বরগুনা প্রতিনিধি ::: বরগুনার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের শিংড়াবুণিয়া গ্রামে ১২ বছর পূর্বে এক মানষিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় জড়িত থাকায় মামলার প্রধান আসামি ওই ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সবুজকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদ ১ শাখা।
সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধানের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তার সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ ছাড়াও একই কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে কেন তাকে চূড়ান্তভাবে অপসারণ করা হবে না জানতে চেয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের বড় তালেশ্বর গ্রামের মো. লিটন মোল্লা স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে হত্যাকাণ্ডে চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং সিআইডির তদন্তে তিনি প্রধান আসামি উল্লেখ করে তার অপসারণ দাবি জানিয়ে আবেদন করেন।
ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউনিয়ন পরিষদ-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধানের গত বছরের ২ নভেম্বর তারিখে স্বাক্ষরিত পত্রে বরগুনা জেলা প্রশাসকে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়।
প্রতিবন্ধীকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সরাসরি চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততা ও মামলায় প্রধান আসামি তিনি হওয়ায় বরগুনা জেলা প্রশাসক তাকে অপসারণের জন্য সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসকের সুপারিশ পাওয়ার পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালে ২২ মার্চ বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের শিংড়াবুনিয়া গ্রামে মানষিক প্রতিবন্ধী মো. হাবিবুর রহমান সিকদারকে চোর সন্দেহে আটক করে গ্রামবাসী। বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ওই ব্যক্তিকে মারধর করে। পরে তাকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসার পর চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সবুজ ও তার সহযোগীরা মুমূর্ষু ওই প্রতিবন্ধীকে পুনরায় বেধড়ক পেটান। পরে গুরুতর আহত অবস্থা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে এই হত্যায় ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সবুজ জড়িত ছিলেন না দাবি করে বলেন, ‘যখন শিংড়াবুনিয়া থেকে আমি খবর পাই একজনকে চোর সন্দেহে আটক করা হয়েছে, তখন আমি বামনা সদরে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ছিলাম। আমাকে যারা সংবাদটি জানিয়েছিল তাদের তখনই আমি বলেছি, যাতে তার ওপর কেউ আঘাত না করে। আমি বুকাবুনিয়া পরিষদে আসার পরে স্থানীয়রা আমার কাছে তাকে নিয়ে আসে। ততক্ষণে গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে তার অবস্থা সংকটাপন্ন হয়েছে। আমি পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার মৃত্যু হয়। আমি তার গায়ে হাত দেইনি। অথচ রাজনৈতিক শত্রুদের পরামর্শে আমাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অন্তরা হালদার বলেন, তিনি মন্ত্রণালয় থেকে চেয়ারম্যানের সাময়িক বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন পেয়েছেন।