৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
বরিশাল মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট’র নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন উজিরপুরে হিটস্ট্রোকে ধান কাটা শ্রমিকের মৃত্যু বরিশাল জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের শোক পবিপ্রবিতে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে কর্মশালা ও আলোচনা সভা। দুমকি উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১২ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল। এনডিবিএ'র শোক প্রকাশ গলাচিপায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুর মৃত্যু ঝালকাঠিতে বড় ভাইকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ছোট গ্রেফতার ২৪ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি বরিশালের সুইমিংপুল কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ,ডক্টর ,আ ন ...

বরিশালে যুবলীগ নেতাকে হত্যার মিশন ব্যার্থ ! মূমূর্ষ অবস্থায় ঢাকায় প্রেরণ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

শাকিব বিপ্লব:

বরিশালে আইন-শৃংঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার রাতে এক যুবলীগ নেতাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। অনেকটা অপহরনের স্টাইলে সাইদুর রহমান বাহাদুর নামক রাজনৈতিক ঘরনার এই যুবককে রূপাতলী স্কুল সংলগ্ন আরাফাত হাউজিং এর মধ্যে তুলে নিয়ে প্রথমে চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করে। সেই সাথে ঘাড় ও একটি হাত ভেঙে-মুচড়ে দেয়। গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে এসময় বেধম প্রহারে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। অবশ্য রাত ৯ টার ঘটে এই ঘটনা রাজনৈতিক নয়, পারিবারিক দ্বন্দে আপন দুলাভাই প্রতিশোধ নিতে নিজ শ্যালক বাহাদুরকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলো।
বাহাদুরের পরিবারের কাছে তার বোন শাহানারা আক্তার চায়না ফোন করে আনন্দ প্রকাশ করায় ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। এছাড়া বাহাদুরের উপর হামলার পর দুলাভাই মহসিন তার দলবল নিয়ে যেতে দেখছে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী। রেডিও সেন্টারের পাশের মসজিদে তারাবীহের নামাজ শেষে মুসল্লিরা বের হয়ে অস্ত্র হাতে তাদের দেখে ঘিরে ফেলেছিলো। কিন্তু ডাকাত তাড়ানোর কথা বলে কৌশলে ঐ স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়।
জানা গেছে, বাহাদুর ২৫নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা। তার বড়ভাই মহানগর যুবলীগ নেতা মিল্টন এই তথ্য নিশ্চিত করে বরিশাল বাণীকে বলেন, একটি জমি নিয়ে দ্বন্দের সূত্র ধরেই আপন বোনজামাই মহসিন বেশ কিছুদিন ধরে একটি অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকিস্বরূপ সতর্কবার্তা দিয়ে আসছিলো। ঘটনাচক্রে গতকাল শুক্রবার রাত ৯ টার কিছু পর বাহাদুর ওষুধের প্রয়োজনে নিজ বাড়ি রূপাতলী বটতলা থেকে অনতিদূরে কালিজিরা বাজারে মোটরসাইকেল চেপে রওয়ানা দিয়ে কিছুদূর যাওয়া মাত্রই বরিশাল-ঝালকাঠি সড়কে পাশে “পদ্মা ক্যাপ” নামক একটি ওষুধ কোম্পানির সামনে তার গতিরোধ করে।
মুখোশ পড়া ৫ থেকে ৬ যুবক তার সাথে ঈদ সম্পর্কিত কথা বলার প্রয়োজনীয়তা উচ্চস্বরে জানিয়ে গাড়ি থামানো মাত্র বাহাদুরকে গামছা দিয়ে চোখ ও কষ্টেপ দিয়ে মুখ বেঁধে টেনে হিচঁড়ে আরাফাত হাউজিং এর ভিতর একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরে নিয়ে যায়। এরপর শুরু হয় তার উপর নির্দয় আচরন। প্রথমে তার চোখে মরিচের গুড়া ছিটিয়ে দিয়ে স্ক্রুড্রাইভার দিয়ে খুচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে। পর্যায়ক্রমে ডান হাত ও ডান কাঁধ পিটিয়ে ভেঙে দেয়। বাহাদুরের ভাষ্য, তিনি অনুমান করছিলেন তার বুকের উপর একাধিক ব্যাক্তি দাঁপাতে থাকে। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ধারনা করা হচ্ছে, বাহাদুর মারা গেছে এমনটি ভেবে তাকে ফেলে রেখে যায় ঐ নির্জন এলাকার ঘরে। এর কিছুক্ষণ পরই তারাবীহের নামাজ শেষ হলে এক যুবক ঐ পথ ধরে যাওয়ার সময় গোঙানির আওয়াজ শুনে কাছে গিয়ে দেখে পড়ে আছে রক্তাক্ত বাহাদুর। খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা প্রথমে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসকরা তার চোখ ও শারিরীক অবস্থা বিবেচনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলে পারিবারিক উদ্যোগে রাত ১২টার দিকে অচেতন অবস্থায় এ¤ু^্যলেন্সযোগে রওয়ানা দেয়।
