২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম হবে ‘ভোলা সেতু’

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

অনলাইন ডেস্ক: দেশে দীর্ঘতম সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ব্যয় কম হলেও নতুন এই প্রকল্পটি পদ্মা সেতু থেকেও বড়। দ্বীপ জেলা ভোলাকে বরিশালের সঙ্গে যুক্ত করতে এই সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে তেঁতুলিয়া ও কালাবাদোর নদীর ওপর দিয়ে বরিশাল-ভোলা সড়কে দেশের দীর্ঘতম ‘ভোলা সেতু’ নির্মাণ করা হবে।

২০১৯ সালের অক্টোবরে এই সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণে নীতিগত অনুমোদন দেয় সরকার। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। এখন অর্থের উৎস খোঁজা হচ্ছে। দাতা সংস্থার সবুজ সঙ্কেত মিললেই শুরু হবে নির্মাণ কর্মযজ্ঞ। তবে চীনের পক্ষ থেকে শেষ পর্যন্ত এ প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়ে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে তেঁতুলিয়া ও কালাবাদোর নদীর ওপর দিয়ে বরিশাল-ভোলা সড়কে ভোলা সেতু নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সেতু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে আনুমানিক ১২ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে এবং আগামী বছরের জুন মাসে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রস্তাবিত ভোলা সেতুর প্রভাব পদ্মা সেতুর মাধ্যমে আরও জোরদার করার চিন্তা করা হচ্ছে। সেতু বাস্তবায়নের পরে ভোলা জেলা সরাসরি পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হবে। প্রস্তাবিত ভোলা সেতুটি নির্মাণ হলে পদ্মা সেতুর সুবিধা আরও বাড়বে বলে আশা করছে সেতু বিভাগ।

সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোঃ ফেরদৌস বলেন, ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু প্রকল্পের আওতায় দুটি নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হবে। মাঝে চরের ওপর চার কিলোমিটার ভায়াডাক্ট তৈরি করা হবে। সেতু নির্মাণে আনুমানিক ১২ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সেতু নির্মাণে নক্সা চূড়ান্ত হয়েছে ইতোমধ্যে। তবে নির্মাণ শুরুর পর খরচ আরও বেশি হতে পারে বলে জানান ফেরদৌস। সেতু নির্মাণ হলে ভোলা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আনার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সেতুটি দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করার সুযোগ থাকবে বলেও জানান ফেরদৌস।

সময় বাঁচবে হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ॥ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) জানিয়েছে, তারা সেতু নির্মাণের জন্য জরিপ করেছে এবং সেতুর সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করেছে। সেতুটি নির্মিত হলে দক্ষিণের এই দুটি জেলার মধ্যে যাতায়াতে সময় কম লাগবে এবং ভোলা থেকে গ্যাস সরবরাহ করা সহজ হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব বেলায়েত হোসেন বলেছেন, আমরা এই সেতু নির্মাণে অর্থায়নকারী খুঁজছি। তিনি জানান, শীঘ্রই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) চিঠি দিয়ে সেতুর তহবিল সংগ্রহের জন্য অনুরোধ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বিবিএর তিনটি প্রকল্পে অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছিলেন এবং ভোলা সেতু তার মধ্যে একটি।

এদিকে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জরিপ ও আলোচনার ভিত্তিতে ভোলার ভেদুরিয়া ফেরিঘাট এবং বরিশালের লাহারহাট ফেরিঘাট বরাবর সেতুটি বানানোর জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ১০ কিলোমিটার সেতুর মধ্যে প্রায় তিন কিলোমিটার শ্রীপুর চরের ওপর দিয়ে যাবে।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছিলেন, ভোলার শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের প্রায় ৩২ কিলোমিটার উত্তরে ভেদুরিয়া ইউনিয়নে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার পর, ভোলার গ্যাসের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুটে।

