১লা জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
চরফ্যাশনে ঘুর্ণিঝড় রিমেল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে আকলিমা মতিন ও তার মানবিক বন্ধুরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করাও ইবাদত ৪০ কেজি গাঁ*জাসহ ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার আবাসিক হোটেলে অভিযান, ১৬ তরুণ-তরুণী আটক বাউফলে জমি বিরোধের জেরে মা ও ছেলেকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ আপনার ঘুষ খাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি: প্রকৌশলীকে ক্ষুব্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা বাউফলে সাড়ে ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে উপজেলা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাখ্যা চেয়ে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীকে ইসির চিঠি বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি গঠন : সভাপতি ভানু লাল-সম্পাদক গোপাল সাহা বরিশালে দেয়াল ধসে নি*হতের ঘটনায় দম্পত্তির বিরুদ্ধে মামলা

মৃত্যুর মুখোমুখি ১৯ বার যেভাবে বেঁচে যান শেখ হাসিনা !

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সোহেল সানি :

টানা একযুগের বেশি সময় ধরে যাঁর হাত ধরে হাঁটছে বাংলাদেশ, সেই বিদগ্ধ ব্যক্তিটিকেই ঘাতকরা হত্যার চেষ্টা করেছে ১৯ বার। নিক্ষিপ্ত হয়েছে বিধ্বংসী গ্রেনেড। বিস্ফোরণ ঘটেছে বোমার। আর ছোঁড়া হয়েছে মুহূর্মুহু গুলি। সেই প্রাণে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিটি আর কেউ নন, জাতির জনক কন্যা শেখ হাসিনা। ‘৯৬-‘০১ প্রথম ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনার বর্তমান মেয়াদ পূর্ণ হলে তার প্রধানমন্ত্রীত্বের ২০ বছর হবে। শেখ হাসিনা
অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়াকে আল্লাহর অসীম কৃপা মনে করেন।
‘৮৮-তে চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে ২০০৪-এ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর গ্রেনেড হামলাকে বলা হয় রাষ্ট্রকল্পিত গণহত্যা। ১মটি এরশাদের শাসনামলে ২য়টি খালেদা-নিজামীর শাসনকালে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সামরিক বেসামরিক বহু কর্মকর্তা অভিযুক্ত।
১৯টি হামলার মধ্যে ১৭টি সংঘটিত হয় শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিরোধী দলেয় নেতা।
‘৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পশ্চিম জার্মানিতে থাকার সুবাদে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত ১৯টি হামলাই হয় ‘৮৭ সালের পরে।
‘৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে বুলেট-বোমা হামলাই প্রথম হামলা। সেই হামলায় ভাগ্যক্রমে তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও ৭ নেতাকর্মী প্রাণ হারায়। আহতের সংখ্যা ছিল তিন শতাধিক। রাষ্ট্রীয় মদদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে হত্যার সেই প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। জেনারেল এরশাদের শাসনামলে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আরও একটি হামলা হয়। এই হামলাটি হয় ‘৮৯ সালের ১১ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুর বত্রিশ নম্বর সড়কের বাসভবনে এ হামলাটি হয় সরকারের মদদে। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের নীলনকশা অনুযায়ী। খুনী ফারুক-রশীদের ফ্রিডম পার্টির চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা শোকাবহ আগস্টের ১১ তারিখ দিবাগত রাত ১২টার সেই হামলা চালায়। মুহূর্মুহু গুলি ছুঁড়ে তারা। নিক্ষিপ্ত বিধ্বংসী একটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত না হওয়ায় শেখ হাসিনা রক্ষা পান।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুকে প্রায় সপরিবারে ওই বাসভবনেই হত্যা করে ফারুক-রশীদ চক্র। শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে যান শেখ রেহানাও। আত্মস্বীকৃত খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্মূল করতে ফ্রিডম পার্টি গঠনের সুযোগ দেয়া হয়। ফাঁসিতে ঝুলছে যে কর্নেল ফারুক সেই তাকেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন এরশাদ। এরশাদের ‘৮৮ প্রহসনের নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টির নামে সংসদ সদস্য হয় বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল রশীদ ও মেজর বজলুল হুদা। মেজর হুদা ফাঁসিতে ঝুললেও বিদেশে পলাতক রয়েছে কর্নেল রশীদ। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। অথচ, ওদিনটাকে ফ্রিডম পার্টি ‘জাতীয় মুক্তি দিবস’ হিসাবে পালনের ঔদ্ধত্য ও ধৃষ্টতা দেখািয়েছিল সরকারি মদদে।
‘৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারীর সংসদ নির্বাচনে অকল্পনীয়ভাবে আওয়ামী লীগের পরাজয় ঘটে। উত্থান ঘটে বিএনপির। বেগম খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্বকালে কয়েকটি আসনে উপনির্বাচন হয়।
‘৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সেই নির্বাচনে বেগম জিয়ার ছেড়ে দেয়া আসন ছিল ধানমন্ডি- মোঃপুর আসন। সেই নির্বাচনে বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ভোটদান শেষে গাড়িতে করে গ্রীনরোড অতিক্রম করছিলেন। ঠিক সেই মূহুর্তে তাঁকে হত্যার জন্য গাড়িতে করা হয় গুলিবর্ষণ। নিক্ষেপ করা হয় বোমা অলৌকিকভাবে প্রাণে রক্ষা হয় শেখ হাসিনার। এটি ছিল তৃতীয় হামলা।
