২২শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

বারি মুগডাল ভাঙ্গানো মেশিন : দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্নপূরণ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

ওবায়দুর রহমান অভি,
দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন মুগ ডাল উৎপাদন হয়ে থাকে। এর বেশিরভাগ অংশ পটুয়াখালী এবং বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা উৎপাদন করে থাকে ‌ । বারি মুগ-৬ এই অঞ্চলে কৃষকদের  এক ফসলী জমিকে দুই ফসলী জমিতে রূপান্তর করেছে। মুগ ডাল আমিষের একটি অন্যতম উৎস। যা গরীব কৃষকদের আমিষের চাহিদা পূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে। কিন্তু এই অঞ্চলে উৎপাদিত এই মুগ ডালগুলো এ অঞ্চলের কৃষকরা খুব কমই ভক্ষণ করতে পারে। কারণ এই মুগ ডালের খোসা ছাড়িয়ে খাবার উপযোগী ডাল উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি সহজলভ্য হয়নি। ‌ সাধারণত দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত মুগ ডাল বড় বড় ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে বড় বড় মেশিনের সাহায্যে প্রক্রিয়াজাত করে অধিক মূল্যে বাজারে বিক্রয় করে থাকে যা কৃষকদের জন্য সহজলভ্য হয় না। কৃষকদের আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে, দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত মুগডাল কৃষকরা যাতে সহজে প্রক্রিয়াজাত করে ভক্ষণ করতে পারে এজন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ফার্ম মেশিনারী এন্ড পোস্টহারভেষ্ট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে কৃষকের ব্যবহার উপযোগী বারি মুগ ডাল ভাঙ্গানো যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে । এই যন্ত্রের সাহায্যে অতি সহজে ঘন্টায় ৪০ থেকে ৭০ কেজি মুগডাল ভাঙানো যায় । কৃষকের কাছে সহজ প্রাপ্য চার ঘোড়ার ডিজেল ইঞ্জিন কর্তৃক চালনা করা যায় । এ যন্ত্রটি স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকরা ব্যবসায়ী হিসেবে চালনা করতে পারে। যার ফলে প্রান্তিক কৃষকরা গ্রামগঞ্জে স্থানীয় কৃষিযন্ত্র সেবা দানকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। এ যন্ত্রটিতে তিনটি চাকা রয়েছে যার মাধ্যমে সহজেই এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে, এমনকি এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই যন্ত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত মুগ ডাল ভাঙার পরিমাণ খুবই নগণ্য। এমনকি এই যন্ত্রের মাধ্যমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় দুই ধাপে তেল মাখিয়ে ডাল ভাঙ্গালে ২০ থেকে ৩০ ভাগ আস্ত ডাল পাওয়া সম্ভব। 

নব উদ্ভাবিত এই যন্ত্রটির বিভিন্ন সুবিধাবলি কৃষক, যন্ত্র প্রস্তুত কারক, বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণ কর্মী ও সাধারণ জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য এফএমপিই ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, গাজীপুর ও সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগ, বিএআরআই পটুয়াখালীর আয়োজনে আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্রের সিসা-এমইএ  প্রকল্পের অর্থায়নে ৩০ এপ্রিল ২০২৪ রোজ মঙ্গলবার পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জামলাতে এক মাঠ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। 

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভ. মোঃ গোলাম কিবরিয়া, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, লেবুখালী, পটুয়াখালী ।

তিনি বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে এ যন্ত্রটি ছড়িয়ে দিতে বারি  উদ্ভাবিত এই যন্ত্রটির ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন।  মানসম্পন্ন প্রস্তুতকরণ নিশ্চিত করতে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানদের প্রশিক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

এ যন্ত্র উদ্ভাবনে আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃক পরিচালিত সিরিয়াল সিস্টেম ইনিসিয়েটিভ ফর মেকানাইজেশন এক্সটেনশন অ্যাক্টিভিটিস (সিসা-এমইএ) প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি যন্ত্র প্রস্তুতকারকদের সরাসরি অংশগ্রহণে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বারি  ও সিসা-এমইএ প্রকল্পের প্রধান গবেষক ডঃ মুহাম্মদ এরশাদুল হক জানান, এ যন্ত্র উদ্ভাবনের গবেষণার সাথে ঝিনাইদহ এর মাওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এবং বগুড়া এর হক মেটাল এই দুইটি প্রতিষ্ঠান সরাসরি জড়িত ছিলেন; ফলে এই যন্ত্র নির্ভুলভাবে প্রস্তুতকরণের ধাপগুলো ইতিমধ্যে ঐ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা রপ্ত করেছেন। মোঃ মাইনুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. এইচ, এম খায়রুল বাসার, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বিএআরআই পটুয়াখালী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ মোঃ নজরুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পটুয়াখালী।  আরও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এই যন্ত্র উদ্ভাবনের প্রধান গবেষক ড. মোহাম্মদ এরশাদুল হক, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এফ এম পি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বারি, গাজীপুর; আরো উপস্থিত ছিলেন ভ. খন্দকার মোঃ শফিকুল ইসলাম, হাব কো-অর্ডিনেটর, সিমিট বাংলাদেশ, খুলনা অঞ্চল; কৃষিবিদ মোকছেদুল আলম আরাফাত, হাব কোঅর্ডিনেটর, সিমিট বাংলাদেশ, বগুড়া অঞ্চল ও কৃষিবিদ মোঃ জাকারিয়া হাসান, হাব কোঅর্ডিনেটর, সিমিট বাংলাদেশ, ফরিদপুর অঞ্চল; আরো উপস্থিত ছিলেন ড. মুহাম্মদ জাকারিয়া হুসেন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এফ এম পি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বারি,  গাজীপুর। 

অনুষ্ঠানে যন্ত্র উদ্ভাবনের প্রধান গবেষক, যন্ত্রের বিভিন্ন কারিগরি দিক তুলে ধরেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকের অর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য বারি মুগ ডাল ভাঙানো যন্ত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। 

প্রধান অতিথি তার বক্তৃতায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, একটি অবিস্মরণীয় উদ্ভাবন। আরো বলেন, এ অঞ্চলে কৃষকরা বারি মুগ ডাল ভাঙানোর যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যবসায়িকভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে মুগডাল ভাঙানোর সুবিধা পাবে ফলে খাবার পরিমাণ বাড়বে এবং জনসাধারণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। 

সভাপতি তার বক্তৃতায় তীব্রভাবে আশা পোষণ করেন যে, সদাশয় সরকার যদি এই যন্ত্রে ভর্তুকি প্রদান করেন এবং স্বল্পমূল্যে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকের মাঝে এই যন্ত্রটি ছড়িয়ে দিয়ে সাথে সাথে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাহলে তা এ অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকের মাঝে একটি অভূতপূর্ব সারা ফেলবে।#

সর্বশেষ