২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

বরিশাল উদয়ন স্কুলের ছাত্রের গলায় ফাঁসে আত্মহত্যা !

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বরিশাল বাণী: বরিশালের উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর এক ছাত্র গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
বুধবার (৩০ নভেম্বর)সকালে বরিশার নগরের কাউনিয়া ক্লাব রোড ঘোষ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আত্মহননকারী মনিশংকার মুন উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। সে বাকেরগঞ্জের কাকরধা দলিল উদ্দিন আহমেদ ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক মানষ কুমার রায়ের পালিত ছেলে।
মুনের বাবা জানান, তার দুই মেয়ে। কোন ছেলে নেই। তাই মুনের এক বছর বয়সে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার এক এলাকা থেকে দত্তক নেয়া হয়েছে। সেই থেকে নিজ সন্তানের মত বড় করা হয়েছে। তাকে কখনো বুঝতে দেয়া হয়নি সে দত্তক সন্তান।
মানষ কুমার রায় বলেন, মঙ্গলবার বাসায় ফিরে তার মাকে জানিয়েছে শিক্ষকরা চুল-দাড়ি কাটতে বলেছে। তা না হলে পরীক্ষার হলে বসতে দেবে না। এরপর তার মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চুল-দাড়ি কেটে বাসায় ফেরে। সন্ধ্যায় গৃহশিক্ষক পড়িয়ে যাওয়ার পর সে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ কক্ষের দরজা আটকে দেয়। এরপর থেকে তাকে ডাকাডাকি করা হলে কোন সারাশব্দ পাওয়া যায়নি। তাদের ধারণা ছিল হয়ত রাগ করে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু বুধবার সকালেও দরজা না খোলায় মুনের এক বন্ধুকে ডেকে এনে ঘরে দেয়ালের উপর ফাঁক দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করানো হয়। এরপর তারা দেখতে পান পড়ার টেবিলের পাশে জানালার গ্রিলের সাথে ঝুলছে।
যদিও হলে বসতে না দেয়ার বিষয়ে উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্যামুয়েল বলেন, অনুমতি পত্র দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষার হলে কেউ এ ধরনের কথা বলছে কিনা জানি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা সবাই বসেছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে ঘটনাস্থলে থাকা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির বিভাগীয় আহবায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, স্কুল থেকে মুনকে চুল ও দাড়ি কাটতে চাপ প্রয়োগ করে। এছাড়াও ঠিকমতো পড়াশুনা করেনি। এ নিয়ে পরিবার থেকে চাপ দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে হয়তো সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
অধ্যাপক হাবুল বলেন, শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদাসীনতা এবং সন্তানদের আত্মহত্যার প্রবনতা এর জন্য দায়ী। বিষয়গুলো অভিভাবক থেকে শুরু করে স্কুল শিক্ষক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ভেবে দেখতে হবে এবং এ থেকে পরিত্রানের উপায় বের করতে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বরিশাল মেট্রোপলিটনের কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হরিদাস নাগ জানান,পালিত সন্তান হওয়ার বিষয়টি মুন জানতে পেরে এ নিয়েই বেশি বিষণ্ণতায় ভূগতো। যা তার বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করেছে। তবে পরিবার তাকে সেরকম দেখতো না কখনো। মুনের পড়াশুনার জন্য তিনজন শিক্ষক রাখা ছিলো তারপরও সে পড়াশুনায় খারাপ করতে থাকে। এ নিয়ে পরিবার কিছুটা চিন্তাও ছিলো, তারা মুনের সাথে এ নিয়ে কথাও বলে। তারপরও মুন মুখে ফ্রেন্স কাট দাড়িও রেখেছিলো। যা বিদ্যালয় থেকে কাটতে বললেও শোনেনি। সবশেষ মুখের দাড়ি কাটার জন্য শিক্ষকরা পরীক্ষার আগে চাপ দেয়। আর এ সব নিয়েই সে আরও বেশি বিষণ্ণতায় ভূগতে শুরু করে এবং আত্মহনন করে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, পড়ার টেবিলের পাশের জানালার গ্রিলের সাথে ঝুলছিল মুনের মরদেহ। সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। পরিবার থেকে কোন অভিযোগ দেয়া হবে না বলে জানান হরিদাস নাগ।

সর্বশেষ