১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বরিশালের রেললাইন সমীক্ষায় গড়িমসি, আবারও বাড়ছে ব্যয়-মেয়াদ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

অনলাইন ডেস্ক: নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুর কল্যাণে সরাসরি রেলপথ যাবে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। এরপর ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করবে সরকার।

প্রথম ধাপে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে বরিশাল থেকে পটুয়াখালী জেলার পায়রা সমুদ্রবন্দর পযর্ন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের প্রিলিমিনারি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (পিডিপিপি) প্রস্তুত করা হয়।

রেললাইন নকশার কাজ শুরু হয় আজ থেকে ছয় বছর আগে। প্রথম ধাপে মেয়াদ শেষ হলেও সমীক্ষা শেষ হয়নি। ফলে বরিশাল রেললাইন সমীক্ষা কাজে আবারও বাড়ছে সময়, বাড়ছে ব্যয়।

এর আগে ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করে পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের নির্দেশনা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পিডিপিপিটির নীতিগত অনুমোদন দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এর পরে সরকারি অর্থায়নে ৪২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বিশদ ডিজাইন ও দরপত্র দলিল প্রণয়নসহ ভাঙ্গা জংশন (ফরিদপুর) হতে বরিশাল পায়রা হয়ে পায়রাবন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কাজ শুরু হয়। জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০১৮ মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হওয়ার কথা। পরবর্তী সময়ে ব্যয় ব্যতিরেকে প্রথমবার ছয় মাস মেয়াদ বৃদ্ধি করে ডিসেম্বর ২০১৮ নাগাদ নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকল্পের সংশোধন প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ফলে সাড়ে ৩৬ শতাংশ ব্যয় বাড়ছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে জুন ২০২১ সাল নাগাদ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজের পরিধি বাড়ছে। বিশেষ করে বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর এবং ঝালকাঠি-মঠবাড়িয়ে-পাথরঘাটা রুটের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।

সমীক্ষা প্রকল্পের প্রধান কাজ দুটি। প্রথম কাজ হচ্ছে ‘বিশদ ডিজাইন ও দরপত্র দলিল প্রণয়নসহ ভাঙ্গা জংশন (ফরিদপুর) হতে বরিশাল পায়রা হয়ে পায়রাবন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কাজ করা। এবং দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে গাণিতিক মডেলে বিস্তারিত টপোগ্রাফি সার্ভে, হাইড্রোলজিক্যাল এবং মরফোলজিক্যাল স্টাডি।

দুটি কার্যক্রম মোট ছয়টি প্যাকেজে সম্পন্ন হচ্ছে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে সার্ভে, সোশ্যাল সার্ভে ও জিওটেকনিক্যাল সার্ভে কাজ চলমান। নানা কারণে প্রকল্পের সময়-ব্যয় আবারও বাড়ছে বলে জানায় রেলপথ মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, সমীক্ষার প্রস্তাব প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০১৮ মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। তবে পরামর্শক নিয়োগের ক্রয় প্রস্তাব ১৩ জুন ২০১৮ তারিখে অনুমোদিত হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের ১৯ জুন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়। নানা কারণে শুধু পরামর্শক কাজেই ১৮ মাস সময় অতিবাহিত হয়।

প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মোহাম্মদ মাসউদুর রহমান বলেন, পরামর্শক নিয়োগসহ নানা কারণে প্রকল্পটি সঠিক সময় শেষ করা যায়নি। প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। কাজ এখনও ২০ শতাংশ বাকি। কাজগুলো সম্পন্ন করতে আরো সময় লাগবে। সময় চেয়ে আমরা পরিকল্পনা কমিশনে আবেদন করেছি। আশা করি বাড়তি সময়ে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন করতে পারবো। তবে কোভিড ১৯ এর কারণে প্রকল্পের কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হলে পদ্মাসেতুর মাধ্যমে ঢাকা থেকে বরিশালের দূরত্ব কমে দাঁড়াবে ১৮৫ কিলোমিটার এবং ভ্রমণে সময় লাগবে মাত্র চার ঘণ্টা। ফলে অধিকাংশ মানুষ ঢাকায় এসে তাদের প্রতিদিনের কাজকর্ম শেষে বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন। তাছাড়া প্রস্তাবিত রেললাইন নির্মিত হলে খুলনা, যশোর, বেনাপোল, দর্শনা, মংলা বন্দর, রাজশাহী এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও আধুনিক হবে।

বরিশাল খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কাযর্ক্রম পুরোপুরি শুরু হলে বরিশাল ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে। এতে করে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পাবে। এটি পদ্মাসেতু রেলওয়ে লিংকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রেলপথের মাধ্যমে বরিশাল থেকে ঢাকায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অথচ সমীক্ষা কজেই গড়িমসি। ফলে মূল প্রকল্প নেওয়া যাচ্ছে না। এমনকি সমীক্ষা ও নকশা কাজ সম্পন্ন না হলে বৈদেশিক অর্থায়নের উৎসও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

সর্বশেষ