২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পিরোজপুরে নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হলেও পুরো চাল পৌঁছায়নি জেলেদের ঘরে

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

পিরোজপুর প্রতিনিধি ::: নিষেধাজ্ঞার জন্য নির্ধারিত সময় কয়েকদিন আগেই শেষ হয়ে গেলেও সহযোগিতার চাল পুরোটা পৌঁছায়নি পিরোজপুরের বিভিন্ন জেলেদের ঘরে। যা নিয়ে জেলেদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জেলেদের দাবি, চাল না দিয়ে নগদ অর্থের ব্যবস্থা করলে তারা উপকৃত হতো। তবে জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, তারা দেরিতে চাল পাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, দেশের সমুদ্রসীমায় মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে ৬৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর আগে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল। এরই অংশ হিসেবে গত ২০ মে মধ্যরাত থেকে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। অথচ নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণ করার নিয়ম থাকলেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও ভিজিএফ এর চাল এখনো পৌঁছেনি জেলেদের কাছে।

জেলেরা জানিয়েছে, সরকার যে চাল প্রদান করে তা অনেক কম। এর থেকে তাদের নগদ টাকা দিলে, তারা সার্বিক ভাবে পরিবার নিয়ে ভালো থাকবে। চাল না দিয়ে আর্থিক সহযোগিতা দিলে উপকৃত হবেন তারা। এছাড়া ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে নিষেধাজ্ঞা চালানোর বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বসহকারে দেখার দাবি মৎস্যজীবীদের।

এদিকে জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, পিরোজপুর জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ২৭ হাজার ৮০০ জন। যাদের মধ্যে ৬৫ দিনের এই নিষেধাজ্ঞায় চাল পাবে ৫ হাজার ৩৯৩ জন। তবে তাদের দুই ধাপে চাল প্রদান করা হয়। ৪৬৩ মেট্রিক টন ১ম পর্যায়ের যা বিতরণ শেষ এবং ২য় পর্যায়ের চাল বিতরণ চলমান রয়েছে। যেখানে প্রতি জেলে মোট ৮৬ কেজি করে চাল পাবে।

সমুদ্রগামী জেলে রহিম পশারী বলেন, আমাদের ৮৬ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা, অবরোধ তো শেষ হয়ে গেছে। এখনো একাংশ চাল পাইনি। এভাবে চললে আমরা গরীব মানুষ কীভাবে চলবো? মানুষের কাছে প্রচুর ঋণ হয়ে গেছে, হাটবাজারে ঠিকমতো বের হতেও পারি না। অবরোধের চাল যদি তার মধ্যেই না পাওয়া যায় আমরা খাবো কি? আর চাল নিয়ে আজ না কাল দিবো করে ঘুরায়।

আরেক জেলে ইব্রাহিম সরদার বলেন, সরকার থেকে আমাদের জন্য ৬৫ দিনের নিচে থাকে যে চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের বাড়িতে পুরো চাল পৌঁছায়নি এখনো।

মৎস্যজীবী তানজিল হাওলাদার বলেন, এই যে অবরোধের সময় আমাদের করার মতো কোনো কাজই থাকে না। এই সময়টায় আমাদের সংসার কীভাবে চলে? পরিবার নিয়ে কী খাই? তার মধ্যে আমরা চাল সময় মতো পাচ্ছি না। আমরা চাল না দিয়ে যদি টাকা দেয় আমাদের জন্য ভালো হয়। অবরোধ শেষ হয়ে গেলেও যদি চাল পাওয়া না যায় তবে লাভ কী? আমাদের হাতে টাকা পৌঁছালে আমরা অন্যান্য সব দিক মিলিয়ে পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে পারতাম।

আরেক মৎস্যজীবী মো. বেলাল হাওলাদার বলেন, একজনের নাম আরেকজনের কাছে বিক্রি করে। নেতারা ও তাদের চামচারা টাকা ছাড়া তারা কাজই করে না। আমি গিয়া যদি বলি আমি জেলে আমার কার্ড লাগবে তা দেয় না, সরকার যদি চাল না দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা দেয় তাতেও আমাদের ভালো হয়। শুধু চালে তো আর সংসার চলে না অন্যান্য যা লাগে তা কে দিবে? মোবাইলের মাধ্যমে টাকা পৌঁছালে যার টাকা সেই সময় মত পেয়ে যেত।

দক্ষিণ উপকূলীয় মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, অবরোধের সময় থেকেই জেলেরা ধার দেনা করে সংসার চালাচ্ছে। তবে নিষেধাজ্ঞা শেষে এতদিনের অপেক্ষার সুফল সাগরে গিয়ে পাবেন এমনটাই আশা করছেন জেলেরা। তবে নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে গেলেও পুরো চাল পৌঁছায়নি জেলেদের ঘরে। সরকার চাল দেওয়ার পরিবর্তে যদি বিকল্প কিছু করত তাহলে জেলেরা খুশি হতো।

তিনি আরো বলেন, ভারত বাংলাদেশ একসঙ্গে অবরোধ দেয় না। এটা যদি যৌথভাবে করা যায় তাহলে জেলেরা ভাল থাকতো। ভিজিএফ এর চাল যদি জেলেরা সময়মতো পেতো, তাহলে তাদের পরিবারের অভাব অনটন কিছুটা হলেও কমতো।

এ বিষয়ে জানতে আমরা কথা বলেছি পিরোজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল বারীর সঙ্গে। তিনি জানান, আমাদের দ্বিতীয় কিস্তির চালের বরাদ্দটা আমরা একটু দেরিতে পেয়েছি। তাই আমাদের চাল বিতরণ সম্পন্ন হয়নি। তবে আশা করছি এই সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের চাল বিতরণ শেষ হবে।

তিনি আরো বলেন, পিরোজপুর জেলার ৭টি উপজেলায় মোট ২৭ হাজার ৮০০ জেলে আছে। যারা সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে সাগর ও নদী থেকে মাছ ধরায় নিয়োজিত থাকে। তাদের জন্য সরকার ঘোষিত ভিজিএফ এর চাল বিতরণ করা হয়। জেলেদের আর্থিক যে চাহিদা রয়েছে সেটি সরকারের নীতি নির্ধারণের ব্যাপার, এটা সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হলে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব।

সর্বশেষ