চতুর্থ হামলাটি হয়
‘৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে। শেখ হাসিনাকে বহনকারী বগিটিতে গুলিবর্ষণ করা হলেও অল্পের জন্যে বেঁচে যান।
‘৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর শেখ রাসেল স্কোয়ারে হয় ৫ম হামলাটি। সমাবেশে ভাষণদানকালে অতর্কিত গুলি ছুঁড়ে সন্ত্রাসীরা। গুলি লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়।
‘৯৬ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ছিল আওয়ামী লীগের জনসভা। হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হয় বোমা হামলা। এ যাত্রাও বেঁচে যান বিরোধী দলের নেতা।
‘৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনাকে বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়।
ইন্টার এশিয়া টিভির মালিক শোয়েব চৌধুরী ইমেইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা সজিব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৩১ জনকে হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে।
২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় জনসভাস্থলে ৮৪ কেজি এবং হ্যালিপ্যাডের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের দুটি বোমা পুঁতে রাখা হয় হয়েছিল শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে।
২০০১ সালের ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতুর উদ্বোধন করার কথা ছিল শেখ হাসিনার।
সেই স্থানেও বোমা পুঁতে রাখা হয় হত্যার লক্ষ্যে। বোমা পুঁতে রাখার খবরে কর্মসূচি বাতিল করা হয়। ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনের সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে পৌঁছার আগেই মাদ্রাসাস্থ একটি ভবনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে এবং দুজন হুজি নিহত হয়।
২০০২ সালের ৪ মার্চ শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নওগাঁয় বিএমসি মহিলা কলেজের সামনে গাড়ী বহরে হামলা চালানো হয়। সন্ত্রাসীরা গুলি ছুঁড়লেও লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সবচেয়ে নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা। মুহূর্মুহু গ্রেনেড গুলি বর্ষণ যেনো রোজ কেয়ামত হানা দিয়েছিল। গ্রেনেড বিস্ফোরণের মুখে বুলেট প্রুফ গাড়িতে উঠিয়ে দিলেও ঘাতকরা বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়ে। গ্রেনেড হামলায় ছাত্রলীগের অকুতোভয় যোদ্ধা মোস্তাক আহমেদ সেন্টুসহ ঝরে পড়ে ২৪ নেতাকর্মীর প্রাণ। ক্ষত-বিক্ষত হন শীর্ষ নেতারা। আর হামলার শিকার হয় চারশত নেতাকর্মী। ২৪ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন গ্রেনেড হামলায় আহত মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বেগম আইভি রহমান (প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী)। হামলায় আহত অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন।
২০০৭-২০০৮ সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দিন সরকারের সময়ে কারাবন্দী অবস্থায় বিষ মেশানো খাবার খাইয়েও শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে।
এর পর
২০০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার কলারোয়ায়। এটি ছিল গাড়িবহরে হামলা। এটাও শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে।
এর আগে ২০০২ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে গাড়িবহরে গুলিবর্ষণের ঘটনা ছিল শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টায় বারোতম হামলা।
২০১১ সালে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানি সন্ত্রাসী
চক্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তারা একটি সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে। কিন্তু ঘাতকচক্রটি কলকাতা বিমানবন্দর অভিমুখে যাত্রার প্রাক্কালে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে চারজন নিহত হয়। এ হত্যাচেষ্টার খবর প্রকাশ করে উইকিলিকস। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারে দন্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামী মেজর ডালিম হংকং বসবাসকারী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ইসরাক আহমেদের অর্থায়নে এই হত্যা পরিকল্পনা করে।
২০১৪ সালে নারী জঙ্গিদল দিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয় “মানব বোমা” বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। পশ্চিম বাংলার বর্ধমানে ১৫০ জন নারী এবং ১৫০ জন পুরুষ যুবক প্রশিক্ষণ নেয়। কিন্তু প্রশিক্ষণ অবস্থায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়।
সর্বশেষ ১৯তম হামলাটি হয় কাওরানবাজারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। জমাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এই হত্যাচেষ্টা চালায়। কিন্তু এ যাত্রাও শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে যান।

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

সর্বশেষ