১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়নের ঘরে থাকছে না বেশিরভাগ সুবিধাভোগীরা, ঝুলছে তালা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি:
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের বেশিরভাগ ঘরেই থাকছে না সুবিধাভোগীরা, তালা ঝুলছে। বরাদ্দপ্রাপ্তরা কেউ কেউ ঘরের চাবি ও কাগজপত্র গ্রহণ করার পর আর একদিনও আসেনি বলে জানা যায় । কিছু বরাদ্দপ্রাপ্ত ওই ঘরে বসবাস না করলেও ঘরের পাশে নানা ধরনের ফল-ফলাদী ও শাক-সবজি রোপন করে রেখে গেছে। তারা মাঝে মাঝে আসে শুধু এসব ফল ও সবজি নিতে। কেহ থাকেন নিজ বাড়িতে বা ভাড়া বাড়িতে। কয়েকটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বসবাস করতে আসেনি বরাদ্দপ্রাপ্তরা।
পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে জানা যায়, বরাদ্দপ্রাপ্তদের কাগজের কোন জটিলাতা অথবা তাদের আগ্রহের অভাবের কারনে সংযোগ দেয়া হয়নি। যদি কেহ আসে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিব।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, যারা বরাদ্দ পেয়েও থাকছে না তাদের তালিকা তৈরী হচ্ছে। বর্তমানে আশ্রয়নের জন্য আবেদন নিচ্ছি। যারা থাকছে না তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে প্রশাসন। বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছিল কোন কারনে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। সব ধরনের জটিলতার কারন খুজে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা প্রশাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সূত্রে জানা যায়, পধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের (আশ্রয়ণ প্রকল্প-২) অধীন ২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলায় ৪০ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য আধাপাকা ঘর তৈরি করে হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে কালকিনি পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের লামচড়ি গ্রামে ১৮টি, সাহেবরামপুর ইউনিয়নে ২ নং ওয়ার্ডের আন্ডারচর গ্রামে ৬ টি ও কাজি বাকাই ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামে ১৬টি ঘর নির্মান করা হয়। প্রতিটি ঘর তৈরিতে সরকারী বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। গতবছর উদ্বোধনের পর ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয় উপকারভোগীদের মাঝে। দুই কক্ষের এসব ঘরে সংযুক্ত একটি রান্নাঘর ও টয়লেট রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কালকিনি পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের লামচড়ি গ্রামে নির্মিত ১৮ টি ঘরের মধ্যে বেশিরভাগ ঘরেই থাকছেন না বরাদ্দপ্রাপ্তরা। ৬টি ঘরে উপকারভোগীরা থাকলেও বেশিরভাগ ঘরে তালা ঝুলছে। কিছু লোক জমির কাগজ ও চাবি পাওয়ার পর একদিনও আসেনি। কিছু ঘরের মালিক মাঝে মাঝে আসে তবে ঘরে বসবাস করে না। তারা সেখানে শাকসবিজি লাগিয়ে রেখে গেছে মাঝে মাঝে এসে ফল ও সবজি নিয়েই চলে যায়।
উপকারভোগী সাহেব আলী, চেয়ার আলী ঘরামী, খগেন্দ্র চন্দ্র পাল, সিমা, রাসমোহন ঘোষ, কমল পাল, দেলোয়ার সরদার, রবিন শীল, আনোয়ারা ও সোহরাব বেপারীর ঘরে তালা ঝুলতে দেখা যায়। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারনে অনেকেই বসবাস করতে আসে না বলে জানায় আশপাশের লোকজন। ৫ টি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেখা যায়নি। বাকি ঘরের সুবিধাভোগীরা নিজ বাড়িতে অথবা ভাড়া বাড়িতে থাকেন বলে জানা যায়। সাহেবরামপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের আন্ডারচর গ্রামে ৬ টি ঘরে যারা বসবাস করে তারা সারাদিন বাইরে কাজকর্ম করলেও রাতে ঘরে থাকে বলে জানায় স্থানীয়রা।
এছাড়া কাজী বাকাই ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামে ১৬ টি ঘরের সুবিধাভোগীদের মধ্যে ১১ টি ঘরে লোকজন বসবাস করলেও বাকি ৫ জনের একজন কালকিনি উপজেলা মসজিদে চাকুরী করে, ওমর ফারুক নামে একজন (নও মুসলিম) চাবি নেওয়ার পরে একদিনও আসেনি বলে জানায় সেখানে বসবাসকারীরা। বাকি ৩ জনের নাম জানেন না তারা। কিছু ঘরে নাম লেখা বোর্ড লাগানো নেই বলে তাদের সঠিক পরিচয় জানেন না তারা। এছাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের মধ্যে বৃষ্টি হলেই চলাফেরা করতে কষ্ট হয় সেখানে বসবাসকারীদের। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারী চায় তারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রথম দিন চাবি আর জমির কাগজ নিতে এসেছিল সবাই। আর কোন দিন আসেনি । কয়েকটি ঘরে নাম লেখা বোর্ড নেই তাই নামও জানেন না তারা। কয়েকজন আছে ফল-শাকসবজি লাগাতে আর নিতে আসে।
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে তারা আরও বলেন, কারও নাম বলা যাবে না। প্রশাসনের লোক খোজ খবর নিয়ে দেখুক। নাম বলে শত্রু হওয়া যাবে না। বৃষ্টি হলে পানি জমে যায় । চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। সরকার যদি ব্যবস্থা করতো বসবাস করতে সুবিধা হতো।
কালকিনি পল্লী বিদ্যুতের উপ-ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল মাজেদ জানান, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। যাদের বরাদ্দ সংক্রান্ত কোন জটিলতা ছিল বা যারা আবেদন আর ছবিসহ কাগজপত্র দেয়নি তাদের সংযোগ বাকি থাকতে পারে। তারা আসলে তাদের জন্য তাৎক্ষনিক ব্যবন্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার এখানে অবহেলা বিন্দুমাত্র নেই তাদের।
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিংকি সাহা বলেন, তিনি কয়েকমাস হলো কালকিনিতে এসেছেন। বিষয়টি জেনে বরাদ্দ দেয়া ঘরের উপকারভোগীদের বিষয়ে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। ওই সব ঘরে সুবিধাভোগীরা কেন থাকছে না তার কারন খোজা হচ্ছে। বরাদ্দ পাওয়ার পরও যারা থাকছেন না, তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। নতুন আবেদন নেয়া হচ্ছেও জানান এই কর্মকর্তা।

সর্বশেষ