইন এডিক্টেড একজন ব্যক্তির ব্রেইনে যেমন ছবি পাওয়া যায়, ডোপামিন এডিক্টেড ব্যক্তিরও একইরকম স্ক্যান (ব্রেইনের সাইজ, শেইপ) পাওয়া যায়। তাই পর্নোগ্রাফির নেশাটা অনেকটা নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির কোকেইন (নেশাদ্রব্য) নেয়ার মতোই।

অক্সিটোসিন গর্ভবতী মায়ের শরীরে প্রচুর পরিমানে ক্ষরণ হয়। বাচ্চা জন্মাবার পর বাচ্চার সাথে একটা সম্পর্ক তৈরিতে অক্সিটোসিন কাজ করে থাকে। মানুষ যখন নরমাল সেক্সুয়াল একটিভিটিতে থাকে, তখন তার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে সাহায্য করে এই হরমোন, তখনও প্রচুর হরমোনটা নিসৃত হয়। আবার, অক্সিটোসিন আরো বেশি বেশি ডোপামিনকে ক্ষরণ করতে সাহায্য করে থাকে।

অতিরিক্ত পরিমানে এই নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরিত হওয়ার কারণে এর একটিভ সাইটগুলো কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায়। ফলে, ডোপামিনের রিলিজ হওয়া ও কাজ করার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। তাই, পর্নো এডিক্টরা আগে যে নীলছবি দেখে নিজেদের ব্রেইনকে সন্তুষ্ট করতে পারতো, সেটা আর আগের মতো পারে না। তখন সে আরো ভয়ানক কিছুর দিকে পা বাড়ানোর চেষ্টা করে, যাতে তার ডোপামিন লেভেলটা বাড়তে পারে। একে আমরা ডোপামিন টলারেন্স বলে থাকি।

ডোপামিন রিলিজের উচ্চ স্তরে আমাদের ব্রেইনের মাঝে ধ্বংসাত্মক প্রভাব নিয়ে আসতে পারে। আমাদের ব্রেইনের সামনের অংশ প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স এ ক্ষতিটা মূলত হতে পারে। এতে ব্যক্তির চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন হয়, যার কারনে বিকলাঙ্গ চিন্তাভাবনা (Perverted Thinking) জন্মাতে পারে। ব্রেইনের সামনের অংশটা মানুষের চিন্তাভাবনা, ডিসিশন নেবার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রেইনের এই অংশ মানুষকে বলে- ‘এটা করো না, খারাপ কাজ, তোমার ক্ষতির সম্ভাবনা আছে।’ কিন্তু, এই জায়গাটায় ওলট পালট হলে মানুষ সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারে না।

ডোপামিনের বন্যা ব্রেইনের একস্থান থেকে অন্যস্থানে তথ্য পরিবহনের ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু ব্রেইনের নিউরোপ্লাসটিসিটির ক্ষমতা আছে, নিউরণগুলো তাদের গতিপথ সবসময় পরিবর্তন করছে। তাই এই নিউরণগুলোকে আবার স্বাভাবিক করে ফেলতে আমাদের ব্রেইন সক্ষম বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন। আগামী দশ বছর পর হয়তো আমাদের ব্রেইন স্ক্যানিং করার ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে, একটা স্ক্যান দেখেই হয়তো নিউরোলজিস্ট/সায়েন্টিস্টরা বলতে পারবে ব্রেইনের কোন জায়গা ডেপেলপড আর কোন জায়গা ডেভেলপড না, একটা মানুষ কি হ্যাপি নাকি ডিপ্রেশনে আছে, মানুষটা কি ভাবছে কিংবা তার চিন্তাধারা কেমন।

স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, সঠিক ডায়েট, পর্যাপ্ত ঘুম, পরামর্শ -এই ভয়াবহ সমস্যাটাকে কাটিয়ে উঠতে অনেকটা সাহায্য করবে বলে ধারণা করা হয়। নিজেরা জানি, সচেতন হই, অন্যকে সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহিত করি। এভাবেই আমাদের সবার প্রচেষ্টায় গড়ে উঠবে একটা সুস্থ ও সুন্দর মনের সমাজ।

অনলাইন ডেস্ক:

সর্বশেষ