২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

বরিশালে ভূমিহীনের জমি পেল উপ-সচিবের বাবা-মা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

মাসুদ রানা: জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব সাইদুর রহমান (পরিচিতি নং-৬৭২৫) ক্ষমতার দাপটে নিজের মা জাহানারা বেগম ও মৃত বাবা আব্দুর রহমানকে ভূমিহীন দেখিয়ে নিজ গ্রাম বরিশাল উজিরপুর ওটরায় সরকারি খাস জমি বন্ধোবস্ত নিয়েছেন। বন্ধোবস্তের সূত্রধরে সেখানে মার্কেট নির্মান ও পাশের আরো অন্তত ২০শতক জমি দখল করে রেখেছেন। অথচ খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়া বা পাওয়ার ক্ষেত্রে “১৯৯৮ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বরে সংশোধনী গেজেট প্রকাশিত মতে, যে পরিবারের বসতবাঢ়ি এবং কৃষি জমি কিছুই নাই কিন্তু পরিবারটি কৃষি নির্ভর অথবা পরিবারের একাধিক সদস্য কৃষি শ্রমিক হিসেবে অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করে কেবলমাত্র তারাই ভূমি বন্ধোবস্ত পাবেন।” তবে একজন উপসচিবকে সরকারি জমি পাইয়ে দিতে বা জালিয়াতি কাজে কেন সহায়তা করেছেন?এমন প্রশ্নের জবাবে উজিরপুর উপজেলার সাবেক ভূমিকর্মকর্তা ও নলছিটি উপজেলার বর্তমান ইউএনও রুম্পা সিকদার এবং উপ-সচিবের বেয়াই ওটরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাদাৎ হোসেন এ প্রতিবেদকের কাছে যুক্তিযুক্ত কোন উত্তর না দিয়ে বলেন,সেখানকার বর্তমান ইউএনও চাইলে বন্ধোবস্ত বাতিল করতে পারেন। এদিকে সরেজমিন চিত্রে উপসচিব সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে নানান তথ্য-উপাত্ত। এরমধ্যে একাদিক ব্যক্তির ভূমি দখল,টাকার বিনিময়ে সরকারি চাকুরী পাইয়ে দেওয়া ও এলাকায় সন্ত্রাসি হিসেবে পরিচিতদের আড়ালে থেকে প্রশাসনিক ছত্রছায়া দেওয়ায় অভিযোগ রয়েছে। এতে করে সাধারন মানুষ নানান ধরনের হয়রানী ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। এলাকায় বেড়ে গেছে মাদক ও জালিয়াতি কর্মকান্ড। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক অস্থির আবহের পরিবেশ । উপায়ন্ত না পেয়ে এলাকাবাসির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে,উপ-সচিব সাইদুর রহমানকে বর্তমানে বদলি করে সম পদমর্যাদায় জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সচেতন সাধারন মানুষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,একজন উপসচিব পদমর্যাদার ব্যক্তি নিজের গ্রামকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা রাখতে পারেন। অথচ আমাদের এলাকার উপসচিব নিজেকে ধরাছোয়ার বাইরে রাখতে শ্বশুর শাশুরীর নামে ঢাকায় বাড়ি গাড়ি ,আর নিজ এলাকার সাধারণ মানুষকে হয়রানী করছেন ।
তথ্যসূত্রে জানা যানা জায়, ১০-০৫-২০১৮সালে বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের জে এল ৩৭নং মৌজার রাস্তার মাথা বাজারের সরকারি খাস জমির ১৫৭২ ও ১৫৮১ দাগের ১০ শতাংশ জমি এ এলাকার বৃদ্ধা জাহানারা বেগম ও তার মৃত স্বামী আব্দুর রহমানের নামে সাব রেজিষ্টার বন্ধোবস্ত হিসেবে দলিল (দলিল নং-১৮১১/১৮) দিয়েছেন। ওই দলিলের সূত্রধরে দেখা যায়,সেই সময়ের ওই উপজেলার ভূমি কর্মকর্তা ও বর্তমানে বরিশাল ঝালকাঠি জেলার নলছিঠি উপজেলার ইউএনও রুম্পা শিকদার সুপারিশ করেছন। পাশাপাশি বন্ধোবস্ত গ্রহীতা জাহানারা বেগমের পরিচিতি ওটরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাদাৎ হোসেন হিসেবে সাক্ষর রয়েছে। বিস্ময়কর বিষয় হলো, বন্ধোবস্ত জমির গ্রহীতা জাহানারা বেগম’র ৫সন্তানের মধ্যে বড়ছেলে মিজানুর রহমান পল্লী বিদ্যুতের ইঞ্জিনিয়ার,মেজ ছেলে সাইদুর রহমান উপ-সচিব,ছোট ছেলে কাওছার হোসেন প্রাইভেট ব্যাংকের ম্যানেজার। আর দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে