নিজস্ব প্রতিবেদক :::: জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের অভাবে কাঙ্ক্ষিত শিল্প-কারখানা গড়ে না ওঠায় ভোলা থেকে গ্যাস সংযোগ বরিশালবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হলে নগরবাসীর এই দাবি পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার অঙ্গীকার করেছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরীর বান্দরোডের সাউথ কিং চায়নিজ রেস্তোরায় ঘোষণা করা ১৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহারে এই অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন হাতপাখা প্রতীকের মেয়র পদপ্রার্থী।
নির্বাচিত হলে নিজে খাদেম হয়ে নগরীর সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ১৭ দফা ইশতেহারের প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব ও পরবর্তী বহু ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী বরিশাল শহর। কীর্তনখোলা নদীর তীরে মোঘল আমলে এ শহর গড়ে ওঠে। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় ২০০২ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়া বরিশাল নগরী আজও অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মনে রাখবেন ভোট একটি পবিত্র আমানত। এটাকে যথেচ্ছা প্রয়োগ করা আমানতের খেয়ানত। কাউকে ভোট দেওয়া কোনো আবেগ বা দলীয় বিষয় নয়; বরং এটি একটি নৈতিক বিষয়। তাই বুঝে-শুনে, চিন্তা-ভাবনা করে ভোট দিতে হবে। নগরজীবনে স্বস্তি, শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে তিনি তার ইশতেহারে খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল নিয়ন্ত্রণ, সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, ভিক্ষুকদের জীবনমান উন্নয়ন, বস্তিবাসীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করার কথা বলেছেন।
নগরবাসীর নিরাপদ বাসস্থান ও কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করতে হোল্ডিং ট্যাক্স ও সকল ধরনের লাইসেন্স ফি সহনশীল পর্যায়ে আনা, বিড়ম্বনা ছাড়াই নতুন বিল্ডিং প্লান পাশসহ সব ধরনের নাগরিক সেবা সহজ করার কথা জানিয়েছেন।
নগরের বাসিন্দাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে টেকসই ও উন্নত রাস্তা-ঘাট নির্মাণের পাশাপাশি প্রতিটি রাস্তায় সড়কবাতি, প্রশস্ত ফুটপাত, আধুনিক ট্রাফিক সিগনাল, আইল্যান্ড ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন।
এ ছাড়া পায়ে চালিত রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ির লাইসেন্স ফি মওকুফ, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজি-অটোবাইক এবং জ্বালানি তেলচালিত থ্রি হুইলারের জন্য বিশেষ অনুমতিপত্র দেওয়া হবে।
নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আধুনিক মানের ড্রেন নির্মাণ, খাল খনন ও পরিকল্পিত ইউটিলিটি টানেল ও সুয়ারেজ লাইন নির্মাণ করবেন তিনি।
হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষার পাশাপাশি নগরবাসীর সুস্বাস্থ্যের জন্য ফ্রি মেডিকেল সার্ভিস, গর্ভকালীন ফ্রি চিকিৎসা, পরিমিত পরিসরে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে মসজিদ, মন্দির ও গির্জাভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষা চালু, দরিদ্রদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি, বেকারদের জন্য বহুমুখী কারিগরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার লক্ষ্যে ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ, ঢাকনাসহ ডাস্টবিনের ব্যবস্থা, পরিবেশ দূষণ রোধ, মহল্লাভিত্তিক মশা নিধন করা হবে বলে ইশতেহারে জানিয়েছেন তিনি।
নারীদের জন্য পৃথক মহিলা মার্কেট নির্মাণ, নারী নির্যাতন ও যৌতুক প্রথা উচ্ছেদ, ইভটিজিং প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ ছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সব ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘সম্প্রীতি পরিষদ’, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ‘নগর বিশেষজ্ঞ কমিটি, ওলামায়ে কেরাম, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সমন্বয়ে ‘পরামর্শ পরিষদ’ গঠন করার কথা ইশতেহারে জানিয়েছেন ফয়জুল করীম।
একইসঙ্গে অনুষ্ঠানে বাসযোগ্য, টেকসই, উন্নত এবং আধুনিক ও নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হাতপাখা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন মুফতী ফয়জুল করীম।
এ সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম, কেন্দ্রীয় ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা সভাপতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের, কেন্দ্রীয় মহিলা ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।