২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
বরিশালে ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার চরকাউয়ায় যুবলীগ নেতা খান মামুনের গণসংযোগ বাংলাদেশে বর্তমানে ভারতের তাবেদার সরকার শাসন করছে : বরিশালে ভিপি নুর বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ, ইমামের কক্ষে আগুন উজিরপুরে ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার কাউখালীতে পাটি খাতে রূপালী ব্যাংকের ক্লাস্টার ভিত্তিক ঋণ বিতরণ বিআরডিবি'র কার্যক্রম পরিদর্শনে সচিববৃন্দ মনপুরায়, কিশোরীদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ ও উঠান বৈঠক বরিশালে ‘সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শহর রক্ষা বাধ দখলের মহোৎসব উজিরপুরে মাদকসহ জেলা ডিবি'র খাচায় ১ মাদক কারবারী আটক রাজাপুরে নিখোজ ভ্যান চালকের লাশ ভাসছিলো নদীতে

বঙ্গবন্ধুর চোখে দেশপ্রেম, ইসলাম ও ধর্মান্ধগোষ্ঠি ! 

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

:সোহেল সানি :

বঙ্গবন্ধু দৈহিকভাবে নেই। কিন্তু আছে  তাঁর প্রতিটি কথার উচ্চারণ ও ধ্বনি প্রতিধ্বনি। আর তা দেশের যে কোনো সংকটে।
দেশে একদিকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে  ধর্মান্ধগোষ্ঠির সন্ত্রাস। অন্যদিকে প্রাণঘাতী করোনা বাড়াচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। করোনার যেন মহাদুর্যোগের রূপ পরিগ্রহ করতে শুরু করেছে। করোনার শুরুতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা হয়ে পড়েছিলেন বিতর্কিত। তাদের হাতে ত্রান নিতে গিয়ে মার খেতে হয়েছে বহু  নারীপুরুষকে। অন্যদল করার কারণেও রক্ত ঝরেছে অনেকের। স্থানীয় নির্বাচনও স্থগিত হয়ে গেছে। চারদিকে চলছে ধরপাকড়। আর বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। করোনার এ মহামারীতে সরকার কি পদক্ষেপ নেবে সে নিয়ে জনমনে রয়েছে নানা গুঞ্জন গুজব।
সরকারের উচিত বঙ্গবন্ধুর নীতি-নৈতিকতাকে অনুসরণ করা।
বঙ্গবন্ধু গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি গ্রহণ করেন। এর সম্পর্কে তিনি যে বক্তৃতা করেন অনুসরণ যোগ্যই বটে।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,”রাজনীতির অঙ্গনে “ঢাক ঢাক গুড় গুড়” নীতিতে আমরা বিশ্বাসী নই। জনগণের জন্য যা চাই তা সুস্পষ্ট ভাষায়, সরাসরি ঘোষণা করি। এ কারণে কখনো ইসলাম বিরোধী, কখনো রাষ্ট্রদ্রোহী কখনো বিচ্ছিন্নতাবাদী আবার কখনো “বিদেশী চরের আখ্যা পেতে হয়েছে।”
তারপরও রক্তচক্ষুর সামনে সত্যকে বর্জন করিনি-রক্তচক্ষু দিয়েই জবাব দিয়েছি। ন্যায়বিচার দাবি করায় মৃত্যুর হিমশীতল স্পর্শ আমার ওপর নেমে এসেছিল।
বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের “চতুর্থ স্তম্ভ’ঘোষণা করে বলেন, “বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান মুসলমানের ধর্মপালন করবে, হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে, খৃষ্টান তার ধর্ম পালন করবে, বৌদ্ধ তার ধর্ম পালন করবে। এ মাটিতে ধর্মহীনতা নেই, ধর্মনিরপেক্ষতা আছে। এর একটা মানে আছে। এখানে ধর্মের নামে ব্যবসা চলবে না। ধর্মের নামে মানুষকে লুট করে খাওয়া চলবে না। ধর্মের নামে রাজনীতি করে রাজাকার,আলবদর হওয়া চলবে না এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে দেয়া হবে না।
ইসলাম ও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ” আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়, আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। সুস্পষ্ট বক্তব্য আমার, আমরা লেবেল সর্বস্ব ইসলামে বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হযরত রসূলে করীম (সাঃ) এর ইসলাম। যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। ইসলামের প্রবক্তা সেজে দেশের মাটিতে বরাবর যারা অন্যায় অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনার পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছেন, আমাদের সংগ্রাম সেই মোনাফেকদের বিরুদ্ধে। যে দেশের শতকরা ৯৫ জনই মুসলমান সেই দেশে ইসলাম বিরোধী আইন পাসের সম্ভাবনার কথা ভাবতে পারেন কেবল তারাই, ইসলামকে যারা ব্যবহার করেন দুনিয়াটা ফায়স্থা করে তোলার কাজে।
