পুরো বর্ষাকালে কাঁচা সড়কটি কাদায় একাকার হয়ে থাকে। বিকল্প কোনো পথ না থাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটার কর্দমাক্ত পথ হেঁটে চলাচল করতে হয় গ্রামবাসীকে। এ নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের কাছে বছরের পর বছর ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত এলাকার তরুণ-যুবকেরা উদ্যোগ নিয়েছেন সড়কটি মেরামতের। আজ শুক্রবার সড়কের মেরামতকাজ উদ্বোধন করা হয়।
সড়কটি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের পিঁপড়াখালী গ্রামের। এলাকার কয়েকজন তরুণ জানান, প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘পিপড়াখালী পরিবার’ নামে একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খোলা হয়। সেখানে সড়কটির দুরবস্থা তুলে ধরে আলোচনা হয় এবং দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়, আর কোনো জনপ্রতিনিধির কাছে ধরনা নয়, নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক মেরামত করা হবে। এরপর ‘পিপড়াখালী পরিবার’ নামেই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করা হয়। সংগঠনের সদস্যরা স্বেচ্ছাশ্রমে ও নিজেদের অর্থে কয়েকজন পেশাদার শ্রমিকের সাহায্যে নিয়ে আজ উপজেলার চিংগড়িয়া বাজার থেকে আবদুর রহিম হাওলাদারের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা সড়কের মেরামতকাজ শুরু করা হয়েছে। গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘবে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় মাটি ও বালু ফেলে যাতায়াতের উপযোগী করে তোলা হবে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পিঁপড়াখালী গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির বেহাল অবস্থা। এ পথ দিয়ে প্রতিদিন কয়েক শ মানুষ যাতায়াত করে। সড়ক পাকা না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে বাধ্য হয়ে কাদাপানি মাড়িয়েই মানসুরাবাদ ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ও আন্দুয়া পিঁপড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ আশপাশের গ্রামবাসী চলাফেরা করে।
পিঁপড়াখালী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, হাতে কোদাল নিয়ে সড়ক মেরামতের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শামিম, তৌহিদ, সুলতান মাহমুদ, মো. তারেক, জুয়েল হাওলাদার, আলমগীর হোসেন, রাসেল, শাকিল, মাহতাব হোসেন, রনিসহ আরও অনেকে। স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে আসা সুলতান মাহমুদ, শামিম ও তৌহিদ বলেন, বৃষ্টি এলেই সড়কটি কাদামাটিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। যানবাহন তো দূরের কথা, এই পথে হেঁটেও চলাচলের উপায় থাকে না। এত বড় সড়ক যদিও স্থানীয় লোকজনের অর্থে পাকা করা সম্ভব নয়, তবু বালু, মাটি ফেলে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে।
‘পিঁপড়াখালী পরিবার’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য মো. তারেক হোসেন জানান, তরুণদের এ কাজে উৎসাহ দিতে প্রবাসী কয়েকজন ভাইসহ এলাকার অনেকেই এগিয়ে আসছেন। এর আগে কিছু অর্থ সংগ্রহ করে বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবে এলাকার কর্মহীন মানুষকে খাদ্যসামগ্রী, স্যানিটাইজার ও মাস্ক দেওয়া হয়েছে।
মির্জাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম সিকদার বলেন, পিঁপড়াখালীর এ সড়কটি পাকা করার জন্য বৃহত্তর পটুয়াখালীর গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প (বরগুনা-পটুয়াখালী)-২ এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী আজিম-উর-রশিদ বলেন, এলাকার তরুণদের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সড়কটি একটি প্রকল্পের আওতায় এনে খুব শিগগির পাকা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।