২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাবুগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে হয়রানি, দুই ছেলের কারাদণ্ড!

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

নিজস্ব প্রতিবেদক ::: বরিশালের বাবুগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধার জমির ওপর দিয়ে পানি নিস্কাশনের সরকারী ড্রেন নির্মাণে বাঁধা দেয়ায় তার (মুক্তিযোদ্ধা) দুই ছেলেকে তিন মাসের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট।

আজ সোমবার দুপুরে উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের আরজী কালিকাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বলেন, আমার ক্রয়কৃত ও পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৪২ শতক জমির ওপর বিগত পাঁচবছর পূর্বে আমি বসত বাড়ি নির্মাণ করেছি। ইউপি নির্বাচনে ১নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য মোসলেম উদ্দিনের পক্ষালম্বন না করায় আক্রোশের জের ধরে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আমার বাড়ির ওপর দিয়ে ফসলি জমির পানি নিস্কাশনের ড্রেন নির্মাণ করানো হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলাও দায়ের করেছি (মামলা নং-০৪/২০২৩)। আমার জমি ছাড়া পাশের অব্যবহৃত জমি থেকেও ওই পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা যায়। কিন্ত ইউপি সদস্যর ইন্ধনে উদ্দেশ্য প্রণেদিতভাবে আমাদের ভিটাবাড়ি নষ্ট করে উপজেলা প্রশাসন ড্রেন নির্মাণ করছে।

আব্দুল হালিম বলেন, সম্পত্তি রক্ষার জন্য কথা বলায় ইউপি সদস্যর কথা মতো উপজেলা প্রশাসন আমাদের নির্যাতন করছে। এমনকি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে থানা পুলিশ আমার পরিবারের সদস্যদের আটক করে নিয়ে গেছে। আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাই। বিনা কারণে আমার ১০ লাখ টাকার সম্পদ নষ্ট করেছে। আমার ছেলেদের সাজা দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে হয়রানি করায় আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চাই।

তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বলেন, আমার জমির ওপর দিয়ে জোরপূর্বক ড্রেন নির্মাণ করানো হবে। এ জন্য বাঁধা প্রদান করায় আমার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজনদের আটক করা হবে। ছেলেদের কারাদণ্ড দেওয়া হবে, এ জন্যতো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজের জীবন বাঁজি রেখে যুদ্ধ করিনি। আমি পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করছি।

মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারকে হয়রানীর অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত ফাতিমা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম কিছু সরকারী জমি দখল করে নিজের দাবি করেন। আমরা সেই জমিতে সরকারী ড্রেন নির্মাণ করবো। ওখান থেকে ড্রেন হলে বর্ষায় ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা হবেনা। জমি নিজের দাবি করে মুক্তিযোদ্ধা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন। কিন্ত আমি সেই আদালত থেকে কাজ করার অনুমতি নিয়ে এসেছি। তাছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ক্ষতিপূরণ দিতে চাইলেও তিনি তা গ্রহণ করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। ইউএনও আরও বলেন, সোমবার দুপুরে ড্রেন নির্মানের কাজ শুরু করলে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা বহিরাগতদের নিয়ে সরকারী কাজে বাঁধা প্রদান করেন। তারা চকলেট বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আমার এবং পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। এজন্য তাদের আটক করা হয়েছে। তাছাড়া তারা বোমা কোথায় পেল সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। আটককৃতদের মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার দুই ছেলে নাঈম হাসান ও মাইনুল ইসলামকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

তবে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মোসলেম উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার ওসি (তদন্ত) লোকমান হোসেন জানান, ঘটনার সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থলে ছিলেন। তার নির্দেশে এখন পর্যন্ত নয়জনকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমান আদালতে দণ্ডপ্রাপ্তদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