মিজানুর রহমান মিল্টন আজ শনিবার দুপুরে বরিশাল বাণীকে জানান, সকাল ৬টা নাগাদ ঢাকা পৌছানোর পর বাহাদুরকে মেডিকেলে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসায় শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও চোখ আর ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই, এমনটি জানিয়ে শেরে বাংলা নগরস্থ চক্ষু হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে। এরিপের্ট লেখার সময় বিকেল ৪টায় সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, বাহাদুরেকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে রূপাতলীতে খবর ছড়িয়ে পড়েছে , বাহাদুরের মৃত্যু ঘটেছে। কীভাবে হামলা এবং কারা এর সাথে জড়িত তা শুক্রবার রাতেই প্রকাশ পেয়ে যায়। বরিশাল মহানগর যুবলীগের অন্যতম সদস্য মিল্টন জানান, মহসিন বোনজামাই হলেও আচরনগত কারনে তাদের সাথে সম্পর্ক ভালো নেই। মহসিনের আদি বাড়ি নলছিটির দপদপিয়া ইউনিয়নের গোয়লকাঠী গ্রামে। রূপাতলী হাউজিংয়ে ৯নং সড়কে হাজী ম্যানশন নামে একটি ভবন নির্মাণ করে সেখানে স্থায়ী ভাবে বসবাসকারী মহসীনের বিরুদ্ধে বহু পূর্ব থেকেই ভ’মিদস্যুতার অভিযোগ রয়েছে। এসব কারনেই শ্বশুরালয়ের সাথে সম্পর্কের দূরত্ব আরও গভীর হয় গত মাস তিনেক পূর্বে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইতিপূর্বে স্থানীয় নেতৃত্ব নিয়ে নানান বিয়োগাত্মক ঘটনায় রূপাতলী এলাকার চেয়ারম্যান বাড়ীর সন্তান বাহাদুরদের ঘরের দক্ষিণ পাশের সম্পত্তির একটি অংশ সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বরিশাল মহানগর বিএনপি নেতা জিয়াউদ্দীন সিকদার তাদের কাছ থেকে ক্রয় করে। পরবর্তীতে তিনি ঐ সম্পত্তি সাবেক সেনা সদস্য ইসমাইল হোসেনের কাছে বিক্রয় করে দিলে হঠাৎ বোনজামাই মহসিন সেখানে বাগড়া দেয়। সম্পত্তির কিছু অংশ দাবি করে সেখানে প্রাচীর গড়ে তোলে। এনিয়ে কয়েকদফা শালিশ-বৈঠকে মহসিন বেইজ্জতি হন।
মহসিনের ধারনা , তার ৩ শ্যালক বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তিনি সুবিধা করতে পারেননি উপরন্তু সামাজিকভাবে হেয় হয়েছেন। এমন অভিযোগ তুলে মহসীন তার অপর দুই শ্যালক মিজানুর রহমান মিল্টন ও তৌহিদুর রহমান তসলিমকে খিস্তিখেউর করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। পাল্টা প্রতিবাদ জানাতে বাহাদুর একপর্যায়ে মহসিনকে একটি থাপ্পড় দেয়। সেখান থেকেই প্রতিশোধের আক্রোশ দানা বাঁধে যা হত্যাকান্ডে রূপ দেয়ার পরিকল্পনায় অগ্রসর হয় ক্ষিপ্ত মহসিন। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে সেই চেষ্টাই চালানো হয় বলে বাহাদুরের পরিবারের দাবী।
এই হামলার পর ভাবা হয়েছিলো বাহাদুর আর বেঁচে নেই। এমনটি নিশ্চিত ভেবে ঐ রাতে যখন বাহাদুরকে শেবাচিমে নিয়ে যাওয়া হয় তখন বোন শাহানারা আক্তার চায়না তার মাকে ফোন করে পুত্র আর ফিরবে না জানিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে, এমনই ইঙ্গিত দেয়। এই দাবী করে মিল্টন এই প্রতিবেদককে জানান , তাদের ফোনালাপের রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাছাড়া এই হামলার পর মহসীন দলবল নিয়ে যাওয়ার পথে এলাকার পরিচিতজন মুসল্লীদের সামনে পড়ে জামাই হিসেবে রক্ষা পান। বরিশাল কোতয়ালী মডেল পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনার সাথে মহসিনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে । তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে, যদিও এবিষয়ে এখনও কোনো মামলা হয়নি।
উল্লেখ্য ভাগ্যসহায় বাহাদুর বেঁচে আছে। নচেৎ বিয়োগাত্মের তৃতীয় ঘটনা হতে পারতো চেয়ারম্যান বাড়ির ট্র্যাজেডিময় ইতিহাসে। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের ২৫নং ওয়ার্ড যা একসময়ের জাগুয়া ইউনিয়নের অন্তভর্’ক্ত এই বাড়ি থেকেই অত্র এলাকার নেতৃত্ব দেয়া নিয়ে ১৯৭৫ সালে আব্দুল ওয়াহেদ আততায়ীর হাতে নিহত হন। ১৫ বছরের ব্যাবধানে ফের হত্যার শিকার হন সাইদুল আলম। উভয়েই ছিলেন ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। সাইদুল আলম চেয়ারম্যান হত্যাকান্ড এযাবৎকালের মধ্যে বরিশালে আলোচিত হত্যাকান্ডের মধ্যে অন্যতম একটি।

সর্বশেষ