১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাবুগঞ্জের সন্ধ্যা নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবীতে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

স্টাফ রিপোর্টার :
নদী ভাঙ্গনের কবল হতে রক্ষা পেতে ‘বালুমহল’ ইজারা বন্ধের দাবীতে বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছে বাবুগঞ্জবাসী।
আবেদন সূত্রে জানাযায়, বাবুগঞ্জ উপজেলার মোল্লার হাট সংলগ্ন সন্ধ্যা নদী হতে বালু উত্তোলন করছে একটি মহল। সরকারী ইজারায় তারা বালু উত্তোলনের কারনে পার্শ্ববর্তী এলাকায় নদী ভাঙ্গন প্রবল আকার ধারণ করছে। ইজারার নামে কিছু টাকা সরকারী খাতে জমা দিয়ে পুকুর চুরি করছে বালু ব্যবসায়ীরা। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নদী তীরবর্তী মানুষ, সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
এই নদী ভাঙ্গনের কবল হতে রক্ষা পেতেই এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এলাকাবাসী জানায় নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক সরজমিন পরিদর্শন পূর্বক ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। এলাকাবাসী জানায়, আমাদের ত্রাণের দরকার নেই। নদী ভাঙ্গন রোধ করতে চাই। এ এলাকা হতে বালু উত্তোলন বন্ধ হলেই নদী ভাঙ্গন বন্ধ হবে। রক্ষা পাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি যাদুঘর রাস্তাঘাট সহ সরকারের কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন মূলক প্রতিষ্ঠান।
বরিশালে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি যাদুঘর এবং তার বাড়ির পাশের সন্ধ্যা নদী থেকে বালু উত্তোলন
বন্ধের দাবীতে ২০১৯ সালের ২০১৯ সালের মে মাসে আদালতে রিট দায়ের করেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং পশ্চিম ভুতেরদিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের মাল।
রুলে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি যাদুঘর, বাড়ি, স্কুল, মাদ্রাসাসহ অন্যান্য স্থাপনা রক্ষায় বালু উত্তোলন বন্ধের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এছাড়াও সন্ধ্যা নদী থেকে বালু উত্তোলনে ইজারা দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ভবিষ্যতে ওই এলাকায় বালু উত্তোলনের ইজারা না দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
চার সপ্তাহের মধ্যে ভূমি সচিব, পরিবেশ এবং গণপূর্ত সচিব, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, বরিশালের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ১১ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের স্মৃতি যাদুঘর, বাড়ি রক্ষায় জেলা প্রশাসনের কাছে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলামের করা আবেদন এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য,
বর্ষা মৌসুমের আগেই কীতর্নখোলা, সন্ধ্যা ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পরেছেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বসতভিটা, হাট-বাজার, সড়ক, আবাদী জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
নদী ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে সরকারী-বেসরকারি অসংখ্য স্থাপনা, ঘরবাড়ি ও বাজার। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে জেলার বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের মসজিদবাড়ি গ্রামের দাসেরহাট বাজারের অদূরে হঠাৎ করে সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে ১২টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মৃধা বলেন, আকস্মিকভাবে সন্ধ্যা নদীর তীরে বসবাসরত রতন বাড়ৈ, নিকুঞ্জ দেউরী, মনি বাড়ৈ, অনিল দেউরী, যশরত নাটুয়া, সুনীল মাল, হাবিব সিকদার, রাজে আলী সিকদার, নির্মল বাড়ৈ, অমৃত মধু, শ্যামল গাইন ও কৃষ্ণ বৈদ্যর বসতভিটা, গাছপালাসহ আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
কীর্তনখোলার চরকাউয়া নদী ভাঙ্গনরোধে সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক মুনাওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, বর্ষা মৌসুমের আগেই গত কয়েকদিন ধরে নদী ভাঙ্গনে দিশাহারা হয়ে পরেছে এই এলাকার মানুষ। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানোর পর তারা ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন। তারা খুব শীঘ্রই ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ শফিউদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী সমাধান করা হবে।
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাতে নিশ্চিহ্ন বিশখালী নদীর তীরবর্তী এলাকার হাজারো পরিবারের ঈদ কেটেছে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যদিয়ে। বিশখালীর ভয়াবহ ভাঙন ও তীর রক্ষা বাঁধ ধ্বসে যাওয়ায় ভিটে-মাটি হারানোর আশঙ্কায় তাদের মাঝে এ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আমফানের আঘাতে ভেঙে যাওয়া বিশখালীর তীরবর্তী কাঠালিয়া উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ২৬ কিলোমিটারের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন। তবে জরুরি ভিত্তিত্বে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধের স্থায়ীভাবে পুনর্র্নিমাণ ও নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করেছেন ওই উপজেলার আমুয়া, কাঠলিয়া সদর, শৌলজালিয়া ও আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
সূত্রে আরও জানা গেছে, পুরো বাঁধ ভেঙে গেলে অরক্ষিত হয়ে পরবে গোটা কাঠালিয়া উপজেলা। হুমকিতে পরবে উপজেলা কমপ্লেক্সসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমাদুল হক মনির বলেন, জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার ও বিশখালীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জরুরি ভিত্তিত্বে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা না গেলে উপজেলার ৮০ শতাংশ এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলী জমি ও সরকারি অফিস-আদালত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থায়ীভাবে ভাঙ্গনরোধের জন্য আমুয়া ইউনিয়ন থেকে আওরাবুনিয়া পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলাকায় বøক দিয়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য তিনি জোর দাবি করেন।
সবশেষ আমফানে ক্ষতিগ্রস্থ কাঠালিয়ার বিশখালীর তীরবর্তী নিশ্চিহ্ন বেড়িঁবাধ ও নদীভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক জোহর আলী বলেন, কাঠালিয়াকে আর ভাঙতে দেওয়া যাবেনা, ভাঙন থেকে রক্ষা করা হবে। এজন্য দ্রæত সময়ের মধ্যে বাঁধের সংস্কার ও নদীর তীর রক্ষায় ২৬ কিলোমিটার কাজ বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
সূত্রমতে, দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সময় ধরে বিশখালী নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে অসংখ্য হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, হাজার হাজার একর ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশ্রয়কেন্দ্রসহ বহু স্থাপনা। বর্তমানে হুমকির মুখে পরেছে উপজেলা কমপ্লেক্সসহ সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি-ঘর।

সর্বশেষ