শাকিব বিপ্লব :
বরিশালের বিশিষ্ট মৎস্য ব্যাবসায় জাহাঙ্গীর হোসেনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় তার কয়লাখোলা এলাকার বাসভবন লকডাউন ঘোষণা করেছে । এই ব্যবসায়ী নিজ বাসভবনেই আইসোলেশনে রয়েছেন। কিন্তু তার শরীরে এই ভাইরাসের কোনো উপসর্গের আলামত নেই বলে এই প্রকিবেদককে জানিয়েছেন। এদিকে আলোচিত এই ব্যাবসায়ী করোনা আক্রান্তের খবরে বরিশালের বৃহৎ মৎস্যবাজার পোর্টরোডে ব্যাবসায়ীদের মাঝে তোলপাড় দেখা দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীর হোসেন তার দেহে ভাইরাস প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত হন। এর একদিন পরই এই খবরে পোর্টরোড মৎস্যবাজার ফাঁকা হয়ে যায়। অপরাপর ব্যাবসায়ী ও তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বিগ্নতা দেখা দেয়। আতংক সামাল দেয়া এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে মৎস্য ব্যাবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক নিরব হোসন টুটুল আজ শুক্রবার সকালে পোর্টরোডে ছুটে এসে ব্যাবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক শেষে গোটা মৎস্য বাজার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জীবাণুমুক্ত করার উদ্যোগ নেন। এসময় বৃহৎ এই মৎস্য আড়ৎটি কিছুটা থমকে গিয়ে অচল হয়ে পড়ে।
একটি সূত্র জানায়, নিরব হোসেন টুটুলের নির্দেশনায় সকল ব্যাবসায়ীদের সচেতনতার পরামর্শ দিয়ে বাজার সচল রাখার তাগিদ দেন। ইতিপূর্বে এই নেতা পোর্টরোড মৎস্য আড়ৎ এলাকায় নিজ উদ্যোগে গণসচেতনতায় মাইকিং করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি ভাইরাসমুক্তে ওষুধ ছিটানোসহ হ্যান্ড স্যানিটাইজেশনের ব্যাবস্থা করেন। অবশ্য এক্ষেতে তার রাজনৈতিক নেতা নগর আ.লীগের সাধারন সম্পাদক ও সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর সাথে পরামর্শের আলোকে সহায়তা নেন।
বৃহৎ এই মৎস্যবাজারে জাহাঙ্গীর হোসেনের নিজস্ব আড়ৎ রয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ঘনিষ্টজনরা জানান, বরিশালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরই জাহাঙ্গীর হোসেন তার নিজ প্রতিষ্ঠানে আসা বন্ধ করে দেন। দপ্তরখানা আনন্দ বেকারির গলিতে নিজ বাড়িতে অনেকটা হোম কোয়ারান্টাইনে থাকার ন্যায় দীর্ঘ ২ মাস শেষে সপ্তাহকাল ধরে প্রতিষ্ঠানে আসা শুরু করেন।
জাহাঙ্গীর হোসেন বরিশাল বাণীকে নিশ্চিত করেন, তার বহুতল বাসভবনের পাঁচতলায় আখতার নামক এক ব্যাক্তি বরিশাল টু ঢাকা মৎস ব্যাবসার সাথে জড়িত। গত ৮ মে এই ব্যাক্তি ঢাকা থেকে বরিশাল ফিরে বাসায় অবস্থানকালে বাড়ির মালিক জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে দেখা করে সৌজন্যতায় একটি সিগারেট ভাগাভাগি করে ধূমপান করেন।
ধারনা করা হচ্ছে, সেখান থেকেই জাহাঙ্গীর সংক্রমিত হয়। জাহাঙ্গীরের ভাষ্যানুযায়ী, জাহাঙ্গীর হোসেন নিজের শরীরে জ্বর অনূভ’ত হলে শেবাচিমে করোনা সন্দেহে টেস্টের মুখোমুখি হন। তার শরীরে ১০০ ডিগ্রি জ্বর স্থাযী রূপ নেওয়ায় তিনি এই সন্দেহ থেকেই গত ১৩ মার্চ শেবাচিমে যান।
তার দাবী, গতকাল বৃহস্পতিবার শেবাচিম থেকে তিনি করোনা আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করেন। অবশ্য বর্তমানে তার দেহে করোনার কোনো উপসর্গ অনুভব করেননা। তিনি নিজেও এই উদ্ধুত পরিস্থিতিতে বিস্মিত। জাহাঙ্গীর করোনায় আক্রান্ত এখবর বৃহস্পতিবার রাতেই ছড়িয়ে পড়ে। রাত আটটার কিছুপর কোতোয়ালী মডেল পুলিশের একটি টিম এসে আলোচনা সাপেক্ষে তার ইচ্ছা অনুযায়ী নিজ বাসভবনে চিকিৎসা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পুলিশ ঐ বাড়িটি লকডাউন করে দিয়েছে।
বরিশাল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বরিশাল বাণীকে নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এইব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে জাহাঙ্গীর হোসেন এই প্রতিবদেককে আজ শুক্রবার দুপুরে সেলফোনে জানান, তিনি সুস্থ্য রয়েছেন, করেনার কোনো উপসর্গ এখন আর অনুভব করছেন না। বিষয়টি তার কাছে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। তিনি পুনরায় টেস্টের মুখোমুখি হতে চান।
এদিকে তার ব্যবসায়ীক পরিচিতজনসহ পোর্টরোড এলাকায় মৎস্য ব্যাবসায়ী ও আ.লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা জাহাঙ্গীর হোসেনকে করোনায় আক্রমণ করেছে, এমন খবর আলোচনার সৃষ্টি করেছে।