নিজস্ব প্রতিবেদক ::: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিল এফডিআরের অর্থ উত্তোলন ও পুনরায় জমার অনিয়ম অনুসন্ধানে করা কমিটির তদন্ত শুরু হয়নি দুই বছরেও। দফায় দফায় যাদেরকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেউই সেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি। অনিয়ম অনুসন্ধানে এসে একের পর এক কমিটি বদল হলে তদন্ত আজও আলোর মুখ দেখেনি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এফডিআরের টাকা নিয়ে উদ্বেগে আছেন।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এফডিআরের অর্থ উত্তোলনের ও পুনরায় জমার অনিয়ম বিষয়ে তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মু. মুহসিন উদ্দীন সাক্ষরিত ওই কমিটিতে গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শফিউল আলমকে প্রধান করে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুজন চন্দ্র পালকে সদস্য সচিব ও ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল বাতেন চৌধুরীকে সদস্য করা হয়।
কয়েকমাস পরে কমিটির প্রধান পদ থেকে গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শফিউল আলম অব্যাহতি নেন। এরপর ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিকুল হককে প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তারিকুল হক বলেন, নানা ব্যস্ততায় তদন্ত কাজ আলোর মুখ দেখেনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি। এখন নতুন যিনি আহ্বায়ক হবেন তিনি তদন্ত শেষ করবেন বলে আশা করি।
তদন্ত কেন অগ্রসর হলো না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের ওপরে কারও কোনো চাপ ছিল না। শিক্ষকতায় ব্যস্ততার কারণে তদন্তে সময় দেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিলের (জিপিএফ) জন্য বেতন থেকে কেটে রাখা টাকা অর্থ দপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকে মুনাফার জন্য রাখা হয়। নির্ধারিত সময় শেষে ওই ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে সুবিধাজনক ব্যাংকে আবারও জমা করার কথা। এফডিআরের অর্থ লেনদেন তদারকির দায়িত্ব বর্তায় অর্থ বিভাগের উপ-পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) সুব্রত কুমার বাহাদুরের ওপর। সঠিক সময়ে অর্থ উত্তোলন ও পুনরায় জমাসহ এফডিআরের অর্থে অভ্যন্তরীণ জটিলতা দেখা দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করে দেয় রেজিস্ট্রারের দপ্তর।
সাবেক উপাচার্য সাদেকুল আরেফিনের সঙ্গে দহরম-মহরম সর্ম্পক ছিল সুব্রত কুমার বাহাদুরের। এ কারণে তদন্তক কমিটি গঠিত হলেও উপাচার্যকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে তদন্ত কাজ স্থবির করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে সুব্রত কুমার বাহাদুর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী উপাচার্য। তার নিদের্শনা ছাড়া এখানে কোনো কাজ হয়নি। এমনকি কোন কোন ব্যাংকে কীভাবে টাকা রাখলে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে তাও সর্বোচ্চ বিচার-বিশ্লেষণ করে তারপর রাখা হয়। আর তার হাত ধরেই এ টাকার এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মুনাফা এসেছে।
তদন্ত কমিটি বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। কোনো কমিটি আমার কাছে জানতে চাননি।
সুব্রত কুমার বাহাদুর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক জুনিয়র অফিসার বিভিন্ন পথে সিনিয়রদের পদ দখল করে নিচ্ছেন। রাজনীতিতে জড়িয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণটাই উদ্দেশ্যমূলক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কমিটি গঠন হলেও এখন পর্যন্ত কমিটি কোনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি। আমি যতদূর জানতে পেরেছি, কমিটি গঠনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য স্যারের দপ্তর থেকে তদন্ত কমিটির ওপর এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হয়। এরপর থেকেই তদন্ত কাজ থেমে যায়।
তিনি বলেন, বিষয়টি আমি উপাচার্য স্যারকে জানাব। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি তদন্ত কমিটির এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রতিমাসে বেতন থেকে ১০ শতাংশ এফডিআরের ফান্ডে জমা হয়।