১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সেই বিতর্কিত পিও বরিশালের “হাদিস মীর” বরখাস্ত

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

শাকিব বিপ্লব॥
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হাদিস মীরকে অবশেষে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ মোবাশ্বেরুল ইসলাম স্বাক্ষরীত এক পরিপত্রে এই আদেশ কার্যকর করা হয়েছে। তবে কাগজ কলমে গত ১জুন থেকে এই অব্যহতির মেয়াদ কাল ধার্য দেখানো হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের প্রেস রিলিজে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

এই অব্যহতির মধ্যে দিয়ে বহুল বির্তকের নায়ক যুবক হাদিস মীরের ক্ষমতার পতন ঘটলো। অব্যহতির খবরে খোদ প্রতিমন্ত্রীর নিজ ঘরে কোনঠাসা হয়ে থাকা অনুসারিদের একটি বৃহৎ অংশ আনন্দে আন্দোলিত হয়ে বরিশাল মিডিয়াকে ফের হাদিস মীরকে নিয়ে জাগ্রত করেছে।
বলা বাহুল্য যে, রাজনীতিতে জড়িত না থেকেও হঠাৎ করে বরিশাল অঙ্গনে হাদিস মীরের ক্ষমতা এবং তা অপব্যবহারে অল্প দিনেই বির্তকিত হয়ে আলোচনায় আসেন। কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের দ্বায়ীত্ব পাওয়ার পর এই যুবককে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় তিনি শূন্য থেকে অসীম ক্ষমতা প্রদর্শন শুরু করেন। বিভিন্ন ব্যক্তিকে চাকুরি দেয়া ও একজন শিল্পপতিকে জাতীয় সংসদের মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার প্রলভন দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ সহ সর্বশেষ নিজ গ্রামে ভূমি দস্যুতায় থানা পুলিশ ব্যবহারে বির্তকের জন্ম দিয়ে সম্প্রতি পত্রিকায় খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন। সেই সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভূমি দস্যুতায় একটি পরিবারকে পুলিশ দিয়ে হয়রানীর বিষয়াদি নিয়ে প্রকাশিত খবর ভাইরাল হয়ে যায়। হাদিস মীরের এই অপকর্মের সহয়তা করে সমালোচিত হয় কাউনিয়া থানা পুলিশ, বির্তকের মুখে পরেন স্বয়ং প্রতিমন্ত্রী।
ধারনা করা হচ্ছে, সেই বির্তকের অবসান টানতেই প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম তাকে অব্যহতির সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে এই সংক্রন্তে কার্যকরের আদেশ দেন। সোমবার সকাল থেকে এ খবর গুঞ্জণ আকারে বরিশালে ডালপালা মেলছিল। পরন্ত বিকালে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রেসরিলিজ স্থানীয় মিডিয়ায় আসলে বিষটি নিশ্চিত হয়। এবং এ খবর দ্রুত বরিশাল শহর সহ তার নিজ গ্রাম চরবাড়ি ইউনিয়নের সাপানিয়া এলাকায় আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়।
জাহিদ ফারুক শামীমের একাধীক ঘনিষ্ট জন এই বরিশাল বাণীকে জানান, তাদের নেতা সদর আসনের সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আনাকোড়া এবং অচেনা মুখ হাদিস মীর তার পিছু নিয়ে কৌশলে আস্থা অর্জন করে। এক পর্যায় তাকে সরকারি ভাবে প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) হিসাবে নিয়োগ দেন। এরপর শুরু হয় হাদিস মীরের ক্ষমতার পর্ব। অল্পদিনে স্বল্প ক্ষমতায় নিজেকে নিয়ে যান বরিশাল রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন মহলের একটি অংশে গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি হিসেবে।
অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রীর নিজ ঘরোনায় বিভাজন সৃস্টি করে তার অনেক অনুসারীদের রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। আবার তার অপছন্দের ব্যক্তিদের কোনঠাসা করে রেখেছে। ফলশ্রুতিতে জাহিদ ফারুক শামীমের স্থানীয় রাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টিতে অন্তরায় হয়ে দাড়ায় তার ব্যক্তিগত সহকারির এসব কর্মকান্ড। অন্য দিকে হাসিদ মীর প্রতিমন্ত্রীর পিও হিসাবে অঘাত ক্ষমতধর ও আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে অনুসারী নেতা কর্মীদের একটি অংশকে নিয়ন্ত্রন শুরু করে। পাশাপাশি অনৈতিক ভাবে অর্থ সঞ্চয়ে স্বল্পদিনে ফুলে ফেঁপে উঠেন।

