১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বানারীপাড়ায় গৃহবধু মাহমুদার ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

রাহাদ সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি॥
বরিশালের বানারীপাড়ায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধু মাহমুদা (২৮) হত্যা মামলার আসামীদের ফাঁসির দাবিতে তার হতদরিদ্র আহত বৃদ্ধ বাবা ও মা সহ পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ৭ জুলাই মঙ্গলবার বিকালে বানারীপাড়া প্রেসক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে নিহত মাহমুদার পিতা তোতা মিয়া লিখিত বক্তব্যে তার মেয়ের ঘাতকদের ফাঁসির দাবি জানান।এসময় তিনি তার একমাত্র অন্তঃ সত্ত্বা ও রোজাদার মেয়ের হত্যকান্ডের শিকার হওয়ার সেই দিনের ঘটনা বর্ননা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি অভিযোগ করেন আসামীরা জামিনে বের হয়ে তার ঘর ভাংচুর করা সহ তাকে ও মামলার বাদী তার ছেলে সবুজকে হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদেরকে প্রতিনিয়ত মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আসামীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের
রক্ষায় পার্শ্ববর্তী পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির সুঠিয়াকাঠি গ্রামের আলম মহুরী ও রুসিয়া নামের এক নারী অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিহত মাহমুদার একমাত্র ছেলে জিসান (৯), ভাই মামলার বাদী সবুজ,মা হাফিজা বেগম,ভাবি সীমা,চাচাতো ভাবী পারুল,চাচি রাশিদা,দাদি মিনারা বেগম প্রমুখ। প্রসঙ্গত উপজেলার মধ্য ইলুহার গ্রামের তোতা মিয়া হাওলাদার ও তার চাচাতো ভাই গাফ্ফার হাওলাদারের পরিবারের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিলো। এর জের
ধরে ২৫ এপ্রিল প্রথম রোজার দিন দুপুরে দু’পক্ষের মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে আসামীরা তোতা মিয়া হাওলাদার(৬৫),তার স্ত্রী হাফিজা বেগম(৫৫) ও বেড়াতে আসা
তাদের একমাত্র মেয়ে রোজাদার চার মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা মাহমুদাকে কুপিয়ে ও
পিটিয়ে আহত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পরে মাহমুদা বেগমকে আশংকাজনক অবস্থায় বরিশাল
শেবাচিম হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখান থেকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে রেফার করার পর চিকিৎসাধিন অবস্থায় ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল
৯টায় সে মারা যায়। ওই হাসপাতালে তার লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পরে
বানারীপাড়ায় মধ্য ইলুহার গ্রামে স্বামীর বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন
করা হয়। এ ব্যপারে নিহত ওই গৃহবধুর ভাই সবুজ বাদী হয়ে চাচা গাফ্ফার
হাওলাদার,চাচি দোলেনা বেগম(৪৫),তিন সহোদর চাচাতো ভাই ফোরকান
(২৬),ফরিদ(২৪)ও শাকিল(১৯)কে আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যা মামলার ৫ আসামীকে ৯ জুন গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দিন দুপুর সাড়ে
১২টায় বানারীপাড়া পৌর শহরের বাসষ্ট্যান্ড এলাকা থেকে বানারীপাড়া থানার
ওসি শিশির কুমার পাল ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাফর
আহম্মেদের নেতৃত্বে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হত্যা মামলার
এজাহারনামীয় আসামী গাফ্ফার হাওলাদার(৫৫),তার স্ত্রী দোলেনা বেগম(৪৫),তার
তিন ছেলে ফোরকান (২৬),ফরিদ(২৪) ও শাকিল(১৯)কে গ্রেফতার করে। পরে ১৮ জুন
আসামী গাফ্ফার হাওলাদার(৫৫),তার স্ত্রী দোলেনা বেগম(৪৫) ও ছোট ছেলে
শাকিল(১৯) জামিনে বের হন। গত ২৭ জুন শনিবার রাত ১টার দিকে জামিনে থাকা
আসামীদের নেতৃত্বে অজ্ঞাত লোকজন হত্যা মামলার বাদী সবুজের বাড়িতে গিয়ে
তাকে ও তার পিতা তোতা মিয়াকে নাম ধরে ডেকে খুঁজতে থাকে। এক পর্যয়ে তারা
ঘরের বেড়া ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে বাদীর পরিবারের লোকজন
ডাকচিৎকার দেয়। এসময় বাড়ির অন্য ঘরের লোকজন এগিয়ে এলে আসামীরা বাদী সবুজ
ও তার পিতা তোতা মিয়াকে মামলা তুলে না নিলে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
এদিকে এর আগের দিন ২৬ জুন শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইলুহার গ্রামের
বাবুলের দোকানের পশ্চিম পাশের রাস্তায় বাদী সবুজকে একা পেয়ে আসামী
ফোরকানের মামা মনির ও কবির এবং চাচা খলিল মামলা তুলে নিতে নানা হুমকি
ধামকি দেয়। অভিযোগ রয়েছে মনির ও কবিরকে হত্যা মামলায় আসামী করে থানায়
এজাহার দেওয়া হলেও রহস্যজনকভাবে মামলা রুজুর সময় তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়।
এদিকে এ দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে তার ও পরিবারের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে
হত্যা মামলার বাদী সবুজ ২৮ জুন সকালে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। এর
প্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাফর আহম্মেদ ২৯
জুন সোমবার বিকালে বিষয়টি তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে যান। এ প্রসঙ্গে
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বানারীপাড়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাফর
আহম্মেদ বলেন অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করার পাশাপাশি বাদী ও তার
পরিবারের নিরাপত্তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন
নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশীট প্রণয়নের প্রক্রিয়া
চলছে।

সর্বশেষ