২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মঠবাড়িয়ায় ভুয়া এনজিও খুলে ৩০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি :: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় তুষখালী ইউনিয়নে দ্বিগুন মুনাফা ও লোন দেওয়ার কথা বলে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে আনুমানিক ৩০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে সানলাইফ উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি ভুয়া এনজিও সংস্থা। ১৩ বছর ধরে এলাকার প্রায় ১ হাজার গ্রাহক তৈরি করে সানলাইফ ইনসুরেন্স এর নাম করে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা।

সরেজমিনে জানা গেছে, ওই ভুয়া এনজিওটির ম্যানেজার সিদ্দিকুর রহমান, পিতা-মৃত রশিদ হাওলাদার, মাতা-মোসাঃ আমিরুননেসা, পূর্ব গুদিঘাটা, বরগুনা সদর, বরগুনা তুষখালী এলাকায় জাফর পরিচয় দিয়ে স্ত্রী শাহানাজ আক্তার শিউলিকে নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় থেকে ভুয়া ঐ এনজিওটির কার্যক্রম পরিচালনা করেন। স্ত্রী শাহানাজ আক্তার নিজেও এনজিও কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন। ওই ম্যানেজার প্রথমে তুষখালী শরীফ ভিলায় সাইনবোর্ড টানিয়ে অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বছর পাঁচেক পরে আমুরবুনিয়া দরবার রোডে জুয়েল, পিতা-মৃত মানিক এর দোকানের একটি রুম ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড ছাড়া প্রায় ৮ বছর অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।

তুষখালী লঞ্চঘাট সংলগ্ন লিটন তালুকদারের বাড়ীতে ১৩ বছর ভাড়া থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে বরগুনা সদরে নতুন বাড়ী করে সেখানে থেকে অফিস চালানোর কথা বলে তুষখালী ওই ভাড়া বাড়ী ত্যাগ করে। ওই ভুয়া ম্যানেজারের কাছে ১ বছরের ভাড়া বাকী আছে বলে জানায় লিটন তালুকদারের স্ত্রী।

কথিত জাফর নামের ওই ম্যানেজারের আপন ভায়রার বাড়ী পাথরঘাটা থানার শতকর এলাকার সোনার বাংলা সংলগ্ন বলে জানা যায়। লিটন তালুকদারের স্ত্রী ১টি বিবাহের অনুষ্ঠানে সেখানে বেড়াতেও গিয়েছিলেন বলে তিনি জানান। ওই ভায়রার নাম সিদ্দিকুর রহমান জোমাদ্দার। সিদ্দিক জোমাদ্দারের ছেলে আরিফ বরগুনা সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের দলিল লেখক বলেও জানা যায়। ভুয়া ম্যানেজার লাপাত্তা হওয়ার পর কিছু গ্রাহক ওই সিদ্দিক জোমাদারের বাড়ীতে গিয়েছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু সিদ্দিক জোমাদ্দার কোন তথ্য না দেওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরে এসেছেন তারা।

প্রতারণার শিকার রোজিনা পারভীন (পাখী) সহ ৪/৫ জন মাঠকর্মী ও গ্রাহক কথিত ওই ম্যানেজারের বরগুনা বাড়ীতে যান। বাড়ীতে কাউকে না পেয়ে তারা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং ওই ম্যানেজারের সম্পর্কে চাচা কিবরিয়া সাহেবের কাছে বিষয়টি বললে তিনি এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেন। ম্যানেজারের বাসার সামনে গ্রাহকদের নিকট থেকে নেওয়া পাস বই ও রিসিভসহ বিভিন্ন ডকুমেন্টস ছেড়া পরিত্যাক্ত অবস্থায় দেখতে পান তারা। এগুলো কিছু সংগ্রহ করে তারা ঐ চেয়ারম্যানকে দেখালে তিনি এগুলো প্রশাসনকে দেখাতে বলেন। চেয়ারম্যান কিবরিয়ার কাছ থেকে তথ্য পান যে, কথিত ম্যানেজার জাফরের বস ইলিয়াস আত্মগোপন করায় হয়তো জাফরও আত্মগোপন করেছে।

এ ঘটনায় ২৪ আগষ্ট সোমবার সকাল ১১ টায় তুষখালী ছোট মাছুয়া এলাকায় স্থানীয় ছগীর মেম্বর (সাবেক) ও মামুন শরীফের নেতৃত্বে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। রোজিনা পারভীন, খাদিজা সহ দেড় হাজার গ্রাহক ও স্থানীয়রা মানববন্ধনে অংশ নেয় বলে জানায় ছগীর মেম্বর। ওই ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ, ইউপি সদস্য সহ তুষখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মানববন্ধনের বিষয় কিছুই জানেন না। তাদের প্রশ্ন তুষখালী সদরে মানববন্ধন না হয়ে একটি গ্রামে মানববন্ধন কেন। ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশরা মানববন্ধনের বিষয় জানবে না এটা অনাকাঙ্খিত। ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদার আরও জানান, মানববন্ধন হলে থানা সহ প্রেস ক্লাব ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের অবগত করানো দরকার। কিন্তু আমরা তো জানিই না থানা বা প্রেস ক্লাবসমূহ মানববন্ধন সংক্রান্ত তথ্য বা চিঠি পেয়েছে কিনা আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। এটি মানববন্ধনের নামে বাণিজ্য হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা উচিৎ।

মঠবাড়িয়া থানার ওসি মাসুদুজ্জামান জানান, মানববন্ধনের পূর্বে আমাদের এ বিষয়ে কেউ কোন অবগত করেনি। এ পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন জিডি অভিযোগ বা মামলা হয়নি।

সর্বশেষ