২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

বরিশালে ময়লাখোলার বর্জ্য স্থানীয়দের গলার কাটা!

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

নিজস্ব প্রতিবেদক ::: আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে ময়লাখোলায় নিয়ে জড়ো করা বরিশাল নগরের সব বর্জ্য এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বছরের পর বছর ধরে বরিশাল নগরের সব বর্জ্য নিয়ে ফেলা হচ্ছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুরানপাড়ার ময়লাখোলা এলাকায়।

এতে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকে। সেই সঙ্গে সিটি করপোরেশনের উন্মুক্ত এ ময়লাখোলার বর্জ্যের দুর্গন্ধে আশপাশের মানুষ অতিষ্ঠ।

সরেজমিনে দেখাগেছে, প্রতিদিন নগরীর শত শত টন ময়লা আবর্জনা এখানে ফেলছে সিটি কর্তৃপক্ষ। সীমানা প্রাচীর না থাকায় এবং দুর্গন্ধ নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সামান্য বাতাসে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় চরম ব্যাঘাত ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, এখানের দুর্গন্ধ থেকে কোনোভাবেই এলাকাবাসীর মুক্তি নেই। যখনই ডাম্পিং প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। দুর্গন্ধের কারণে খাওয়া-দাওয়া করতেও পারছেন না স্থানীয়রা। বমি, পেটের পীড়া, খোসপাঁচড়া, মাথা ঘুরানো, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। বৃষ্টিতে আশপাশের জলাশয়, রাস্তাঘাটে ময়লা আবর্জনার পানি ছড়িয়ে পড়ে।

প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানান, এ ময়লাখোলার উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানকার শিক্ষার্থীরাও ভালো নেই। ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। কর্তৃপক্ষকে এলাকাবাসী একাধিকবার ময়লাখোলার দুর্গন্ধের বিষয় অবগত করলেও কোনো লাভ হয়নি। বরং ময়লাখোলা এলাকায় শুকর পালনের একটি প্রজেক্ট করা হয়েছে। শুকরের একটি দলে ১৫৮টি শুকর এখনো আছে। এছাড়া অসংখ্য কুকুর থাকে ওই এলাকায়। যেগুলোর কামড়ের ভয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতেও ভয় পায়।

এদিকে শুষ্ক মৌসুমে ময়লাখোলার ময়লায় আগুন দিলে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শাহরিয়ার বলেন, সিটি করপোরেশনের লোকজন যখন ময়লায় আগুন দেয়, তখন ধোঁয়া আর অদ্ভূদ এক গন্ধে চারপাশের বাসিন্দারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।

ছানোয়ার নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, শীতকালীন আবহাওয়ায় ময়লাখোলায় ভ্যাবসা গন্ধ তৈরি হয়। তখন আশপাশের ২-৩ কিলোমিটারে বসবাস করা কষ্টকর হয়ে যায়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে।

ময়লাখোলায় নেশাগ্রস্তদের আড্ডা বেশি জানিয়ে হাসান নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, যেই নগরভবনে ও আমাদের ওয়ার্ডের দায়িত্বে আসুক, তাকেই ময়লাখোলাটাকে হয় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া, নয়তো আধুনিক ডাম্পিং স্টেশন করার দাবি জানাই। কিন্তু সবাই মুখে আশ্বাস দিলেও উদ্যোগ নেয় না।

তিনি বলেন, ময়লাখোলার আশপাশের বেশকিছু মানুষ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এখানে গাছে ঠিকভাবে ফলও ধরে না। গাছের পাতাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। সব চেয়ে বড় কথা হলো কেউ আমাদের এখানে বেড়াতে আসতে চায় না।

ময়লাখোলার কারণে ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপুরানপাড়া ও কাউনিয়া থানার সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ বলেন, আমরা চাই এবারের নির্বাচনে যে বিজয়ী হবেন, তিনি যেন সবার আগে এ ময়লাখোলার বিষয়ে উদ্যোগ নেন। হয় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটিকে গড়া হোক, নয়তো সরিয়ে নেওয়া হোক।

সর্বশেষ