১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পুলিশ ক্যাডার থেকে ওসি নিয়োগের সুপারিশ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
অনলাইন ডেস্ক: পুলিশ ক্যাডার থেকে থানায় ওসি নিয়োগ, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে ‘পাস’ নম্বর ৫০ করা, ন্যায়পাল নিয়োগ, আয়কর রিটার্ন সহজ করা, সরকারি কর্মকর্তাদের পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ তুলে ধরেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার কমিশনের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপনের পর এ বিষয়ে সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সুপারিশগুলো তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

থানার ওসি পদে পুলিশ ক্যাডার থেকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ তুলে ধরে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “সব থানায় যে ক্যাডার থেকে দিতে হবে তা বলছি না। ইতোমধ্যে ৩৩ শতাংশ থানায় প্রমোশন পাওয়া থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ক্যাডার অফিসার দিলে আমরা মনে করি মাঠ পর্যায়ের দুর্নীতি অনেকাংশে কমবে।”

তিনি বলেন, “শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিষয় না, আমাদের ধারণা, এতে করে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি ৫০ শতাংশ কমে যাবে। আমরা দেখেছি, সকল ক্যাডারেই যেসব নতুন অফিসাররা আসেন, তারা যথেষ্ট যোগ্য, দক্ষ ও উদ্ভাবনী ধ্যান-ধারণা নিয়ে আসেন। নতুন কর্মকর্তারাই দুর্নীতির গোড়ায় আঘাত আনতে পারবেন।

“সেজন্য আমরা বলছি, সহকারী পুলিশ সুপার অথবা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার কর্মকর্তাদের থানায় পোস্টিং দিতে সরকার আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরা জানি, এরকম সিদ্ধান্ত সরকারের আছে, তা যেন বাস্তবায়ন করা হয়।”

‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র’ অর্জনের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নেই মন্তব্য করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “প্রাইমারি স্কুলের লেখাপড়া যেন ইন্টারেস্টিং হয়। বাচ্চারা যাতে আগ্রহ নিয়ে লেখাপড়া করে।”

সেই সঙ্গে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পরীক্ষার প্রতি বিষয়ে পাস নম্বর ৫০ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে দুদক।

এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “এই সুপারিশে হয়ত সমালোচনা হবে, আমরা চাই সমালোচনা হোক, সেই ব্রিটিশ আমল থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাস মার্ক রয়েছে ৩৩ নম্বর। কিন্তু এর পরিবর্তে আমরা বলেছি পাস মার্ক ৫০ হতে হবে। সরকার এটা নিয়ে বিবেচনা করতে পারে।”

ওই সুপারিশের পক্ষে ইকবাল মাহমুদের যুক্তি, “পাসের যদি চাপ থাকে, তাহলে আমাদের ধারণা, ক্লাস রুমে শিক্ষকরা আরও মনযোগী হবেন, বাচ্চারাও আরও বেশি মনোনিবেশ করবে। এই ৫০ নম্বর পেতে হলে তাদেরকে অনেক কষ্ট করতে হবে। আমরা জানি কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না।”

দুদক চেয়ারম্যান স্বীকার করেন, দেশে মাঠ পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায়েও দুর্নীতি বিদ্যমান। তার ভাষায়, এতে ‘কোনো সন্দেহ নেই’।

“৮০ শতাংশের বেশি কর্মকর্তা মাঠে থাকেন, গ্রামে থাকেন। গ্রামের সঙ্গে উপজেলা, থানার সম্পর্ক রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ২২টির বেশি বিভাগ কাজ করে। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে গেলে সম্মিলিত প্রয়াস লাগে, কো-অর্ডিনেশন লাগে।”

দুর্নীতি প্রতিরোধে সমন্বয়নের জন্য মাঠ পর্যায়ে ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশ করে তিনি বলেন, “আমরা বলছি, উপজেলা পর্যায়ে যেহেতু প্রায় সব বিভাগের ক্লাস-১ এবং ক্যাডার কর্মকর্তা রয়েছেন, ক্যাডার অফিসারের প্রতি আমরা বেশি জোর দিচ্ছি, কারণ তারা সরাসরি নিয়োগ পান। তারা যেহেতু ‘ফ্রেশ ফ্রম দ্যা ইউনিভার্সিটি’, তাদের একটা জোরালো কমিটমেন্ট পাওয়া যায়। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।”

সংবিধানে ন্যায়পালের বিষয়ে বলা থাকলেও গত ৫০ বছরেও তা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন দুদক চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “আমরা বিশ্লেষণ করে বলেছি যে, একজন ন্যায়পাল নিয়োগ করা দরকার। ন্যায়পাল নিয়োগ করা হলে সকল সার্ভিসের বিষয় দেখতে পারবে। তাদের ক্ষমতার পরিধি অনেক বেশি।”

সরকারি কর্মকর্তাদের নবম গ্রেড থেকে সচিব পর্যন্ত পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি দিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে দুদক।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের যে প্রমোশন হবে, তার প্রত্যেকটি যেন নির্দিষ্ট সিলেবাসে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। একটা আলাদা বডির মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে প্রমোশন দেওয়া হলে সেখানে দুর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।”

এখন যেভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়, তাকে একটি ‘জটিল প্রক্রিয়া’ হিসেবে বর্ণনা করেন দুদক চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি, ট্যাক্স দেওয়ার (আয়কর রিটার্ন) জটিলতার কারণেই দুর্নীতির বাড়ে। কারণ ট্যাক্সের ফর্মটাই জটিল। আপনার-আমার পক্ষেই অনেক সময় ফর্ম পূরণ করা সম্ভব হয় না। প্রয়োজন নেই এমন তথ্যও চাওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসে আমরা একটা সহজ রিটার্ন ফর্ম সরকারের কাছে দিয়েছি বিবেচনা করার জন্য। আমরা চাইছি অনলাইনে ট্যাক্স দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।”

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “প্রতিবছর সরকারের কাছে দুদক বহু সুপারিশ করে থাকে, এসব সুপারিশ কোথায় চলে যায় তা জানা যায় না। কারণ কমিশনের সেই জনবল নেই।”

এসব সুপারিশ পরীবিক্ষণ করতে মন্ত্রী পরিষদে অনুরোধ জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আমরা বলেছি। আমাদের সুপারিশ সরকার দেখতে পারে। কিন্তু আমরা কখনও বলি না যে, আমাদের প্রতিটি সুপারিশ বাস্তবায়ন করুন। আমরা বলি বিবেচনা নিয়ে আলোচনা করে বাস্তবায়নযোগ্য হলে করতে পারেন।”

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবনমন নিয়ে দুদক চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক।

উত্তরে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “দুর্নীতি যদি বেড়ে থাকে, তাহলে স্কোর সমান থাকবে কী করে? এটা আমি রিসার্চ করেও বুঝতে পারি না। দুর্নীতি বেড়েছে একটা সুইপিং কমেন্ট করে দেওয়া নট কারেক্ট। সাংবাদিক, ব্যক্তি মানুষ, এনজিও, যেই হোক- আমরা যদি সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠানের এমন সমালোচনা করি, যা বিশ্বের দরবারে আমাদের দেশকে ছোট করা হয়, সেই সমালোচনা ঠিক না।”

অন্যদের মধ্যে দুদকের দুই কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম (তদন্ত) ও মো. মোজাম্মেল হক খান (অনুসন্ধান), সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, কমিশনের একাধিক বিভাগে মহাপরিচালকরা সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন।

সর্বশেষ