১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

মঠবাড়িয়ার সাংবাদিক কন্যা ঊর্মি ও তন্বী হত্যার আসামী ছগীর গ্রেফতার

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুরর মঠবাড়িয়ায় সাংবাদিক কন্যা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য ঊর্মি (১০) হত্যা মামলার জমিনে থাকা আসামী ছগীর আকন (৪২) আবারও তন্বী আক্তার (২৪) হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছে। তন্বী হত্যার ১০ দিনের মাথায় বিভিন্ন তথ্য যাচাই করে কুখ্যাত খুনি ছগীর আকন সহ ৩ জনকে আটক করে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ। দুই দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিসিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুল আজাদ জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। ছগীর উপজেলার উপজেলার উত্তর বড় মাছুয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মৃত. কুদ্দুস আকনের ছেলে।

গত ১ জানুয়ারী ছগীর, একই এলাকার সাইয়েদ আকনের ছেলে ওমরসানী (২৮) এবং সালমা বেগমের ছেলে সাকিব (২৫) কে আটক করে পুলিশ। ওমরসানীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়। ছগীর, সাকিব গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২ জানুয়ারি সোমবার আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই কুদ্দুস। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট শুনানী শেষে সাকিবের ১ দিন ও ছগীরের ২দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ছগীর আকন সাংবাদিক কন্যা ঊর্মি হত্যা মামলার একমাত্র চার্জসীটভুক্ত আসামী।

গত ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে তন্বী আক্তারের গলাকাটা লাশ উপজেলার উত্তর বড়মাছুয়া গ্রামের মান্নান আকনের (বুইর‌্যার বাড়ি) বাগান থেকে উদ্ধার করে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ। এঘটনায় নিহতের বাবা আঃ রাজ্জাক আকন (৭২) ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার মঠবাড়িয়া থানায় অজ্ঞাত আসামীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, পিবিআই, র‌্যাব, সিআইডি পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। ২১ ডিসেম্বর বুধবার বিকেল থেকে তন্বী আক্তার নিখোঁজ ছিলো।

ঊর্মি হত্যা মামলা ও এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই সকালে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রী সাংবাদিক কন্যা ৯ বছর ৩ মাস বয়সী ঊর্মির অর্ধ গলিত ভাসমান লাশ একই এলাকার পরিত্যাক্ত একটি বাগানের নালা (ব্যার) থেকে উদ্ধার করেন মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ। ২৩ জুলাই রাতে নিহত ঊর্মির বাবা সাংবাদিক জুলফিকার আমীন সোহেল মঠবাড়িয়া থানায় অজ্ঞাত আসামীর বিরুদ্ধে মঠবাড়িয়া থানায় মামলা করেন। সোহেল উপজেলার ওই উত্তর বড় মাছুয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত. মোঃ রুহুর আমীন আকনের ছেলে।

মামলার কয়েক দিনপর বিভিন্ন তথ্যেও ভিত্তিতে ছগীর আকনকে গ্রেপ্তার করেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তৎকালীন মঠবাড়িয়া থানার ওসি (তদন্ত) মাজহারুল আমিন (বিপিএম)। ঊর্মি ২১ জুলাই’১৭ বিকেল থেকে নিঁেখাজ ছিলো। বর্ষা মৌসুমের ওই দিন সন্ধার কালীন সময়ে ঊর্মিকে বাড়ির মধ্যে ডেকে নেয় ছগীর, প্রতক্ষ্যদর্শির এমন স্বাক্ষীর পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দফা রিমান্ডে আনলেও কোন স্বীকারোক্তি দেয়নি ঠান্ডা মাথার খুনি ছাগীর।

ওই সময় ঊর্মি হত্যার বিচারের দাবীতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সাংবাদিক সমাজ, সুধি সমাজ, স্বেচ্ছাসেবী-সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক-পৃথক মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। একযোগে মঠবাড়িয়ার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। এছাড়াও এলকাবাসি ও সুধি সমাজের আয়োজনে ২ কিলোমিটার জুড়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এমনকি সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আয়োজনে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মাজহারুল আমিন (বিপিএম) প্রায় দশ মাস অধিকতর তদন্ত শেষে গত ২২/৫/২০১৮ ইং তারিখ ঊর্মি হত্যার একমাত্র আসামী হিসেবে ছগীরকে চিহ্নিত করে আদালতে চার্জসীড দাখিল করেন। চার্জসীডে তিনি উল্লেখ করেন শিশু ঊর্মিকে ধর্ষনের পর গলায় ওড়না পেচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ পরিত্যাক্ত বাগানের নালায় ফেলে দিয়ে আসে। মঠবাড়িয়া থানায় প্রাথমিক মামলা নং-২৪, তারিখ-২৩/০৭/২০১৭, জিআর-২৫৫, চার্জসীড (অভিযোগ পত্র) নং-১৫৫, পিরোজপুর নারী ও শিশু আদালত মামলা নং-৬৪/১৯।
চার্জসীডে তিনি আরও উল্লেখ করেন, সগীর নিহত তন্বীর বাবা আঃ রাজ্জাক আকনের একটি গাভীন গরু গোয়লঘর থেকে নিয়ে হত্যা করে ফেলে রাখে, যেখানে ঊর্মির লাশ পাওয়া যায় সেই নালার উপরিস্থানে। এছাড়া খেসুড়ী ডাল গাছ খাবার অপরাধে স্থানীয় শামসের হক (শামসু) সরদারের জীবন্ত গরুর পা কেটে নেয়। এছাড়াও ঊর্মি হত্যা মামলায় গ্রেফতারের কয়েক দিন আগে তার আপন বড় ভাই কবির আকনের ৬ টি হাঁস পা দিয়ে ফিসে মেরে কাঁদা মাটির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে ছগীর।

নামপ্রকাশ না শর্তে এলাকাবাসি জানান, অত্যান্ত ঠান্ডা মাথার খুনি সগীর শিশু ঊর্মি হত্যাসহ একাধিক গরু, ছাগল, হাস-মুরগী হত্যা করেছে। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন প্রশাসনে থাকায় আমরা ব্যাপক ভয় পাচ্ছি। ঊর্মি হত্যা মামলায় জামিনে এসে বীরদর্পে ঘুড়ে বেড়ায়। তাকে স্থানীয় কিছু শাীর্ষ জনপ্রতিনিধিরা সাপোর্ট দিচ্ছে। এবার যদি জামিন পায় তাহলে এসে কি করবে, আমরাও বলতে পারি না। তারা ঠান্ড মাথার খুনি ছগীরকে ক্রোস ফায়ার দেয়ার দাবী জানিয়েছেন।

মঠবাড়িয়া থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, সাকিবকে ১ দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার এবং ছগীরের ২ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার আদলতে প্রেরণ করা হলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুল আজাদ তাদের জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। ছগীরকে আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে।

সর্বশেষ