স্কুলের শিক্ষিকা ও ছোট মেয়ে এক ধনাঢ্য পরিবারের গৃহিনী। প্রশ্ন হচ্ছে,খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়া বা পাওয়ার ক্ষেত্রে “১৯৯৮ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বরে সংশোধনী গেজেট প্রকাশিত মতে, যে পরিবারের বসতবাঢ়ি এবং কৃষি জমি কিছুই নাই কিন্তু পরিবারটি কৃষি নির্ভর অথবা পরিবারের একাধিক সদস্য কৃষি শ্রমিক হিসেবে অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করে কেবলমাত্র তারাই ভূমি বন্ধোবস্ত পাবেন।” তাহলে কি ভাবে ওই পরিবার সরকারি জমি বন্ধোবস্ত পেলেন সে বিষয়ে জানতে সরেজমিনে গেলে জানা যায়, উপ-সচিব সাইদুর রহমান বন্ধোবস্থ জমিতে মার্কেট নির্মান করে মাসে প্রায় ভাড়া নিচ্ছেন। পার্শ্ববর্তী আরো জমি দখল করে ছোট বড় দোকান নির্মান করে ভাড়া দিয়েছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন,উপসচিব সাইদুর রহমান ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মায়ের নামে জমি বন্ধোবস্ত নিয়েছেন। হাস্যকর বিষয় হচ্ছে,এ দলিল সম্পন্ন হওয়ার আগে উপ-সচিবের বাবা আব্দুর রহমান বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেলেও দলিলের ভেতর মৃত বাবাকে বন্ধোবস্ত জমির সমান অংশীদ্বরিত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ জালিয়াতি কাজের সহায়ক উজিরপুর উপজেলার তৎকালিন সহকারি ভূমি কমিশনার বর্তমান নলছিঠি উপজেলার ইউএনও রুম্পা শিকদার জানান,যদি দলিলের ভেতর মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয় তাহলে বর্তমান ইউএনও বন্ধোবস্ত বাতিল করতে পারেন। বিভিন্ন মানুষের সুপারিশ ও টেলিফোনের তৎবির’র কারনে এসব ভূল হতে পারে। একইসাথে ওটরা ইউপি চেয়ারম্যান সাহাদাৎ হোসেন একজন গরীব পরিবারকে জমি বন্ধোবস্ত পেতে সহায়তা না করে কেন উপসচিবের পরিবারকে বন্ধোবস্ত জমির দলিলের পরিচিতি হিসেবে সাক্ষর করেছেন তার অনুসন্ধানে দেখা গেছে,উপসচিব সাইদুর রহমান’র বোন জেসমিনের শ্বশুর বাড়ীর দিক থেকে চেয়ারম্যান সাহাদাৎ সম্পর্কে বেয়াই। সাধারন মানুষ স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলেও সচিব পরিচয়ের ফোনে উল্টো ওই ভূক্তভোগি সাধারন জনতাই হয়রানী হচ্ছেন। উপায়ন্ত না পেয়ে ওটরা এলাকার সাধারন মানুষের পক্ষে আব্দুল মান্নান নামে এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপ-সচিব সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। একই এলাকার ভূক্তোভোগি বিধবা নারী মনি ইয়াসমিন জানান,আমাদের জমি দখল করে উপ-সচিব ভবন করেছেন। এর প্রতিবাদ করায় এখন বিভিন্ন লোকজন দিয়ে আমাকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। থানায় অভিযোগ করতে গেলে উপ-সচিবের নাম শুনতে পারলে আর ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। তবে আলাউদ্দিন নান্নান ওরফে হান্নান বলেন নানান মানুষের ষড়যন্ত্রের কারনে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মিথ্যা তথ্যে জমি বন্ধোবস্ত নেওয়ার বিষয়ে জানতে জাহানারা বেগমের বাড়িতে গেলে তিনি মিডিয়ার সামনে কথা বলতে আসেননি। তবে তার ছেলে উপ-সচিব পদমর্যাদার জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক সাইদুর রহমান’র ০১৭৩৩৫১৭৯৯৯ নম্বর থেকে মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে তিনি জানান,আমার মায়ের নামে কোন জমি নেই তাই বন্ধোবস্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এলাকায় সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়া দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। এলাকার কিছু মানুষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তাই বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন।

সূত্র: বরিশাল পিপলস

সর্বশেষ