১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিসিকে অস্থিরতা ! থমকে যাচ্ছে উন্নয়ন

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

খান রফিক, ব্যুরো প্রধান, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশঃ
অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বরিশালের একমাত্র শিল্পনগরী বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনে (বিসিক)। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে একের পর এক হামলার শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর নেপথ্যে রয়েছে বিসিকের চলমান ৭৪ কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রমে ভাগ বসানো। ওই ঘটনার জেরে চলমান উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দেওয়া অভিযোগ উঠেছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) বিরুদ্ধে। বিসিকের বরিশালের উপ-মহাব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ দাবি করেছেন, উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন না করতে পারায় বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার এলাকাবাসীর ব্যানারে নারী-পুরুষ দিয়ে বিসিকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও অশ্লীল সেøাগান দিয়েছে একদল বহিরাগত। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিসিক শিল্প এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মানববন্ধনের ব্যানারে উল্লেখ করা হয়েছে, বিসিক কর্তৃক সরকারি জমি অবৈধ দখলমুক্ত ও সাধারণ নাগরিকদের হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আজিম উল করীম বলেন, বিসিকের এমজে শিল্প ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক শফিউল আজম তার ওপর হামলার অভিযোগে রইচ আহমেদ মান্নাসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুল সংখ্যাক পুলিশ সদস্য বিসিকে অবস্থান করছে। জানা গেছে, মান্না সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর আস্থাভাজনদের একজন। ছাত্রলীগে মান্নার পদ না থাকলেও মহানগর ছাত্রলীগের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন,

গত ক’দিন ধরে বিসিক শিল্প নগরীর মধ্যে বহিরাগতরা ঢুকে যে বিশৃঙ্খলা ঘটিয়েছে তার সবগুলো অপ্রীতিকর ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন মান্না।

বিসিকের দায়িত্বশীল সূত্রমতে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বিসিক নিজস্ব অর্থায়নে বরিশাল শিল্প নগরীর মধ্যে সড়ক, ড্রেন ও সীমানা নির্মাণ এবং নিচু জমি ভরাট করার জন্য ৭৪ কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। ওই কাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই বিসিসির সঙ্গে বিরোধের সৃষ্টি। জানতে চাইলে বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ মঙ্গলবার বলেন, ৩৭ একর নিচু জমি ভরাট করার জন্য বালু ফেলার ড্রেজার পাইপ বিসিসি দুই দফায় নিয়ে যাওয়ায় জমি ভরাট বন্ধ হয়ে গেছে। সামনের দিকের সীমানা প্রচীর নির্মাণ কাজ শুরু করলে বিসিসি থেকে দাবি তোলা হয়, বিসিকের ৪ ফুট জমি ছেড়ে প্রাচীর নির্মাণ করতে হয়। এজন্য তারা চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। বহিরাগতরা একের পর এক হামলা চালিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান মালিকদের ওপর হামলা করেছেন। এর প্রতিবাদে রোববার ব্যবসায়ীরা মানবন্ধনের উদ্যোগ নিলে উল্টো অপরাধীরা পাল্টা মানববন্ধন করে বিসিকের বিরুদ্ধে সেøাগান দিয়েছে।

উপ-মহাব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ বলেন, নিচু জমি ভরাট করতে পারলে ৩০ প্লট করে উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেওয়া যেত। এতে কমপক্ষে ১০ হাজার লোকের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে উন্নয়ন বরাদ্দের ৭৪ কোটি টাকা ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি ও ফরচুন সুজের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মঙ্গলবার বলেন, মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সহচর রইচ আহমেদ মান্না ও তার সহযোগীরা শিল্প মালিক হিমাদ্রি সাহাকে ২০ অক্টোবর এবং মো. সফিউল আজমকে ২৪ অক্টোবর মারধর করেছে। সব উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। গত রোববার মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বিসিক পরিদর্শনে গেলে তার (মিজানুর) ভাইকে মেয়রের সামনে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। শিল্প মালিক সমিতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের ডেকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। মিজানুর রহমান বলেন, শিল্পপতিরা বিসিকে বিনিয়োগে উৎসাহ হারাচ্ছেন। পুরো বিষয়টি বরিশালের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি (মেয়রের বাবা) এবং বিসিকের চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে অবহিত করা হয়েছে।

বরিশাল বিসিকের করা অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনসংযোগ কর্মকর্তাকে মঙ্গলবার দুপুরে একাধিকবার ফোনে কল দেওয়া হলেও তারা সাড়া দেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ কাউন্সিলর বলেছেন, বিসিক শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত কোনো মেয়র বিসিকের কোনো ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেননি। বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ কী কারণে বিসিকের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলেন বিষয়টি তাদেরও বোধগম্য নয়। বিসিক শিল্পনগরী সংলগ্ন ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আমির হোসেন বিশ্বাস বলেন, বিসিকের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এটি বিসিক ও করপোরেশনের বিষয়।

প্রসঙ্গত, বরিশাল নগরীর কাউনিয়ায় ১৯৬৭ সালে ১০ একর জমিতে বিসিক শিল্প নগরী স্থাপিত হয়। বর্তমানে সেখানে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল বিস্কুট ও বরিশালের একমাত্র রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ফরচুন সুজসহ ১০২টি ছোট-বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান চলমান রয়েছে।

 

সূত্রঃ দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ

সর্বশেষ