শহীদুল্লাহ সুমন ::: দক্ষিণবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের চাঁপ বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু বাড়েনি মহাসড়কের প্রশস্ততা। ফলে সরু রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে বাড়ছে দূর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা। পাশাপাশি বাড়ছে যানজট।
একই সাথে বরিশালের সাথে রাজধানীর সড়কপথে যাতায়াত এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে যাত্রীর সাথে সাথে বাসের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বরিশালের কোন বাস টার্মিনালেরই উন্নয়ন হয়নি। যেকারণে টার্মিনালে জায়গা না পেয়ে মহাসড়কের ওপরই যত্রতত্র যাত্রী নামানো ও তোলার কাজ করছে বাসগুলো। এতে করে টার্মিনাল সংলগ্ন মহাসড়কে সৃষ্টি হচ্ছে চরম বিশৃঙ্খলা।
যার ফলশ্রুতিতে নগরী থেকে শুরু করে জেলার গুরুত্বপূর্ণ বাসষ্ট্যান্ডগুলোতে দীর্ঘপথের যানজট এখন নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সাথে পূর্বের সরু মহাসড়কে এক সাথে সময় বাঁচাতে পাল্লা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে চলা দুরপাল্লার পরিবহন ও থ্রী-হুইলারের পাশাপাশি ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করায় প্রতিদিন বাড়তি উপদ্রব হয়ে দাঁড়িয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে প্রায় ১১ কিলোমিটার মহাসড়ক অতিক্রম করেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ওপর দিয়ে। এই সড়কে দূরপাল্লার পরিবহন যেমন চলাচল করে, তেমনি জেলা শহরের অভ্যন্তরের ক্ষুদ্র পরিবহন ও ছোট ছোট যানবাহনগুলো চলাচল করছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কটিতে গাড়ির চাঁপ বেড়েছে পূর্বের চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ। অথচ সংকীর্ণ সড়কটি এখনও প্রশস্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমানে মহাসড়কজুড়ে টিউমারের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিনই ছোট-বড় অসংখ্য দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে।
সূত্রমতে, ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের নথুল্লাবাদ এলাকায় অবস্থিত বরিশালের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। আশির দশকে নগরীর নতুন বাজার এলাকা থেকে বাস টার্মিনাল স্থানান্তর করা হয় নথুল্লাবাদে। এখানে দুইশ’র অধিক বাস এক সাথে রাখার জায়গা রয়েছে। বিগত বছরগুরোতে এ টার্মিনালটি ব্যবহার হচ্ছিলো দুরপাল্লার পরিবহন যাতায়াতের জন্য। এরইমধ্যে পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানীর সাথে বরিশালের সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে মানুষ বরিশালে যাতায়াত করছেন। বিশেষ করে দেশের সর্বদক্ষিণের পর্যটন কেন্দ্র সাগরকন্যা কুয়াকাটায় আসা যাওয়া করা পর্যটকদের বরিশাল শহরের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ফলে নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন সড়কের ওপর দিন দিন চাঁপ বেড়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও কোন কিছুতেই যাটজট দূর করা সম্ভব হচ্ছেনা।
সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, বাস টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডের বাহিরে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা এবং নামানোই এ ভোগান্তির মূল কারণ। নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী টার্মিনালে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার কারণে শহরের দুই প্রবেশদ্বারে প্রতিনিয়ত সৃষ্ট যানজটের প্রভাব পরছে মূল শহরে।
বরিশাল বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন- পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর টার্মিনালের ধারণ ক্ষমতার বেশি বাস চলাচল করছে। ফলে জায়গা কম থাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। খুব শিঘ্রই এ সঙ্কট কাটবে, আমরা বড় পরিসরে নতুন একটি বাস টার্মিনাল স্থাপনের চেষ্টা করছি।