১৬ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভোলার ৩ উপজেলায় কনিষ্ঠদের কাছে ধরাশায়ী হলেন আ.লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

অনলাইন ডেস্ক ::: ভোলার তিনটি উপজেলায় ২১ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা ধরাশায়ী হয়েছেন কনিষ্ঠ নেতাদের কাছে। প্রার্থীদের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণার কোনো কমতি ছিল না। তারপরও কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল প্রায় ৩২ শতাংশ। একজন বাদে সব প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। ফলে ভোটারদের ধারণা ছিল, ‘ভোট দিলেও যা, না দিলেও তা–ই।’

প্রাথমিক ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সদর, দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৭ লাখ ৫১ হাজার ৪৯৮। ভোট পড়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ২২৮টি, যা মোট ভোটের ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

সদর উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৯। প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৭৩টি, যা মোট ভোটের ৩০ দশমিক ২৩ শতাংশ। এ উপজেলায় তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর একজন মো. ইউসুফ কোনো প্রচার–প্রচারণা চালাননি। লড়াই হয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মোশারেফ হোসেন (আনারস) ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইউনুস মিয়ার (মোটরসাইকেল) মধ্যে। মো. মোশারেফ হোসেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনুস জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ৭১ হাজার ১৫৫ ভোট পেয়ে বড় জয় পান ইউনুস।

ভোলা নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব ও সদর উপজেলার ভোটার এস এম বাহাউদ্দিন বলেন, বেশির ভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য নির্দেশিত প্রার্থীর সমর্থন করেছেন। তাঁদের সমর্থন দিতে ভোটারদেরও নানা চাপ দেওয়া হয়। এ কারণে অনেকে ভোটকেন্দ্রে যাননি।

দৌলতখান উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫১। ভোট পড়েছে ৩৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, যা বাকি দুই উপজেলা থেকে বেশি। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়েন পাঁচজন। একজন ব্যবসায়ী প্রচার-প্রচারণা চালাননি। বাকি চারজন আওয়ামী লীগের নেতা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মনজুর আলম খান ১৪ হাজার ১৭২টি ভোট পেয়ে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উত্তর জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াছিন। তিনি ভোট পেয়েছেন ১২ হাজার ৩২১টি। ইয়াছিন জিততে না পারলেও ভোটের দৌড়ে সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মামুনুর রশিদ বাবুল চৌধুরী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মৃধাকে পিছে ফেলেছেন।

উপজেলার মদনপুরের ভোটার মো. ফারুকুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড রোদ ও টাকার অভাবে অনেকে কেন্দ্রে আসেননি। টাকা খরচ করে কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে হবে, এ দায় তাঁদের নেই।

বোরহানউদ্দিন উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১৫ হাজার ৬৭৪। ভোট পড়েছে ৬৬ হাজার ১৫৬টি, যা মোট ভোটের ৩০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন চারজন। উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান প্রার্থী হলেও প্রচার-প্রচারণা চালাননি। লড়াই হয়েছে তিন আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে। ২৯ হাজার ৭১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজমের ভগ্নিপতি জাফর উল্লাহ। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম। আবুল কালাম ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভায়রা।

ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বোরহানউদ্দিনের পক্ষীয়া ইউনিয়নের বাটামারা গ্রামের পল্লি চিকিৎসক শাহ মো. আলমগীর বলেন, উপজেলা নির্বাচন কী, তা জানেন না সাধারণ মানুষ। তাই তাঁদের ভোট দেওয়ারও তাগিদ ছিল না।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা বলেন, তিনটি উপজেলা নির্বাচনে যাঁরা মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন, তাঁদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের একটা অংশ ভোটকেন্দ্রে আসেননি, কারণ, তাঁরা কারও বিরাগভাজন হতে চাননি। এ ছাড়া অন্য কোনো কারণ দেখছেন না।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের ওপর মানুষের আস্থা নেই। বিগত দিনের নির্বাচনের ইতিহাস দেখে মানুষ হতাশ। মানুষ মনে করছে, ‘ভোট দিলেও যা, ভোট না দিলেও তা–ই।’ এ অনাস্থা থেকে মানুষ ভোটকেন্দ্রে আসছেন না। আর এ হতাশা থেকে অনেকে নতুন নেতৃত্ব বেছে নিচ্ছেন। তাই জ্যেষ্ঠ নেতারা কনিষ্ঠদের কাছে ধরাশায়ী হচ্ছেন।

সর্বশেষ