১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মহিপুরে ৩০ বছর আগের বন্দোবস্ত কার্ড বাতিলে মরিয়া কূচক্রী মহল

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালীর মহিপুর এক অসহায় ভূমিহীন পরিবারের ৩০ বছর পূর্বের ভূমিহীন বন্দোবস্ত প্রাপ্ত কার্ড বাতিলে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি কূচক্রী মহল। বন্দোবস্ত গ্রহীতার নামে বিএস জরিপসহ হাল নাগাত খাজনা দাখিলা থাকলেও কার্ডটি বাতিলের সুপারিশ করেছে উপজেলা ভূমি প্রশাসন।

অভিযোগে জানা যায়, উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বন্দোবস্ত কেসটি বাতিলের বিষয়ে কোনো আলোচনা সিদ্ধান্ত ছাড়াই অজ্ঞাত কারণে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে বন্দোবস্ত কেসটি বাতিলের সুপারিশ করে পাঠানো হয়েছে। আর এতে সহযোগিতা করেছেন স্বয়ং ভূমি অফিসের অতি উৎসাহী এক সার্ভেয়ার। অসহায় ওই পরিবারটি সম্পত্তি রক্ষায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এবং বাতিলের সুপারিশের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের বরাবরে আবেদন করেছে।

জানা গেছে, উপজেলার শিববাড়িয়া মৌজার বিপিনপুর গ্রামের অসহায় ভূমিহীন মোঃ ছালেক হাওলাদার (৮৭) ও তার স্ত্রী মোসাঃ জয়নব বেগমের (৭০) নামে ৪৮৭ কে/১৯৮৯-৯০ইং সালে বন্দোবস্ত কেসমূলে দেড় একর জমি বন্দোবস্ত দেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক। বন্দোবস্ত প্রাপ্তমূলে আলাদা দাগ খতিয়ান সৃজন করে ভূমি অফিস। পরে ওই জমিতে বাড়িঘর নির্মাণ করে ভোগদখল সহ সরকারী নিয়মানুসারে হালনাগাত খাজনা (দাখিলা) দিয়ে আসছে। দিয়ারা জরিপে দুটি আলাদা খতিয়ানে অর্ন্তভূক্ত করে ছালেক হাওলাদার ও তার স্ত্রী জয়নব বেগমের নামে বিএস জরিপও হয়েছে। যার বিএস খতিয়ান নং ১২২ ও ৭৯৮। মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও থানা ঘোষণা হওয়ার পর বন্দোবস্তকৃত ওই জমির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কু-দৃষ্টি পরে তারই আপন ছোট ভাই মোঃ নোয়াব হাওলাদারের। প্রচুর ধন সম্পত্তির মালিক হওয়া সত্ত্বেও বড় ভাইকে অর্ধেক জমি দলিল করে দিতে চাপ সৃষ্টি করে। এতে রাজি না হওয়ায় নানাভাবে হয়রানীসহ খুন জখমের হুমকি প্রদান করতে থাকে। এরপরেও জমি দিতে রাজি না হওয়ায় বন্দোবস্ত কেসটি বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে। এ নিয়ে একাধিক বার উপজেলা ভূমি প্রশাসন তদন্ত করলেও বন্দোবস্ত কেসটি বাতিলের কোনো কারণ না থাকায় বাতিল করা হয়নি। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে নানাভাবে শারিরীক ও মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। ছালেক হাওলাদার ছোট ভাইয়ের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কলাপাড়া ও মহিপুর থানায় এর প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। পারিবারিক বন্ধন টিকিয়ে রাখতে ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। প্রশাসন ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের চাপের মুখে কিছুদিন বিরত থাকলেও আবারো বন্দোবস্ত কেসটি বাতিলে ২০১৬ সালে জেলা প্রশাসন বরাবরে আবেদন করে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা ভূমি প্রশাসনের কাছে তদন্তের জন্য প্রেরণ করে। উপজেলা ভূমি প্রশাসনের সার্ভেয়ার কয়েক দফায় তদন্ত করে। সর্বশেষ সার্ভেয়ার আনসার উদ্দিনের সাথে যোগসাজসে বন্দোবস্ত কেসটি ২০১৯ সালের প্রথম দিকে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তোলে। সেখানে এসিল্যান্ড সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। কিন্ত আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বন্ধোবস্তো বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই রহস্যজনকভাবে ২০২০ সালের ফ্রেরুয়ারিতে বন্দোবস্ত বাতিলে জেলা প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করা হয়।

এ বিষয়ে ছালেক হাওলাদার জানান, ‘একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন তিনি। উপার্জন করার মতো তার পরিবারে কেউ নেই। বৃদ্ধ বয়সে এসে ছোট ভাইয়ের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। বাধ্য হয়ে তিনি উপজেলা প্রশাসন কলাপাড়া ও মহিপুর থানাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের দ্বারস্ত হয়েছেন কিন্তু এর সুরাহা পায়নি তিনি।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই অসহায় পরিবারটি।

প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন, বন্দোবস্ত কেসটি আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হলে তা বাতিলের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এসিল্যান্ড নিজেই তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমন সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও কিভাবে বন্ধোবস্তো কেসটি বাতিলের সুপারিশের তালিকায় অন্তর্র্ভূক্ত করে জেলা প্রশানের কাছে পাঠানো হয়েছে তা তার বোধগম্য নয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জগবন্ধু মন্ডল’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ছালেক হাওলাদারের নামে বন্দোবস্তকৃত জমি বাতিলের সুপারিশের বিষয়ে আমি অবগত নই।

সর্বশেষ