বরিশাল বিভাগের পূর্ব অংশ ভোলা জেলা। তেঁতুলিয়া নদী একে মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করেছে। প্রায় ৩ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার আয়তন এবং প্রায় ২০ লাখ ৩৭ হাজার জনসংখ্যার জেলা ভোলার সঙ্গে বরিশালের সরাসরি স্থল যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। ভোলা যাওয়ার একমাত্র উপায় নদীপথ। নদীপথে বরিশাল থেকে ভোলার ভেদুরিয়া যেতে লঞ্চে প্রায় দুই ঘণ্টা এবং স্পিডবোটে প্রায় ৪০ মিনিটের মতো সময় লাগে। ভেদুরিয়া থেকে ভোলা সদর উপজেলায় যেতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে। বরিশালের লাহারহাট ফেরিঘাট থেকেও লঞ্চে ভেদুরিয়া যাওয়া যায়। এই ঘাট থেকে ভোলার ইলিশঘাট পর্যন্ত একটি ফেরি চলাচল করে।

জরিপ প্রতিবেদন 

সেতুর সম্ভাব্যতা জরিপের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোলা থেকে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন নৌকা ও লঞ্চের ওপর নির্ভরশীল। যা এই জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলছে। স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, সেতু হলে অনেকেই প্রতিদিন বরিশাল থেকে যাতায়াত করে কাজ করতে পারবেন। গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগে আসবে বিরাট পরিবর্তন। যা অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

তাছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফেরি চলাচলে সমস্যা হলে মাঝে-মাঝেই তারা বরিশাল থেকে ভোলায় ওষুধ পাঠাতে সমস্যায় পড়েন। তাই চলমান যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এই সেতু মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

সেতুর সম্ভাব্যতা জরিপে বলা হয়েছে, সেতুর কাজ শেষ হলে ভোলা এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসকারীদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নতি হবে। সেতু প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

কাজের অবস্থা 

গত বছরের ৫ নবেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, খুব শীঘ্রই বরিশাল ভোলা সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হবে। তিনি রাজধানীর সেতু ভবনে সেতু বিভাগ এবং বিবিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেছিলেন, সেতুর ডিপিপির (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফর্মা) কাজ চলছে এবং অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা চলছে। চীন প্রকল্পটিতে অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে শুরু করে সেতুর সম্ভাব্যতা জরিপ গত বছরের আগস্টে শেষ হয় বলে জানান বিবিএর এক কর্মকর্তা।

এই জরিপ সম্পন্ন করেছে ভারতের এসটিইউপি কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড, যুক্তরাজ্যের সিওডব্লিউআই কনসাল্টিং এবং বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেড ও ডেভ কনসালট্যান্টস লিমিটেড।

জরিপে ধারণা করা হয়, সেতুটি দিয়ে ২০২৪ সালে ৬ হাজার ৯৯০, ২০৩৪ সালে ১৫ হাজার ৬২০ এবং ২০৫৪ সালে ৫৬ হাজার ৭০১টি গাড়ি চলাচল করবে।

সম্প্রতি, বিবিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী মুহাম্মদ ফেরদৌস বলেছেন, জরিপ করা হলেও আমরা তাদের আরও কিছু পর্যালোচনা করতে বলেছিলাম। আশা করি তাদের কাজ শীঘ্রই শেষ হবে।

তিনি আরও বলেছেন, আমরা ইআরডিকে অনুরোধ করব অর্থায়ন করতে আগ্রহীদের খুঁজে বের করতে। সরকারের পক্ষ থেকে ইআরডি বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করে থাকে। চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়া ইতোমধ্যে প্রকল্পটি অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে।

তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল সেতুতে রেললাইন না থাকায় এর ব্যয় পদ্মা সেতুর থেকে অনেক কম হবে। তাছাড়া জরিপ বলছে যে, নদী শাসনের জন্য তেঁতুলিয়া নদী পদ্মার মতো কঠিন হবে না।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সালের আগেই তারা সেতুর কাজ শেষ করতে চান। তবে প্রকল্পের অর্থায়নের পর শুরু ও শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হবে।

সূত্র: জনকন্ঠ

সর্বশেষ