৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বরগুনায় মাদ্রাসায় ভুয়া স্বাক্ষরে শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন না করেও প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি :: বরগুনার তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া এতিম মঞ্জিল বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় সহ-সুপার মোঃ আলা-উদ্দিন জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী দুই প্রতিদ্বন্ধি আবেদনই করেননি কিন্তু তাদের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহন দেখানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে মাদ্রাসার সহ-সুপার মাওলানা মোঃ আলা-উদ্দিন নিজেই জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে এ নিয়োগ দিয়েছেন। এমন অভিযোগ এনে মাদ্রাসার জমিদাতা মোঃ ইউসুফ আকন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জানাগেছে, ২০০০ সালে উপজেলার কড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের গেন্ডামারা গ্রামে ইউসুফ আকন কড়াইবাড়িয়া এতিম মঞ্জিল বালিকা দাখিল মাদ্রাসার নামে ১০০ শতাংশ জমি দান করেন। ওই জমিতে ইউনুস মাষ্টার মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার করেন। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠাতা সহ-সুপার পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেন। ওই বিজ্ঞাপন নিয়ে গোপনে মাওলানা আলাউদ্দিন নিজেই ভুয়া নিয়োগ বোর্ড গঠন করেন। ওই বছর ২৮ ফেব্রুয়ারী ওই নিয়োগ পরীক্ষায় সহ-সুপার পদে মাওলানা মোঃ আলা-উদ্দিন, মাওলানা মোঃ ওবায়দুল্লাহ ও মাওলানা মোঃ মানজুরুল হককে প্রতিদ্বন্ধি দেখানো হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ও মাওলানা মানজুরুল হক ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেনি এবং আবেদনও করেনি। ওই সময় থেকেই মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ছোটবগী গাবতলী দাখিল মাদ্রাসার সুপার পদে কর্মরত। ওই দুই জনকে ভুয়া প্রার্থী দেখিয়ে তাদের স্বাক্ষর জাল করে আলাউদ্দিন সহ-সুপার পদে নিয়োগ নিয়েছেন। ওই ভুয়া নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশন ও শিক্ষক নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল সিটে নিয়োগ কমিটির স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। সুপার হিসেবে মাওলানা আবদুল কুদ্দুস নামে ওই নিয়োগ বোর্ডে যার স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে ওই নামে কোন সুপার মাদ্রাসায় কোন দিনই ছিল না। এমনকি এই নিয়োগ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠাতা, জমিদাতা কেই অবগত নন এমন অভিযোগ জমিদাতা ইউসুফ আকনের। ২০১৯ সালের পয়েলা জুলাই ওই মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হয়। ওই সময়ে সহ-সুপার পদে মাওলানা আলাউদ্দিন তার কাগজপত্র দাখিল করেন। এমন খবরে মাদ্রাসাসহ এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। কিন্তু তিনি তার এ ভুয়া নিয়োগের কাগজপত্র গোপন করে উপজেলা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের যোগসাজসে এমপিওভুক্ত হন। বর্তমানে তার ইনডেক্স নম্বর গ-০০০১৬৩৯। এই ভুয়া নিয়োগের মাধ্যমে তিনি গত দের বছর ধরে সরকারী টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। তার এমন অনিয়মের অভিযোগ এনে মাদ্রাসার জমিদাতা মোঃ ইউসুফ আকন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও তিনি কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। সোমবার আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন জমিদাতা।

প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী মাওলানা মোঃ মানজুরুল হক বলেন, ওই মাদ্রাসায় সহ-সুপার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহন তো দুরের কথা ওই পদে আমি আবেদনই করিনি।

অপর প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী মাওলানা মোঃ ওবায়দুল্লাহ বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল সিটে আমার নাম ব্যবহার এবং আমার স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে। আমি কোনদিনই ওই মাদ্রাসায় সহ-সুপার পদে আবেদন এবং নিয়োগ পরীক্ষা দেয়নি। ভুয়া নিয়োগ পত্রে আমার নাম ব্যবহার করায় আমার মান ক্ষুন্ন হয়েছে আমি এ ঘটনায় শাস্তি দাবী করছি।

এ বিষয়ে মাদ্রাসার সহ-সুপার মাওলানা মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। যথা নিয়মেই নিয়োগ হয়েছে।

মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মোঃ ইউনুস মাস্টার বলেন, সহ-সুপার পদে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি তা ঠিক। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তিকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে আলাউদ্দিন নিয়োগ নিয়েছেন।

মাদ্রাসার বর্তমান সুপার মোঃ মাহবুব আলম নাশির বলেন, আমার আমলে সহ-সুপার পদে আলাউদ্দিন নিয়োগ নেননি। কিভাবে নিয়োগ নিয়েছেন তা আমার জানা নেই। তিনি আরো বলেন, তার নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের স্বাক্ষর সঠিক কিনা তাও আমি জানিনা।

বরগুনা জেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহদাত হোসেন বলেন, এভাবে নিয়োগ পরীক্ষা ও বোর্ড বে-আইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

সর্বশেষ