জাতির পিতার নীতিনির্ধারণী ভাষণে ঘোষিত রাষ্ট্রীয় চার স্তম্ভের প্রথমটি জাতীয়তাবাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া যায়। জাতীয়তাবাদের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আমার বাংলার সভ্যতা, আমার বাঙালী জাতি- এ নিয়ে হলো বাঙালী জাতীয়তাবাদ।”
সমাজতন্ত্র হবে দ্বিতীয় স্তম্ভ। “এ সমাজতন্ত্র আমি দুনিয়া থেকে ভাড়া করে আনতে চাই না, এ সমাজতন্ত্র হবে বাংলার মাটির সমাজতন্ত্র। এ সমাজতন্ত্র বাংলার মানুষের সমাজতন্ত্র, তার অর্থ হলো শোষণহীন সমাজ, সম্পদের সুষম বন্টন। বাংলাদেশে ধনীদের আর ধন সম্পদ বাড়াতে দেব না। বাংলার কৃষক, মজদুর, শ্রমিক, বাংলার বুদ্ধিজীবী এ দেশে সমাজতন্ত্রের সুবিধা ভোগ করবে।”
বঙ্গবন্ধু বলেন, “সমাজতন্ত্র যেখানে আছে সেদেশে গণতন্ত্র নাই। দুনিয়ায় আমি বাংলার মাটি থেকে দেখাতে চাই যে, গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমি সমাজতন্ত্র কায়েম করবো। আমি ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমি জনগণকে ভালোবাসি, আমি জনগণকে ভয় পাই না। দরকার হলে আবার ভোটে যাবো।,”
বঙ্গবন্ধু খাঁটি জাতীয়তাবাদী  ছিলেন বলেই অপর এক ভাষণে বলেন,”আমার দেশ স্বাধীন দেশ। ভারত হোক, আমেরিকা হোক, রাশিয়া হোক, গ্রেট বৃটেন হোক, কারো এমন শক্তি নাই যে, আমি যতক্ষণ বেঁচে থাকি, ততক্ষণ আমার দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
একদল লোক বলছে মুজিবুর রহমান লন্ডন চলে যাবে। কিন্তু মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ছেড়ে কোথাও যাবে না। মুজিবুর রহমান বাংলার মানুষকে ফেলে বেহেস্তে গেলেও শান্তি পাবে না।”
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “সব দলেই ভাল-মন্দ মানুষ আছে। যারা খারাপ, তারা সব সময়ই খারাপ। আমার দলের মধ্যে কেউ যদি দুর্নীতি বা চুরি করে, বিশ্বাস রাখতে পারেন, তাকে কেমন করে শায়েস্তা করতে হয়, আমি জানি। ৩৭ জন এমসিএ- কে (এমপি) বহিষ্কার করেছি। ভবিষ্যতে যদি কোনো এমসিএ বা পার্টি – সে যে পার্টিরই হোক না কেনো, কিংবা কোনো শ্রমিক নেতা বা ছাত্রনেতা চুরি করে তাহলে মাফ করবো না। মজুদদার, চোরাকারবারি আর চোরাচালানিরা হুঁশিয়ার হয়ে যাও। হুশিয়ার করে দিয়ে বলতে চাই, যারা শহরে সরকারি বাড়ী, গাড়ী দখল করে আছো, যারা দোকান বা অন্যের জমি দখল করে আছো, যারা মজুদ করছো, জিনিসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছো, তাদের রেহাই নেই। আমি এক একটা এলাকায় কারফিউ দেবো আর সমস্ত পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে তল্লাশি চালাবেন। এতদিন আমি কিছু বলি নাই। এখন বলে দিলাম, হুকুম দিয়ে দিলাম। এরপরেও বড় বড় বক্তৃতা করবে আর রাত্রি বেলায় চোরা গাড়ীতে চড়বে, এটা হবে না। আমার প্রাণ থাকতে নয়। বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। আর ঘুঘু ধান খাওয়ার চেষ্টা করো না। আমি পেটের মধ্য হতে ধান বের করে ফেলবো।
ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অধঃপতনে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ স্মরণযোগ্য। তিনি  বলেছিলেন,”আমি যদি আত্ম বিশ্লেষণ করতে না পারি, আত্মসংযম করতে না পারি, তাহলে অন্যকে বলার আমার কোনো অধিকার নাই।সারাদিন কি করলে তা রাতে শোবার সময় একবার হিসাবনিকাশ করো। আজ ভালোমন্দের হিসেব রাখলে পরের দিন কাজে লাগবে। মানুষ তোমাদের কথা শুনবে, দেখবে, শিখবে, ভালবাসবে, শ্রদ্ধা করবে। কেউ কোন দিন বলপ্রয়োগে ভাল কিছু করতে পারে না। সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষের দরকার। তা না হলে শেখ মুজিবুরকে বেটে খাওয়ালেও পারা যাবে না।
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট ।
 

সর্বশেষ