৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বরগুনা ১ আসনে ‘শম্ভুবৃত্ত’ ভেঙে নৌকার মাঝি হতে চান হাফ ডজন নেতা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বরগুনা প্রতিনিধি ::: বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। টানা তিন মেয়াদসহ মোট পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের এ সভাপতি। তবে এবার ‘শম্ভুবৃত্ত’ ভাঙতে মরিয়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হাফ ডজন নেতা। নির্বাচন ঘিরে তাঁরা সরব রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা শম্ভুবিরোধী প্রচার চালাচ্ছেন। অন্যদিকে এই আসনে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে দোলাচল আছে। আবার কমিটি না থাকায় সাংগঠনিকভাবেও এখন দলটির ছন্নছাড়া অবস্থা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শম্ভুর একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এ পর্যন্ত ছয়বার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে জেলায় দলের শীর্ষ পদ দখল করে আছেন দীর্ঘ বছর ধরে। ১৯৮৭ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৯৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

পরিবার ও নিকটাত্মীয়দেরও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন এমপি শম্ভু। জেলা তরুণ লীগের সভাপতি পদ দিয়ে শুরু হয়েছিল ছেলে সুনাম দেবনাথের রাজনীতিতে পদার্পণ। সর্বশেষ কমিটিতে তিনি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক। এ ছাড়া সম্ভুর স্ত্রী মাধবী দেবনাথ জেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী। পুত্রবধূ কাসফিয়া দেবনাথ আছেন মহিলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদিকা পদে। শম্ভুর বেয়াই নন্দ তালুকদার ছিলেন সদ্য সাবেক জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ। একই কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন নন্দের ছোট ভাই সুবল। শম্ভুর ভাগনি ও বোনও আছেন পৌর আওয়ামী লীগ এবং জেলা মহিলা লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী—এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণে ৫২ জন আওয়ামী লীগ নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে একপর্যায়ে শম্ভু ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। শেষ মুহূর্তে জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল করে শম্ভুর মনোনয়ন বহাল রাখা হয়। আসন্ন নির্বাচন ঘিরেও শম্ভুবিরোধী জোট মাঠে সরব। এবারও তাঁকে মনোনয়ন দিলে তাঁরা একজনকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করে শম্ভুর বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

শম্ভুবলয় ভাঙতে মাঠে প্রচার চালাচ্ছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু, ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগের উপকমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতালেব মৃধা ও বরগুনা পৌরসভার মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ।

আগামী নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক টুকু বলেন, ‘বর্তমান এমপি তিন মেয়াদেও বরগুনার মানুষের মিনিমাম প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। আমরা চরম হতাশ ও বঞ্চিত। উন্নয়ন বলতে শুধু ব্যক্তি তিনি ও তাঁর পরিবারের বাইরে কিছুই হয়নি। মানুষ শম্ভুবলয় থেকে মুক্তি চায়, পরিবর্তন চায়। আমি সেই লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রচারে নেমেছি। আশা করি, দল স্থানীয়দের স্বার্থে এবার মনোনয়নের পরিবর্তন আনবে।’

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী খলিলুর বলেন, ‘বরগুনা পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় একটি জেলা। কিন্তু পর্যটন খাতের কোনো উন্নয়ন হয়নি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সড়ক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে এক যুগ পিছিয়ে আছি। গত তিন মেয়াদে বরগুনায় সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য দেখাতে পারবেন না যে তিনি এলাকার কিছু করেছেন।’

পৌর মেয়র মহারাজ বলেন, ‘ব্যক্তিস্বার্থে না, এলাকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের স্বার্থেই রাজনীতি করতে হয়। আমি মনে করি, দল মনোনয়নের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।’

এ বিষয়ে এমপি শম্ভু বলেন, ‘বরগুনা-১ আসনের সব উন্নয়ন আমার হাত ধরে হয়েছে। আমার যোগ্যতা, কর্মদক্ষতার কারণে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁরা মনোনয়ন প্রতিযোগিতার কারণেই এসব বলছেন। আমরা এই আসন থেকে যাঁরা মনোনয়ন চাই, সবাই যোগ্য। এঁদের মধ্যে দল যোগ্যতম প্রার্থীকেই বাছাই করে আসছে। এবারও আশা করি, ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’

বিএনপির অবস্থা: আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভেদ ও পাল্টাপাল্টি অবস্থান থাকলেও নিষ্ক্রিয় বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দল আগামী নির্বাচনে গেলে এবার বরগুনা-১ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য (বিলুপ্ত বরগুনা-৩ আসন) মতিউর রহমান তালুকদার, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা, সাবেক সভাপতি মাহবুব আলম ফারুক মোল্লা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক ফিরোজ-উজ-জামান মামুন মোল্লা।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের জেলা কমিটি নেই। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। আমি সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। এবার আমি এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইব। মনোনয়ন পেলে আশা করি, আওয়ামী লীগের আধিপত্যের দুর্গে হানা দিয়ে দুর্নাম ঘোচাতে সমর্থ হব।’

সর্বশেষ