সূত্রের দাবী, নিজ বাড়িতে পাকা ভবন নির্মান করে সোডিয়াম বাতি লাগিয়ে আলোকসজ্জায় নিজের আর্থিক শক্ত অবস্থান গ্রামবাসীকে জানান দেয়।  প্রতিমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে এই সোডিয়াম বাতি তিনি সংগ্রহন করেন। এক পর্যায় নিজ বাড়ির পার্শ্ববর্তি অন্যের একটি জমি জোড়পূর্বক দখল দেন। এক্ষেত্রে কাউনিয়া পুলিশের সহয়তা নেওয়ার অভিযোগ করেন ভূমিদস্যুতার শিকার মোঃ জামাল শরিফ। কাউনিয়া থানা পুলিশের সাথে তার দহরম মহরমে এলাকায় তরুনদের নিয়ে একটি বাহিনীও গড়ে তোলেন এই হাদিস মীর।
ঐ সম্পত্তি নিয়ে জামাল শরিফের দায়েরকৃত একটি মামলায় আদালতের বিচারক স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়ে রায় না হওয়া পযর্ন্ত সেই জায়গা ব্যবহারের উপর ইনজেকশন জারি করেন। কিন্তু হাদিস মীর মন্ত্রীর পিও শক্তির বলে জামাল শরিফ ও তার স্ত্রীকে পিটিয়ে জখম করে সেই সম্পত্তি উপর স্থাপনা নির্মান কাজ শুরু করেন। উপরন্ত আহত জামাল শরিফ দম্পত্তিকে কাউনিয়া পুশিল দ্বারা মামলা দিয়ে হত্যার আসামীর নেয় শেবাচিম হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে আটক করে।
গতমাসের এই ঘটনা মিডিয়ায় পৌছালে খবরের শিরোনাম হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠলে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পরে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম। একই সময় প্রতিমন্ত্রীর নিজ ঘরের অনুসারিদের মধ্যে বিভাজন সৃস্টিতে হাদিস মীরের ভূমিকা পত্র পত্রিকায় উঠে আসে।
প্রতিকূল এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হাদিস মীর কিছু মিডিয়াকে ব্যবহার করে নিজের অনুকূলে সংবাদ প্রকাশ করে ও বিরোধী মনোস্ক সংবাদ কর্মীদের সাহেস্তা করার কৌশল নেয়। এই ঘটনায় বেশী মাত্রায় প্রতিমন্ত্রীকে প্রশ্নের মুখে দাড় করায় হাদিস মীরকে তিনি শক্তির রসদ যোগাচ্ছেন কিনা ? মিডিয়াকর্মী সহ তার অনুসারিদের একটি অংশ এর উত্তর খোঁজার চেষ্টায় এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠে।
বিভিন্ন মহলের ধারনা, সেই বির্তক এড়াতেই পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী তার স্বচ্ছতার দৃস্টান্ত স্থাপনে ব্যক্তিগত সহকারি হাদিস মীরকে অব্যহিত দিতে বাধ্য হয়েছেন। এমনটি ইঙ্গিত দিয়েছেন মন্ত্রীর ঘনিস্ট বেশ কয়েকজন অনুসারিও। সংগত কারনেই এই অব্যহিত খবর সোমবার সন্ধ্যায় বরিশালে রাজনৈতিক অঙ্গন সহ বিভিন্ন মহলে আলোচনার প্রাসঙ্গিক বিষয় হয়ে উঠে।

অবশ্য অব্যহতির কারন এবং এ বিষয়ে হাদিস মীরের প্রতিক্রিয়া কী তা জানা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